গণমাধ্যম

৪৮ ঘণ্টা গড়াল ৭৮ হাজার ঘণ্টায়, মেলেনি বিচার

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারওয়ার ও মেহেরুন রুনিকে নৃশংসভাবে নিজ বাসায় হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই খুনিদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনা হবে। কিন্তু ৭৮ হাজার ৬০০ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচারের কোনো উদ্যোগই গ্রহণ করেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

Advertisement

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সদস্য মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারওয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি হত্যার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) ডিআরইউ চত্বরে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে এসব কথা বলেন সংগঠনটির সভাপতি মুরসালিন নোমানী।

এ সময় আগামী এক মাসের মধ্যে সাংবাদিকদের সব সংগঠনের সঙ্গে সমন্বয় করে ‘সংগ্রাম পরিষদ’ গঠনের মাধ্যমে সাগর-রুনি হত্যার বিচারের আন্দোলনকে বেগবান করার ঘোষণা দেয়া হয়।

প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত অন্যান্য সাংবাদিক নেতারা বলেন, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারওয়ার ও মেহেরুন রুনিকে নৃশংসভাবে নিজ বাসায় হত্যা করা হয়। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, হত্যাকাণ্ডের নয় বছর পেরিয়ে গেলেও হত্যাকারীদের আজও শনাক্ত কিংবা গ্রেফতার করা হয়নি। বিচার প্রক্রিয়াও থমকে আছে। এমনকি ৭৮ বার মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) প্রদানের তারিখ নেয়া হয়েছে।

Advertisement

সাগর-রুনি হত্যার বিচারে ‘সংগ্রাম পরিষদ’ গঠনের ঘোষণা

অবিলম্বে চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডে জড়তিদের গ্রেফতার দাবি করে বলেন, এভাবে সভা-সমাবেশ করলে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টনক নড়বে না। এ জন্য প্রয়োজন সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন।

মুরসালিন নোমানী বলেন, গত প্রায় এক দশক ধরে ডিআরইউসহ সাংবাদিক সমাজ সাগর-রুনি দম্পতির খুনিদের বিচার দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছে। অথচ হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তারা বলেছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই খুনিদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনা হবে। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, ৭৮ হাজার ৬০০ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচারের কোনো উদ্যোগই গ্রহণ করেনি। বরং তারা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নামে এ পর্যন্ত ৭৮ বার তারিখ পিছিয়েছে। এখন সেটা সেঞ্চুরির দিকে যাচ্ছে।

ডিআরইউ সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খান বলেন, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন হচ্ছে। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বারবার বিচারের আশ্বাসও দেয়া হচ্ছে। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে এই নৃশংস হত্যার বিচার কাজ শুরুই হয়নি। তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার তারিখ ৭৮ বার পেছানো হয়েছে।

Advertisement

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সাগর-রুনিকে নিজ বাসায় হত্যা করা হয়

ডিআরইউ সভাপতি মুরসালিন নোমানীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খানের সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশের সভাপতি এম আবদুল্লাহ, অপর অংশের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আবদুল মজিদ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি রেজওয়ানুল হক রাজা, ডিআরইউর সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, সাইফুল ইসলাম, ইলিয়াস হোসেন ও রফিকুল ইসলাম আজাদ, বিএফইউজে একাংশের সাবেক মহাসচিব ওমর ফারুক।

আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) একাংশের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু, অপর অংশের সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম, ডিআরইউর সহ-সভাপতি ওসমান গনি বাবুল, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ ও সৈয়দ শুকুর আলী শুভ, ডিআরইউর সাবেক সহ -সভাপতি আজমল হক হেলাল, বর্তমান অর্থ সম্পাদক শাহ আলম নূর, কার্যনির্বাহী সদস্য এম এম জসিম প্রমুখ।

মেহেরুন রুনির ছোট ভাই নওশের আলম রোমান বক্তব্য রাখেন। এছাড়া সাগর-রুনি দম্পতির একমাত্র সন্তান মাহির সারওয়ার মেঘ প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নেয়।

এইচএস/এমএসএইচ/জেআইএম