ইসরাত জাহান চৈতী
Advertisement
প্রবল ইচ্ছাশক্তি থাকলে কোনো প্রতিবন্ধকতাই থামিয়ে রাখতে পারে না। তারই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত নান্দীপাঠ ও পুস্কুনী পেজের মালিক। বলছি নারায়ণগঞ্জের মেয়ে তীর্থ খায়ের সিঁথির কথা। পছন্দ অনুযায়ী মানসম্মত পোশাক থেকে শুরু করে তৈরি করা খাবার পাবেন পেজ দুটি থেকে। নান্দীপাঠে মিলবে পছন্দ অনুযায়ী শাড়ি, থ্রিপিস, গজ কাপড় ও বিভিন্ন ধরনের ওড়না। পুস্কুনীতে পাবেন তৈরি করা খাবার।
সিঁথি পড়াশোনা শেষ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ছোটবেলায়ই বাবাকে হারান। বাবার মৃত্যুর পর পরিবারের হাল ধরার মতো কেউ ছিল না। একটি পুরুষশূন্য পরিবারে নানা ধরনের প্রতিকূলতা অতিক্রম করে যেতে হয়েছে সিঁথিকে। তখন থেকেই ভাবতেন, নিজ উদ্যোগে কিছু একটা করবেন।
পড়াশোনা শেষ করে যুক্ত হন একটি সরকারি চাকরিতে। তখনো মনের সুপ্ত ইচ্ছা উঁকি দেওয়া বন্ধ করেনি। তাই নিজের ইচ্ছাকে প্রতিষ্ঠিত করতে, জনবলের অভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি কারখানা চালু করতে ২০১৮ সালে শুরু করেন পোশাকের পেজ নান্দীপাঠ। এ যাত্রায় তার পাশে দাঁড়ান আরিফুল ইসলাম। নান্দীপাঠের যাত্রা শুরুর পরই ব্যাপক সাড়া পেতে থাকেন।
Advertisement
২০১৮ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এ পেজ থেকে বিক্রি হয় ৫ লাখ টাকা। এরপর সিঁথিকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০১৯ এর শেষে তিনি জয়েন করেন উইতে। সেখানে জয়েন করার পরের ইতিহাস শুধু বদলে যাওয়ার। গতবছরের জুলাই মাসে শুধু পোশাকের পেজ নান্দীপাঠ থেকে সেল হয় ৩ লাখ টাকা।
তারপর দুই বন্ধু মিলে গড়ে তোলেন রেডি টু কুক মিট অ্যান্ড ফিস আইটেম পেজ পুস্কুনী। শুরু থেকে পুস্কুনীও ক্রেতাদের ভরসার প্রতীক হয়ে ওঠে। ফলে গতবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পুস্কুনী থেকে মাছ, মাংসের সেল হয়েছে ৪ লাখ টাকা। বর্তমানে নান্দীপাঠ ও পুস্কুনীর সাথে কারিগর, মাছ, মাংসের জোগানদাতা, প্রসেস কর্মী ও ডেলিভারিম্যান সহ ৮ ব্যক্তি জড়িত।
তাদের পথচলা খুব একটা মসৃণ ছিল না। চাকরিই যেন সমাজে সবচেয়ে সম্মানজনক পেশা। এ ধারণাকে বদলে দিতেই তাদের পথচলা। নানা বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে আজ প্রতিষ্ঠিত নান্দীপাঠ ও পুস্কুনী। পারিবারিকভাবেও ছিল নানা বাধা। এ ছাড়া আশপাশের মানুষের কাছ থেকে পেয়েছেন মাছওয়ালা, মুরগিওয়ালা খেতাব। তবু দমে যাননি। এত প্রতিবন্ধকতাকে পাশ কাটিয়ে নিজ গতিতে এগিয়ে গেছেন দুই বন্ধু।
বর্তমানের কথা জানতে চাইলে সিঁথি বলেন, ‘শুধু ব্যবসা করেও জীবনে সফল হওয়া যায়। বিষয়টি পরিবারাসহ আশপাশের মানুষকে বোঝাতে চেয়েছিলাম। আজ নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে সক্ষম হয়েছি। করোনার ক্রান্তিলগ্নে নান্দীপাঠ ও পুস্কুনীর এ সেল থেকে শুধু আমাদের লাভ নয়। আরও ৮ পরিবারের অন্নের সংস্থান হয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে পেজ দুটোকে প্রসারিত করার পথে হাঁটছি আমরা।’
Advertisement
নন্দীপাঠের পণ্য ডেলিভারি দেওয়া হয় সারাদেশে আর পুস্কুনীর পণ্য পৌঁছে দেওয়া হয় ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ শহরে। তারা স্বপ্ন দেখেন, ভবিষ্যতে নান্দীপাঠের একটি অফলাইন শো-রুম ও পুস্কুনীর একটি অফলাইন সুপার শপ প্রতিষ্ঠার। সারাদেশেই থাকবে শো-রুম ও সুপার শপের শাখা। এ ব্যবসা থেকে তৈরি হবে হাজারো লোকের কর্মসংস্থান।
এসইউ/এএসএম