রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের শুরুটা দুর্দান্ত করেছে বাংলাদেশ দল। দিনের প্রথম ঘণ্টায়ই ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৩ উইকেট তুলে নিয়েছে টাইগাররা। ডানহাতি পেসার আবু জায়েদ রাহী ও বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামের হাত ধরে এসেছে এ ৩ উইকেট। প্রথম সেশন শেষে ক্যারিবীয়দের সংগ্রহ ৬ উইকেটে ৯৮ রান। প্রথম ইনিংসে পাওয়া ১১৩ রানের লিডের সুবাদে তারা এখন এগিয়ে ২১১ রানে।
Advertisement
মাত্র ৫৭ রানে ৩ উইকেট নিয়ে প্রথম সেশনটা বাংলাদেশের দখলে গেলেও, রয়েছে চিন্তার কারণও। যা মূলত এসেছে বোলারদের সাফল্যের কারণেই! আজ ২১ ওভার পুরনো বল দিয়ে বোলিং শুরু করেছেন রাহী। অপরপ্রান্তে আক্রমণে ছিলেন তাইজুল। দিনের শুরু থেকেই রাহী একপ্রান্ত থেকে করিয়েছেন রিভার্স সুইং আর তাইজুলের বলে হয়েছে শার্প টার্ন।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে চলতি টেস্টের প্রথম তিনদিন সে অর্থে তেমন টার্নের দেখা মেলেনি। রাহকিম কর্নওয়াল, মেহেদি হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলামরা উইকেট পেলেও পিচ থেকে তেমন সুবিধা পাননি। ঢাকার উইকেটের এমন আচরণে অবাক হয়েছে বাংলাদেশ দল। তামিম ইকবাল তা দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে অকপটে স্বীকার করে গেছেন।
কিন্তু আজ চতুর্থ দিনের শুরু থেকেই টার্ন পাচ্ছেন তাইজুল ইসলাম, নাঈম হাসানরা। যা নিশ্চিতভাবেই কঠিন করে তুলবে বাংলাদেশের চতুর্থ ইনিংসের কাজ। কেননা ম্যাচ জিততে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দেয়া লক্ষ্য তাড়া করতে হবে বাংলাদেশের। অন্যথায় খেলে দিতে হবে বাকি থাকা সব ওভার। দুইটি কাজের কোনোটিই খুব একটা সহজ হবে না বাংলাদেশের জন্য।
Advertisement
কেননা ক্যারিবীয় দলে আছেন দুই স্পিনার রাহকিম কর্নওয়াল ও জোমেল ওয়ারিকান। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ভুলের ফাঁদে ফেলে উইকেট তুলেছেন কর্নওয়াল, নিয়েছেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় পাঁচ উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে সেই আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে উইকেটের সাহায্য যোগ হলে কর্নওয়াল-ওয়ারিকান জুটি বেশ ভোগাতে স্বাগতিকদের। এছাড়া দুই পেসার শ্যানন গ্যাব্রিয়েল, আলজারি জোসেফরাও গতির সঙ্গে সুইংয়ের মিশেলে টাইগার ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষা নিতে প্রস্তুত।
এর সঙ্গে যোগ হবে শেরে বাংলা স্টেডিয়াম ও টেস্টে বাংলাদেশ দলের অতীত পরিসংখ্যান। দেশের হোম অব ক্রিকেটে সবমিলিয়ে চতুর্থ ইনিংসে দুইশর বেশি রান তাড়া করতে গিয়ে জয় মাত্র ২টি। সর্বোচ্চ ২০৯ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড ইংল্যান্ডের। যা এরই মধ্যে ছাড়িয়ে গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অর্থাৎ জিততে হলে এই রেকর্ড ভেঙেই জিততে হবে বাংলাদেশকে।
এছাড়া টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের সর্বোচ্চ ২১৭ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড রয়েছে। আর শেরে বাংলায় সর্বোচ্চ ১০১ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিতেছে বাংলাদেশ। ফলে চলতি ম্যাচে জয়ের জন্য নিজেদের অতীত পরিসংখ্যানকে বদলে দেয়া পারফরম্যান্স দেখাতে হবে বাংলাদেশ দলকে।
আগেরদিন ৩ উইকেট তুলে নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসের ভালো শুরু করেছিল বাংলাদেশ। স্বাগতিকরা ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে চতুর্থ দিন সকালেও। আজ (রোববার) দিনের পঞ্চম ওভারেই প্রথম উইকেটের দেখা পেয়েছে বাংলাদেশ। নাইটওয়াচম্যান হিসেবে নামা জোমেল ওয়ারিকানকে সাজঘরে পাঠিয়ে দিনের শুরুটা ইতিবাচকভাবেই করে বাংলাদেশ।
Advertisement
ডানহাতি পেসার আবু জায়েদ রাহীর হাত ধরে মেলে প্রথম সাফল্য। ক্যারিবীয়দের দ্বিতীয় ইনিংসে নতুন বলটা দলের একমাত্র পেসার রাহীর হাতে দেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক। মূলত তৃতীয় দিনে হওয়া ২১ ওভারের মধ্যে এক ওভারও পাননি রাহী।
তবে আজ রৌদ্রজ্জ্বল দিনে রাহীকে দিয়েই বোলিংয়ের শুরুটা করেছে বাংলাদেশ। সফলতা মিলতেও খুব একটা দেরি হয়নি। দিনের পঞ্চম ও রাহীর করা তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েছেন ওয়ারিকান। খালি চোখেই দেখা যাচ্ছিল পরিষ্কার আউট এটি। যে কারণে রিভিউ নেয়নি ক্যারিবীয়রা।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের দলীয় সংগ্রহ তখন ৪ উইকেটে ৫০ রান। সে ওভারেই তারা হারাতে পারত পঞ্চম উইকেটও। চতুর্থ উইকেট পতনের পর উইকেটে আসেন আগের ম্যাচের নায়ক কাইল মায়ারস। প্রথম বলেই চার মেরে শুরু করেন তিনি।
সেই ওভারের শেষ বলটি বেরিয়ে যাচ্ছিল অফস্ট্যাম্প দিয়ে। ব্যাট এগিয়ে দিয়েও সরিয়ে নেন মায়ারস, বল জমা পড়ে উইকেটরক্ষক লিটন দাসের গ্লাভসে। বাংলাদেশ দল আবেদন করলেও আউট দেননি আম্পায়ার রিচার্ড ইলিংওর্থ। রিভিউ নেয়নি বাংলাদেশ।
টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, সেই বলটি লিটনের গ্লাভসে যাওয়ার পথে মায়ারসের ব্যাটের বাইরের কানা ছুঁয়ে গেছে। অর্থাৎ রিভিউ নিলে সে উইকেটটি পেতে পারত বাংলাদেশ, সাজঘরের পথ ধরতে হতো মায়ারসকে। বাংলাদেশের সিদ্ধান্থীনতায় তা আর হয়নি।
তবে বেশিক্ষণ উইকেটেও থাকা হয়নি মায়ারসের। রাহীর বলেই আউট হয়েছেন তিনি। দিনের ১১তম ওভারের প্রথম বলটি নিখুঁত রিভার্স সুইংয়ে ঢুকে যায় ভেতরে। ব্যাট নামিয়ে এনেও খেলতে পারেননি মায়ারস, আঘাত হানে প্যাডে। আগের ওভার থেকেই মায়ারসকে এই ডেলিভারির জন্য সেটআপ করছিলেন রাহী, সফল হন নতুন ওভারের প্রথম বলে।
বাংলাদেশের জোরালো আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার ইলিংওর্থ, উল্লাসে মাতে টাইগাররা। মায়ারস ভেবেছিলেন বলটি লেগস্ট্যাম্প দিয়ে বেরিয়ে যাবে। তাই নেন রিভিউ। কিন্তু রিপ্লেতে দেখা যায়, রাহীর সেই বল লেগস্ট্যাম্প চুমু দিয়েই যেত। যে কারণে রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি মায়ারস। তার ইনিংস থেমেছে ১৬ বলে ৬ রান করে।
দিনের ১৪তম ওভারে তাইজুলের ঝুলিয়ে বলটি শার্প টার্ন করে জার্মেইন ব্ল্যাকউডের ডিফেন্স ফাঁকি দিয়ে চলে যায় লিটনের গ্লাভসে। ফরোয়ার্ড ডিফেন্স করতে গিয়ে পপিং ক্রিজ থেকে সামান্যই বেরিয়েছিলেন ব্ল্যাকউড। এই সুযোগটিই নেন লিটন। তড়িৎ গতিতে ভেঙে দেন স্ট্যাম্প, আম্পায়ার আউট দেয়ার আগেই মাতেন উল্লাসে।
লেগ আম্পায়ার রিচার্ড ইলিংওর্থ সিদ্ধান্ত পাঠান থার্ড আম্পায়ার গাজী সোহেলের কাছে। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, লিটন স্ট্যাম্প ভাঙার সময় ব্ল্যাকউডের পা ছিল পপিং ক্রিজের দাগের ঠিক বাইরে। যে কারণে সাজঘরে ফিরতে হয়েছে ১ ছয়ের মারে ৯ রান করা ব্ল্যাকউডকে। এ উইকেটের মূল কৃতিত্ব নিঃসন্দেহে উইকেটরক্ষক লিটনেরই।
তবে এরপর সেশনের বাকি সময়টায় আর বিপদ ঘটতে দেননি প্রথম ইনিংসের দুই হাফসেঞ্চুরিয়ান এনক্রুমাহ বোনার ও জশুয়া ডা সিলভা। কখনও রাহী, কখনও তাইজুল কিংবা নাঈম-মিরাজদের ব্যবহার করেও এ দুজনকে টলাতে পারেননি টাইগার অধিনায়ক। সেশন শেষে বোনার ১০৭ বলে ৩০ ও জশুয়া ৫২ বলে ২০ রানে অপরাজিত রয়েছেন।
এসএএস/আইএইচএস/এমএস