পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে উন্নত জাতের সরিষার খেত। সবুজের পাদদেশে সরিষার খেতে ফুটেছে সরিষার ফুল। বিস্তীর্ণ জমিতে যেন হলুদের রঙছটা। স্বল্প সময় আর কম খরচে সরিষা চাষে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার স্বপ্ন বুনছেন পাহাড়ের প্রান্তিক কৃষকরা।
Advertisement
গত বছরের তুলনায় এ বছর পাহাড়ি জেলা খাগড়াছড়িতে বেড়েছে সরিষার আবাদ। আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে পাহাড়ের প্রান্তিক কৃষক। সরকারিভাবে বিশেষ প্রর্দশনী প্লট ছাড়াও ব্যক্তি উদ্যোগে সরিষা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন অনেকে। পাহাড়ে বেশিরভাগ জমিতেই বিনা ৯, বারি ১৪, ১৭ এবং মাঘী জাতের সরিষার আবাদ করছেন কৃষকরা।
চলতি মৌসুমে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা, পানছড়ি, মহালছড়ি ও মাটিরাঙ্গায় বিভিন্ন জাতের সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। খাগড়াছড়ি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে প্রায় ২১০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। গত মৌসুমের তুলনায় এ বছর খাগড়াছড়িতে সরিষার আবাদ বেড়েছে। যা গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ।
সরিষা চাষে আর্থিক স্বচ্ছলতার স্বপ্ন দেখছেন খাগড়াছড়ি শহরের ১৫ কি.মি দূরের মাইসছড়ি এলাকার প্রান্তিক কৃষক রুপায়ন চাকমা। ব্যক্তি উদ্যোগে ৪০ শতক জমিতে বারি ১৪ জাতের সরিষার আবাদ করেছেন এ কৃষক। তবে কৃষি বিভাগ থেকে সার, বীজ ও কীটনাশক না পাওয়ার ক্ষোভের কথাও জানান তিনি।
Advertisement
৪০ শতক জমিতে সরিষা চাষে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সরিষা চাষে আগ্রহী হলেও আর্থিক সঙ্কটে অনেকেই সরিষা চাষ করতে পারছেন না। সরকারিভাবে প্রণোদনার পাশাপাশি ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করা হলে কৃষকরা সরিষা চাষ করে আর্থিক স্বচ্ছলতা পেতো।
মাটিরাঙ্গার গোমতির সফল সরিষা চাষি মো. তৈয়ব আলী বলেন, বোরো ও আমনের মাঝামাঝি সময়ে পরিত্যক্ত জমিতে সরিষা চাষে বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সরিষা চাষে সরকারি প্রণোনোদনা বাড়ানোর দাবি জানিয়ে এ কৃষক বলেন, স্বল্প সময়ে সরিষা চাষে বেশি লাভবান হওয়ার কারণে কৃষকের ভাগ্য বদলে যেতে পারে।
কোনো ধরনের সরকারি প্রণোদনা ছাড়াই ৮০ শতক জমিতে বিলুপ্ত জাতের দেশি মাঘী জাতের সরিষার আবাদ করেছেন শুভল চাকমা। তিনি জানান, বিলুপ্ত জাতের হওয়ায় এসব বীজ সংগ্রহ করতে অনেক ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে। মাঘী জাতের সরিষা চাষে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি দেশীয় জাতের বীজ সংরক্ষণ করা যাবে বলে মনে করেন এ প্রান্তিক চাষি। বিশ হাজার টাকা খরচে সরিষা চাষে তিনগুণ আয়ের স্বপ্ন দেখছেন এ চাষি।
সরিষা মধ্যবর্তী ফসল উল্লেখ করে খাগড়াছড়ি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. মর্ত্তুজ আলী বলেন, বোরো ও আমনের মাঝামাঝি দুই মাস সময়ে পরিত্যক্ত জমিতে সরিষা চাষ করে বাড়তি আয়ের সুযোগ বেছে নিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।
Advertisement
বিগত সময়ের তুলনায় চলতি মৌসুমের কৃষকদের মাঝে সরিষা চাষে আগ্রহ বাড়ছে। বিনা ও বারি জাতের সরিষার জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে ৪৯০টি প্রদর্শনী প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রদর্শনী প্লটের বাইরেও প্রান্তিক চাষিরা ব্যক্তি উদ্যোগে সরিষা চাষে ঝুঁকছেন। এর মধ্যে বিলুপ্ত জাতের সরিষাও রয়েছে।
জানা গেছে, সরিষা মধ্যবর্তী ফসল হিসেবে পরিচিত। আমনের ফসল ঘরে তোলার পর বোরো চাষের জন্য দুই মাস সময় অপেক্ষা করতে হয়। বোরো ও আমনের মাঝামাঝি সময়ে পরিত্যক্ত জমিতে সরিষা চাষ করে বাড়তি আয়ের সুযোগ বেছে নিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।
সরিষা উৎপাদনে দেড় থেকে দু’মাসের মধ্যেই হয়ে যায়। প্রতি একর জমিতে সরিষা আবাদ করে ১০ থেকে ১৫ মণ পর্যন্ত সরিষা উৎপাদিত হয়। প্রতি মণ সরিষার ১২শ থেকে ১৩শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
সরিষা আবাদে তেমন সেচের প্রয়োজন হয় না। কম সময়ে সরিষা চাষে ফলন পাওয়া যায়। সরিষার বড় শত্রু জাব পোকা। সরিষা উৎপাদন করে দেশের সরিষার তৈলের চাহিদা পূর্ণ হচ্ছে। সরিষার তেলের রয়েছে অনেক ঔষধি গুণ।
সরিষার খৈল পশুখাদ্য ও জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধির কাজে ব্যবহার হয়। সরিষার গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এছাড়া যে জমিতে সরিষার পাতা ঝড়ে পড়ে সে জমির খাদ্য চাহিদা অনেকাংশে মিটিয়ে থাকে।
এমএমএফ/জিকেএস