মানুষ আল্লাহর প্রিয় ও সেরা সৃষ্টি। আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে তিনি মানুষকে মর্যাদা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। তাই মানুষ হত্যাকে তিনি কবিরা গোনাহ হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। হত্যার অপরাধে মহান আল্লাহর আরশের ছায়া থেকে বঞ্চিত হবে মানুষ।
Advertisement
কারণ অবৈধ হত্যাকাণ্ড পৃথিবী ধ্বংসের চেয়েও মারাত্মক। মানুষ হত্যা মানবতা হত্যার শামিল। সে কারণে যখন কোথাও কোনো হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়, সেখানে আল্লাহর অভিশাপ নাজিল হয়। হত্যাকাণ্ডের ভয়াবহতায় তুলে ধরে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
- ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মুসলমানকে হত্যা করে, তার শাস্তি জাহান্নাম, তাতেই সে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন, তাকে অভিসম্পাত করেছেন এবং তার জন্য ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৯৩) - আর যারা আল্লাহর সঙ্গে অন্য উপাস্যের ইবাদত করে না, আল্লাহ যার হত্যা অবৈধ করেছেন সঙ্গত কারণ ব্যতিত তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। যারা একাজ করে, তারা শাস্তির সম্মুখীন হবে। তাদের শাস্তি কেয়ামতের দিন দ্বিগুন হবে এবং সেখানে তারা লাঞ্ছিত অবস্থায় চিরকাল বসবাস করবে। কিন্তু যারা তওবা করে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের গোনাহকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তত করে দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা ফুরকান : আয়াত ৬৮-৭০)
উল্লেখিত আয়াতের আলোকে অবৈধ হত্যাকাণ্ড হারাম ও মারাত্মক কবিরা গোনাহ। ইসলামি শরিয়তের আলোকে হদযোগ্য অপরাধের শাস্তি বা হত্যা ভিন্ন কথা। এ হদযোগ্য অপরাধ ছাড়া অবৈধ হত্যাকে হারাম করেছেন।
Advertisement
পরক্ষান্তরে যারা আল্লাহর হুকুম অমান্য করে কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে, তাদের শাস্তির বিষয়টিও উঠে এসেছে কুরআনে। তাই যে কোনো হত্যাকণ্ড ঘটানো থেকে বিরত থাকা জরুরি।
হত্যার মতো জঘন্য কবিরা গোনাহ থেকে মানুষকে ফিরিয়ে রাখতে হবে। হত্যাকাণ্ডের গোনাহের কথা তুলে ধরতে হবে। হত্যাকাণ্ড যে হারাম বা কবিরা গোনাহ, তা ব্যাপকভাবে প্রচার ও প্রসার করা মানুষের ঈমানি দায়িত্ব।
মনে রাখা জরুরি
হত্যাকাণ্ড মারাত্মক বড় অপরাধ। কেয়ামতের দিন সর্ব প্রথম হত্যাকাণ্ডের বিচার-ফয়সালা করা হবে। হত্যাকাণ্ডের পরিণাম সম্পর্কে হাদিসে একাধিক বর্ণনা পাওয়া যায়। তাহলো-
Advertisement
- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন মানুষের মাঝে সর্বপ্রথমে যে বিষয়ে ফয়সালা হবে; তাহলো রক্তপাত বা হত্যা।’ (বুখারি-মুসলিম ও মিশকাত)
- প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘একজন মুমিন ততক্ষণ পর্যন্ত দ্বীনের ব্যাপারে পূর্ণ প্রশান্ত থাকে যে পর্যন্ত না সে অবৈধ হত্যায় লিপ্ত না হয়। (বুখারি, মিশকাত)
- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নিরাপরাধ মানুষকে হত্যার অপরাধে আল্লাহ তাআলা সব অপরাধীকে এক সঙ্গে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।’
- অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘একজন মুমিনের রক্তের মূল্য কাবা ঘরের চেয়ে অনেক বেশি মর্যাদার।’
- বিদায় হজের ভাষণে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুমিন নিরাপরাধ ব্যক্তির রক্তের মূল্যের ব্যাপারে নসিহত করে বলেছেন, ‘৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানের সময়, মাস ও স্থান যতবেশি মূল্যবান; আল্লাহর কাছে নিরাপরাধ মুমিন ব্যক্তির রক্ত আরও বেশি মূল্যবান।’
নিরাপরাধ মানুষ হত্যার পরিণাম
নিরাপরাধ মানুষকে হত্যা বা রক্তপাত করায় ৫টি শাস্তির ধরণ উল্লেখ করা হয়েছে। হত্যার শাস্তি যে কত জঘন্য তা প্রমাণেই আল্লাহ তাআলা আয়াত নাজিল করেছেন। আয়াতের তাফসিরে হত্যার ভয়াবহ শাস্তির কথাগুলো তুলে ধরা হয়েছে। যার একটি শাস্তির কথা উল্লেখ করাই যথেষ্ট ছিল। তাহলো-
> হত্যার প্রতিদান হচ্ছে জাহান্নাম।
> হত্যাকারী জাহান্নামে চিরস্থায়ী হবেন।
> আল্লাহ হত্যাকারীর ওপর রাগান্বিত হবেন।
> আল্লাহ হত্যাকারীর প্রতি লানত তথা অভিশাপ দেবেন।
> হত্যাকারীর জন্য থাকবে কঠিন শাস্তি।
সুতরাং অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা নয়, বরং এ জঘন্য অপরাধ তথা কবিরা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকাই মানুষের একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হত্যার মতো জঘন্য কবিরাহ গোনাহ থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। কুরআন-সুন্নাহর উপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম