ঝালকাঠিতে কৃষকরা বোরো আবাদে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। কাক ডাকা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বীজতলা থেকে চারা উত্তোলন, জমি তৈরি এবং রোপণের কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তারা। চলতি বোরো মৌসুমে ১১ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো বীজ আবাদ করা হচ্ছে।
Advertisement
ঝালকাঠি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সূত্রে জানা গেছে, জেলায় চলতি মৌসুমে ১১ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর জমি রয়েছে যেখানে শুধুমাত্র বোরো আবাদ হয়ে থাকে। বছরের অন্য সময় জলাবদ্ধ থাকার কারণে এসব জমিতে অন্য কোনো ফসল হয় না।
ঝালকাঠি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (এসএএও) মো. শাহ জালাল জানান, ঝালকাঠি জেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ১১ হাজার হেক্টর জমির চাষাবাদ করা হয়েছে ৯হাজার ৪৩৫ হেক্টর জমিতে।
Advertisement
ঝালকাঠি সদর উপজেলায় ৫০৫০, নলছিটি উপজেলায় ৫৫৭৫, রাজাপুর উপজেলায় ১১০ ও কাঁঠালিয়া উপজেলায় ৯০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর মধ্যে ঝালকাঠি সদর উপজেলায় ৪৬২০, নলছিটি উপজেলায় ৪৭৭৯, রাজাপুর উপজেলায় ১৭ ও কাঁঠালিয়া উপজেলায় ১৮ হেক্টর জমিতে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। ইতিমধ্যে লক্ষ্যমাত্রার ৮৬% অর্জন হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আবাদ বেশি হতে পারে বলে গত বছরের ধারণায় আশা প্রকাশ করেন এসএএও মো. শাহজালাল। কৃষকদের অভিযোগ বীজ, সার এবং কীটনাশকের মূল্য বেশি হওয়ায় শুরুতে অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপরে ধান খেতে পাম্পের সাহায্যে সেচ দেয়ায় ডিজেলের মূল্য বেশি থাকায় কৃষকের তেমন লাভ থাকে না। কৃষি বিভাগ থেকে কোনো সহযোগিতা না পাওয়ায় কৃষকদের মাঝে ক্ষোভ রয়েছে।
এরপরে বাজারেও ধানের মূল্য ভালো না থাকায় বোরো আবাদে আগ্রহের কমতি নেই কৃষকদের। সদর উপজেলার বাসন্ডা ইউনিয়নের কুনিহারি গ্রামের কৃষক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘বোরো ধান লাগাতে আমরা এখন ব্যস্ত। জমি তৈরি ও ধান লাগাতে কাজ করতেছি। তবে ধানের বীজের দাম এবার বেড়ে গেছে।
গত বছর যে বীজ ধানের কেজি ছিল ৫০০ টাকা সেই বীজ ধান এ বছর আমাদের কিনতে হয়েছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়।’ একই এলাকার কৃষক ফারুক মাঝি বলেন, ‘আমরা কৃষি বিভাগ থেকে কোনো সাহায্য পাই না। সাহায্য পেলে আমাদের উপকার হতো।’
Advertisement
সদর উপজেলার সাবাঙ্গল এলাকার কৃষক মো. আলমগীর হোসেন জানান, ঝালকাঠি বিএডিসি (বীজ বিপণন ও বিতরণ) অফিসে বোরো বীজ আনতে গেলে তারা কোনো ব্যাখ্যা না দিয়ে, আমার কথা না শুনে ভালো
বীজ আছে বলে ফরিদপুর থেকে আনা ১০ কেজির ১২টি প্যাকেট ৬হাজার টাকা দাম রাখে। বীজতলায় আবাদ করার পর ৬ প্যাকেট বীজও ফোটায়নি (অঙ্কুরোদগম করেনি)। পরে অন্য বীজ তলা থেকে উচ্চ দামে বীজ কিনে এনে রোপণ করতে হচ্ছে। এতে খরচ অনেক বেশি পড়ে গেছে।
বাকি খরচের দিনতো আরো সামনে আছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. ফজলুল হক বলেন, ‘এ বছর কৃষকদের মধ্যে যে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে তাতে বিগত ১০ বছরের মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ জমিতে বোরো ধানের আবাদ হবে।
আমরা সব সময় কৃষদের পাশে থেকে তাদের পরামর্শ দিচ্ছি। উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তারা প্রতিটি ব্লকে গিয়ে কৃষকদের খোঁজ-খবর নিচ্ছে।
এমএমএফ/এএসএম