পর্যটকদের অতিরিক্ত চাপ, হোটেলসহ ভারী স্থাপনা, উচ্চশব্দে গান-বাজনা, রাতে আলো জ্বালিয়ে রাখা, পলিথিন, আবর্জনা ও গাছপালা কেটে ফেলাসহ নানা কারণে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের জীববৈচিত্র্য, পরিবেশ-প্রকৃতি হুমকির মুখে পড়েছে। দেশের সর্ব দক্ষিণের এই দ্বীপটি রক্ষায় বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপও নিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে সেন্টমার্টিনে স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
Advertisement
স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এখন নিয়মিতই সেন্টমার্টিনের ঝুঁকিপূর্ণ একমাত্র জেটিতে হাজারও যাত্রী নিয়ে নিয়মিত জাহাজ ভিড়ছে।
স্থানীয়দের আশঙ্কা, জেটিটি যেকোনো সময় দেবে যেতে পারে বা ধসে পড়তে পারে। কক্সবাজার জেলা পরিষদ বলছে, সেন্টমার্টিনে স্থাপনা নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় নতুন জেটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া যাচ্ছে না। এর সমাধান কী তাও বলতে পারছে না তারা।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, কক্সবাজারের একমাত্র জেটির পুরোটাই ভাঙাচোরা। জেটি থেকে ইট-সিমেন্ট খসে পড়ছে। কোথাও কোথাও রেলিং ভেঙে পড়ে গেছে। জাহাজ থেকে যাত্রীরা জেটির যে অংশে নামছে, সেগুলোও ভাঙাচোরা। ফলে যাত্রীরা ঝুঁকি নিয়েই জেটি ব্যবহার করছেন।
Advertisement
এ বিষয়ে সেন্টমার্টিনের বাসিন্দা মো. আব্দুল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ জেটি যেকোনো সময় দেবে যেতে পারে। জেটির ঢালাই নষ্ট হয়ে গেছে। একদম খোল (ফাঁকা) হয়ে গেছে জেটির নিচের দিকটা। জেটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভেঙে গিয়ে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’
সম্প্রতি জেটির কিছু অংশ সংস্কার করা হয়েছে বলেও জানান আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, জেটির সামনের দিকে একটু সংস্কার করা হয়েছে। এতে কিছু হবে না। এটি ভেঙে নতুন জেটি নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিল্লোল বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, ‘সেন্টমার্টিনে পরিবেশ মন্ত্রণালয় যেহেতু স্থায়ী কোনো স্থাপনা করতে দিচ্ছে না, এ নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে আমরা একটি নতুন জেটি নির্মাণের পরিকল্পনা করেছি। এটাকে প্রতি বছর আমরা ঠিকঠাক করে দিই। এবারও জাহাজ চলাচলের সুবিধার জন্য জেটির কিছু কাজ আমরা করেছি। এর বেশিকিছু এখন করা যাচ্ছে না।’
জেটির মেয়াদ কতদিন আগে উত্তীর্ণ হয়েছে নাকি হয়নি, সে বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেননি এই প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। হিল্লোল বিশ্বাস বলেন, জেটির মেয়াদের বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।
Advertisement
সেন্টমার্টিন বিশেষজ্ঞ এবং সমুদ্র পরিবেশবিষয়ক সংগঠন সেভ আওয়ার সি’র পরিচালক এস এম আতিকুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘জেটিটি দেয়া হয়েছে সেন্টমার্টিনের জনগণের জন্য। কারণ এই দ্বীপের লোকগুলোকে হাসপাতালে যেতে হবে, নানান দরকারি কাজেও তো যেতে হবে। তাছাড়া নিয়ম মাফিক যদি পর্যটনও হয়, তাহলেও ঠিক আছে। সেজন্য তো একটা জেটি দরকার।’
তিনি বলেন, ‘সেন্টমার্টিনেরটা নৌকার জেটি। নৌকার জন্য হলে সেটা নিরাপদ। এটা বোট জেটি, জাহাজের জেটি বলা হয় না। জাহাজ না আসলে এটা ঝুঁকিপূর্ণ না। এখানে যদি বড় বড় জাহাজ আসে, তাহলে এটি ভেঙে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু না। গ্রিনলাইনের একটা বোট (নৌকা) আছে। এসব জায়গায় আসবে বোট। এখানে জাহাজের জন্য তো জেটি করা হয় নাই।’
আতিকুর রহমান আরও বলেন, ‘যদি এটাতে বড় বড় জাহাজের ধাক্কা লাগতেই থাকে তো যত শক্তিশালীই করেন লাভ হবে না। জেটির ওখানে পানি একেবারেই কম। সেন্টমার্টিনের চারপাশেই পানি কম। কোনোদিন নৌ-বাহিনীর জাহাজ জেটিতে আসে না। অথচ পর্যটনের জাহাজগুলো যেভাবে আসছে, এখানে যত ভালো জেটিই দেয়া হোক না কেন, লাভ হবে না।’
আর যেহেতু এখানে লবণ পানি, কনস্ট্রাকশন যেটাই করা হোক, লবণ পানি সেটাকে দুর্বল করে ফেলবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এই ওশেন এক্সপ্লোরার বলেন, ‘বিশ্বের কোনো ইকোলজিক্যাল আইল্যান্ডে জাহাজ প্রবেশ করানোই নিষেধ। এই জাহাজের কারণে সেন্টমার্টিনের কুড়াল একেবারেই ধ্বংসের মুখে।’
সেন্টমার্টিনের এই জেটি ২০০৫ সালের পর নির্মাণ করা হয়েছিল বলেও দাবি তার।
আতিকুর রহমান বলেন, ‘সেন্টমার্টিন হচ্ছে ইকোলজিক্যাল ক্রিটিক্যাল এরিয়া (ইসিএ)। ইসিএকে বুড়া আঙুল দেখিয়ে জেটি হোক, জাহাজ আসা হোক, ডেসপারেট ট্যুরিজম হোক, যেটা হচ্ছে; তার বিরুদ্ধে সরকার কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। নানা কারণে এটা পারছে না। সরকারের মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি রয়েছে। একজন বলছে ট্যুরিজম হবে। আরেকজন বলছে যেহেতু বাংলাদেশের আর কোথাও এ ধরনের ইকো-সিস্টেম নাই, এটাকে সংরক্ষণ করা উচিত। সরকারও পারছে না নানান বিভাগের কারণে।’
পিডি/এমএসএইচ/এসএইচএস/এমএস