‘ছোটবেলা থেকে ইচ্ছে ছিল বড় হয়ে পেশাগত জীবনে কর্পোরেট জব করবো। অথবা কোনো মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে কাজ করবো। সে লক্ষ্য নিয়েই আমার শিক্ষা জীবন চলছিলো। এরমধ্যে ২০১০ সালে হুট করেই লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতায় রেজিস্ট্রেশন করে ফেলি। এটা অনেকটা খামখেয়ালিতেই করেছিলাম। কিন্তু পরে যখন বাছাই পর্বে টিকে যাই তখন আস্তে আস্তে নিজের ভিতর আত্মবিশ্বাস আসতে থাকে যে আমিও পারব।মনোবল অটুট রেখে লড়েছি, ব্যাস! সে বছর লাক্সের প্রতিযোগীদের মধ্যে সেরা দশের চার নম্বরে ছিলাম। তারপর থেকেই চলছে মিডিয়ার যাত্রা। আমার শৈশব-কৈশোরের স্বপ্নরাও হারিয়ে গেছে অগুনতি মানুষের ভালোবাসার ভিড়ে।’ নিজের শোবিজে পথচলার গল্পটা বলতে গিয়ে এভাবেই শুরু করেন এ প্রজন্মের জনপ্রিয় মডেল অভিনেত্রী মুমতাহিনা চৌধুরী টয়া।টয়া নোয়াখালীর মেয়ে। তবে জন্মসূত্রে বেড়ে ওঠা প্রকৃতির অপূর্ব সৌন্দর্যে ঘেরা রাঙ্গামাটিতে। দু’বোনের মধ্যে তিনি ছোট। বাবা ব্যবসায়ী আর মা শিক্ষিকা। রুমানা রশিদ ঈশিতার পরিচালনায় ‘অদেখা মেঘের কাব্য’ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যেমে অভিনয়ের জীবন শুরু টয়ার। এরপর বেশ কয়েকটি ধারাবাহিক নাটক ও টেলিফিল্মে অভিনয় করছেন তিনি। তার অভিনীত প্রথম টেলিফিল্ম ছিলো ‘বাহিনী’।তবে টয়া আলোচনায় আসেন গ্রামীণফোনের ‘১০ টাকা ইমার্জেন্সি ব্যালেন্স’ নামের একটি বিজ্ঞাপনের হাত ধরে। এ বিজ্ঞাপনটিতে টয়ার সাথে ছিলেন চিত্রনায়ক অনন্ত জলিল।টয়া বলেন, ‘মিডিয়াতে এসেই আমার টার্গেট ছিল এমন কিছু কাজ করবো যার জন্য সবার প্রশংসা পাওয়া যায়। গ্রামীণফোনের ওই বিজ্ঞাপনটি ছিল আমার ক্যারিয়ারের জন্য ঠিক সেই কাজ। যেটিকে আমি আমার জন্য প্লাস পয়েন্ট মনে করি’।এখন মডেলিং এবং অভিনয় দুটোই সমানভাবে চলছে। তবে অভিনয় করতেই বেশি পছন্দ করেন টয়া। অভিনয় সম্পর্কে ভীষণ সচেতনও তিনি। বললেন, পর্দায় নিজেকে দেখে ভুলগুলো খোঁজার চেষ্টা করেন। অভিনয়ে পুরোপুরি ব্যস্ত হলেও চলচ্চিত্রের জন্য তিনি এখনো অপ্রস্তুত। এর পেছনে রয়েছে যুক্তি। টয়া বলেন, ‘আসলে অভিনয়টা আমার এখনো ভালো করে শেখা হয়নি। আমি যেহেতু কোনো স্কুল-থিয়েটারে শিখার সুযোগ পাইনি। তবে চেষ্টা করছি যারা অভিনয়টা খুব ভালো জানেন ও বুঝেন তাদের সাথে কাজ করে, মিশে নিজের অভিজ্ঞতাটাকে বাড়িয়ে নিতে। যখন মনে হবে যে বড় পর্দার মতো বিস্তৃত অঙ্গনে আমার যাত্রা করার সামর্থ হয়েছে তখন অবশ্যই কাজ করবো। এখন তাই কেউ ছবির প্রস্তাব নিয়ে আসলে বিনয়ের সাথে ফিরিয়ে দেই।’তবে চলচ্চিত্র নিয়ে রয়েছে টয়ার পরিকল্পনা। তিনি বলেন, ‘বাণিজ্যিক ছবি অপেক্ষা একটু সাহিত্যধর্মী মৌলিক গল্পের ছবিতে কাজের প্রতি ইচ্ছেটা বেশি। তবে সেটা সময় বুঝে করতে চাই।’টয়া বর্তমানে কাজ করছেন নির্মাতা রাজিবের পরিচালনায় ধারাবাহিক সিরিয়াল ‘বারো ঘর এক কোটা’তে। এখানে তাকে ঘিরেই নাটকের কাহিনি আবর্তিত হবে। আগামী মাসেই এটিএন বাংলায় প্রচারিত হবে ধারাবাহিকটি। এছাড়া মাবরুর রশিদ বান্নার ‘নাইন এন্ড অ্যা হাফ’ নাটকে অভিনয় করছেন টয়া। সেখানে তাকে দেখা গেছে দুষ্টু-মিষ্টি এক বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রীর চরিত্রে। নাটকটিতে কাজ করে টয়া বেশ প্রশংসা পেয়েছেন। বললেন, ‘এই চরিত্রের জন্য নিজেকে ভেঙ্গে নতুন করে তৈরি করতে হয়েছে। কাজটি করার সময়ই মনে হচ্ছিলো ভিন্ন এবং নতুন কিছু করছি। দর্শকদের ভালো লাগবে। হলোও তাই। এই নাটকের পরিচালকসহ সকল কলাকুশলীদের ধন্যবাদ আমাকে তাদের সুন্দর সাফল্যে সঙ্গী করায়।’ টয়ার এই নাটকটি প্রতি সপ্তাহের রবি থেকে বৃহষ্পতিবার রাত ১০টা ৩০ মিনিটে প্রচারিত হয় দেশ টিভিতে। এছাড়া বেশ কিছু ফ্যাশন হাউজের মডেলিং আর ফটোশুট নিয়েও ব্যস্ত সময় পার করছেন টয়া।পাশাপাশি টয়া অভিনীত উল্লেখযোগ্য অন্যান্য নাটকের মধ্য রয়েছে- অনেষ্টি ইজ দ্য বেস্ট পলিসি, দ্য ফাইনাল চ্যাপ্টার, ভালবাসা ওয়ান জিরো ওয়ান, আত্মসাৎ, টো টো কম্পানির ম্যানাজার, আমাদের শার্লক হোমস, পৌষ ফাগুনের পালা`, ছায়াবৃতা, ইউনিভার্সিটি প্রভৃতি।এক টুকরো টয়ানিজের দোষ-ত্রুটি নিয়ে এই লাক্স সুন্দরী জানান, কারো সঙ্গে কোনো কারণে রাগ করলে তাকে কিছু বলতে পারেন না। এছাড়া ঘুমান প্রচুর। এই দুটো দিকই নিজের সবচেয়ে বড় দোষ। ভালো দিক বলতে নিজেকে খুব লক্ষ্মী এবং পারিবারিক মেয়ে মনে করেন তিনি। বিয়ে শাদীর প্রশ্ন আসতেই মিষ্টি হেসে বললেন, ‘সে ভাবনা আমার নয়; পরিবারের। আমি আপাতত অভিনয়টাকেই ভালোবাসতে চাই।’এলএ
Advertisement