জাতীয়

উড়ছে সি-বার্ড, ছুড়ছে চিপস : উপেক্ষিত সরকারি নিষেধাজ্ঞা

বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। কক্সবাজার জেলা শহর থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরের এই প্রবাল দ্বীপ খুব সহজেই নজর কাড়ে ভ্রমণপিপাসুদের। তাই তো প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক ছুটে যান সেন্টমার্টিন।

Advertisement

পর্যটকদের অসাবধানতা, অসচেতনতার ফলে প্রবাল দ্বীপটির জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ দিন দিন হুমকির মুখে। সে কারণে সেন্টমার্টিনের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ রক্ষায় বেশকিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার। কোনো ক্ষেত্রেই সরকারের সেই নির্দেশনা মানা হচ্ছে না।

সেন্টমার্টিন ভ্রমণে সরকার যেসব বিধি-নিষেধ দিয়েছে তার মধ্যে একটি ‘জাহাজ থেকে পাখিকে চিপস বা অন্য কোনো খাবার খাওয়ানো যাবে না’। সরকারের এ নিষেধাজ্ঞা মানছেন না সেন্টমার্টিন ভ্রমণকারীরা।

সরকার থেকে বিধিনিষেধ আরোপ করার পর সম্প্রতি জাগো নিউজ টিম সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করে এমন দৃশ্য দেখতে পেয়েছে।

Advertisement

টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে জাহাজ ছাড়ার পরপরই দেখা যায়, জাহাজের পিছু পিছু দলে দলে ছুটে আসছে সিবার্ড বা গাঙচিল। তাদের আকৃষ্টি করতে ভ্রমণকারীদের অনেকে শূন্যে ছুড়ে মারছেন চিপস। পানিতে পড়ার আগেই সেই চিপস ছো মেরে ধরে ফেলছে কোনো না কোনো সিবার্ড। এ দৃশ্য পরম আনন্দে উপভোগ করছেন জাহাজের অন্য যাত্রীরা।

সেন্টমার্টিন থেকে টেকনাফ ফিরে আসার পথে জাহাজ সমুদ্র পাড়ি দিয়ে নাফ নদীতে আসতেই একই দৃশ্য দেখা যায়। ঝাঁকে ঝাঁকে জাহাজের পিছু পিছু উড়তে থাকে সি-বার্ড। সরকারের নির্দেশনা থোড়াই কেয়ার করে তাদের উদ্দেশ্যে জাহাজের যাত্রীরা ছুড়তে থাকেন একের পর এক চিপস। জাহাজ জেটিতে ভেড়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত চলে এ দৃশ্য।

সি-বার্ডের উদ্দেশ্যে চিপস ছুড়ছিলেন ফারিয়া। সেই মুহূর্তেই কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পানিতে পড়ার আগেই সি-বার্ডগুলো চিপস ধরে ফেলছে। একটি চিপসও পানিতে পড়ছে না। সবগুলো শূন্য থেকে পাখির গালে চলে যাচ্ছে। এমন দৃশ্য সত্যিই অভূতপূর্ব। আমি আগে কখনো এমন দৃশ্য দেখিনি। নিজ চোখে না দেখল বিশ্বাসই হবে না চিপস ধরতে পাখিরা এমন দক্ষ হয়।’

সরকার থেকে পাখিকে চিপস বা অন্য কোনো খাবার খাওয়ানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, তাহলে আপনি এ নিষেধাজ্ঞা মনছেন না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার এটা জানা নেই। পরবর্তীতে সেন্টমার্টিন এলে পাখিকে আর চিপস খাওয়াবো না, তখন শুধু দেখবো।’

Advertisement

একই কাজ করছিলেন অয়ন নামের একজন। তিনি বলেন, ‘পুরো ভ্রমণের মধ্যে সব থেকে ভালো লেগেছে সি-বার্ডের চিপস খাওয়ার দৃশ্য। চিপস ছুড়লে পাখিগুলো জাহাজের সঙ্গে সঙ্গে ছুটে আসছে। চিপস না দিলে তারা দূরে সরে যাচ্ছে। তাই সি-বার্ডকে জাহাজের সঙ্গে রাখার জন্য চিপস দিচ্ছি।’

সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে তো জরিমানা হতে পারে- এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘কে করবে জরিমানা? এখানে তো জরিমানা করার মতো কাউকে দেখি না। জরিমানার ভয়ে এমন দৃশ্য মিস করবো এটা হতে পারে না। ক্ষুধার্ত পাখিকে খাওয়াচ্ছি এবং নিজে আনন্দ পাচ্ছি। অন্যরাও এটা উপভোগ করছেন। এতে তো আমি অন্যায়ের কিছু দেখছি না।’

সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এভাবে সি-বার্ডের উদ্দেশ্যে একের পর এক ভ্রমণকারী চিপস ছুড়ে মারলেও কাউকে তা বন্ধের উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। অথচ পরিবেশ অধিদফতর থেকে এ নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কেউ বিধি-নিষেধ লঙ্ঘন করলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ‘বে ক্রুস’ জাহাজের ক্যাপ্টেন বলেন, ‘পাখিকে চিপস বা অন্য খাবার না দেয়ার জন্য আমরা মাইকিং করছি। কিন্তু কেউ না শুনলে তো আমাদের করার কিছু নেই। আমরা তো কাউকে জেল-জরিমানা করতে পারবো না। যাত্রীদের সচেতন করার জন্য আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি।’

এমএএস/ইএ/এসএইচএস/এমএস