এ বছর মরণোত্তর একুশে পদক পাচ্ছেন সিরাজগঞ্জের তিন কৃতী সন্তান। তারা হলেন-মোতাহার হোসেন তালুকদার, গোলাম হাসনায়েন ও সৈয়দা ইসাবেলা।
Advertisement
মোতাহার হোসেন তালুকদার ভাষা আন্দোলনে; সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম হাসনায়েন এবং কবি, লেখক ও সাহিত্যিক সৈয়দা ইসাবেলা মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন।
এর আগে সিরাজগঞ্জ জেলার আরও ৯ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি একুশে পদক লাভ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মনোনীত ব্যক্তি বা উত্তরসূরিদের পুরস্কার প্রদান করবেন।
Advertisement
মোতাহার হোসেন তালুকদার
মোতাহার হোসেন তালুকদার ১৯৪৬ সালে তদানীন্তন মুসলিম ছাত্রলীগে যোগদান করেন। তিনি ১৯৪৭ সালে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের জিএস, ১৯৪৮ ও ১৯৪৯ সালে রাজশাহী গভর্নমেন্ট কলেজের জিএস ও ভিপির দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি সিরাজগঞ্জ জেলার সাবেক গভর্নর ও সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের আমৃত্যু সভাপতি ছিলেন।
১৯২২ সালে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার গজারিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মোতাহার হোসেন। তিনি সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার নিজ বাসভবনে ২০০১ সালের ২ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।
Advertisement
গোলাম হাসনায়েন নান্নুসিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার জীবন্ত কিংবদন্তি গোলাম হাসনায়েন নান্নু। তিনি ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। উল্লাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের এক সময়ের জনপ্রিয় এবং তুখোড় রাজনীতিবিদ গোলাম হাসনায়েন নান্নু পাবনা জেলা বারের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, পাবনা জেলার সাবেক এমসিএ।
১৯৭০ সালের পর মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তার অবদান অনস্বীকার্য। তিনি উল্লাপাড়ার রাজনীতিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। ১৯৭২ থেকে ২০০১ সালের রাজনীতির মাঠে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন জনগণের পাশে।
সৈয়দা ইসাবেলা
নারী সমাজের প্রগতির দিশারি রত্নগর্ভা মা সৈয়দা ইসাবেলা ছিলেন সিরাজগঞ্জের খ্যাতনামা সৈয়দ পরিবারের মেয়ে। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে তার বিশেষ অবদান রয়েছে। তিনি নারী জাগরণে এবং দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক অনন্য নাম।
১৯৪২ সালের ২৪ ডিসেম্বর সৈয়দ মোহাম্মদ ইসহাক ও আছিরুন নেছা খন্দকারের পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। মা-বাবা দুজনেই ছিলেন শিক্ষক।
বড় চাচা সৈয়দ ইসমাইল হোসেন শিরাজী উপমহাদেশে মুসলিম রেনেসাঁর অগ্রদূত। ২০১৩ সালের ১১ জানুয়ারি মহীয়সী নারী সৈয়দা ইসাবেলা মৃত্যুবরণ করেন।
সৈয়দা ইসাবেলা সিরাজগঞ্জ ডিগ্রি কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় ১৯৫৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর আমলাপাড়া নিবাসী আনোয়ার হোসেন রতুর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। স্বামী আনোয়ার হোসেন মুক্তিযুদ্ধকালীন সিরাজগঞ্জ সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব হিসেবে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করেন।
তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধে সিরাজগঞ্জের অন্যতম সংগঠক জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন রতুর সহধর্মিণী এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিনিয়র সচিব কবীর বিন আনোয়ারের গর্বিত মাতা।
সৈয়দা ইসাবেলা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সংগঠক ছিলেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (অনুষ্ঠান) অসীম কুমার দে স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশের ২১ জন বিশিষ্ট নাগরিককে ২০২১ সালের একুশে পদক প্রদানের সিদ্ধান্ত নেন।
এ স্বীকৃতিতে সিরাজগঞ্জ থেকে ভাষা আন্দোলনে অবদান রাখার জন্য স্থান পেয়েছে মোহাতার হোসেন তালুকদার (মোতাহার মাস্টার) এবং মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখার জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম হাসনায়েন ও সৈয়দা ইসাবেলা এ সম্মাননা পাচ্ছেন।
ইউসুফ দেওয়ান রাজু/এসআর/জেআইএম