শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার নাগেরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. মহসিন সরদারের বিরুদ্ধে এক শারীরিক প্রতিবন্ধীর নড়বড়ে কাঁচা ঘর থেকে অতিরিক্ত হোল্ডিং ট্যাক্স নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া ইউনিয়নবাসীর কাছ থেকেও অতিরিক্ত হোল্ডিং ট্যাক্স নেয়ায় অসন্তোষের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসক ও গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর দুটি অভিযোগ দায়ের করেছেন ইউনিয়নবাসী।
Advertisement
নাগেরপাড়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কেচুয়ারচর গ্রামের মৃত মকবুল হাওলাদারের ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী সেলিম হাওলাদার (৪৫) বলেন, ‘আমার দুই ছেলে। বড় ছেলে দুলাল হাওলাদার। দুলাল ইটের ভাঁটায় শ্রমিকের কাজ করে। আর ছোট ছেলে কাউসার হাওলাদার শারীরিক প্রতিবন্ধী। আমার বাবা দুই বছর আগে মারা গেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিবন্ধী। আমার তেমন (ভালো) একটি ঘর নেই। আমাকে কোলে করে বাইরে নিতে হয়, কোলে করে ঘরে আনতে হয়। আমি কোনো কাজ-কর্ম করতে পারি না। তবুও আমার কাছ থেকে ভাঙা-কাঁচা ঘরের ট্যাক্সবাবদ চেয়ারম্যান (মো. মহসিন) লোক দিয়ে ৩০০ টাকা নিয়েছে।’
একই গ্রামের আব্দুল খালেক হাওলাদারের ছেলে শ্রমিক ইব্রাহিম হাওলাদার বলেন, ‘আমি শ্রমিকের কাজ করি। যখন যে কাজ পাই, তাই করি। আমার একটি ঘর কোনোরকম চালা আছে তাও বাঁশ দিয়ে আটকানো। চেয়ারম্যান ঘরের ট্যাক্স বাবদ আমার কাছ থেকে ৬০০ টাকা চেয়েছে। আমি টাকা দেইনি। পরে লোক পাঠিয়ে স্ত্রী রাবেয়ার কাছ থেকে ৬০০ টাকা নিয়ে গেছে চেয়ারম্যান। স্ত্রী অনেক কষ্টে টাকাটা জুগিয়েছিল।’
Advertisement
অভিযোগ ও ইউনিয়নবাসী সূত্র জানায়, নাগেরপাড়া ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ নিম্নআয়ের ও নিতান্তই খেটে খাওয়া দিনমজুর। কিন্তু নাগেরপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মহসিন সরদারসহ মেম্বাররা এলাকায় মাইকিং করে মামলা-হামলার ভয় দেখিয়ে হোল্ডিং ট্যাক্সের নামে অতিরিক্ত ট্যাক্স আদায় করছেন। যা কারো কারো কাছ থেকে দশগুণ পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে। যেখানে প্রতিবন্ধী ও দিনমজুর পরিবাররাও বাদ যায়নি। এ কারণে এলাকায় বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হতে পারে।
সুষ্ঠুভাবে ট্যাক্স আদায়ের লক্ষ্যে সরকারের জারি করা গেজেট অনুযায়ী হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ করে সংশ্লিষ্ট মানুষকে নাগেরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের হাত থেকে বাঁচানো দরকার বলে জানান এলাকাবাসী। অতিরিক্ত নয়, ২০১৩ সালের গেজেট অনুযায়ী ট্যাক্স পরিশোধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তারা। এছাড়া সম্প্রতি ট্যাক্সের বিষয়টি নিয়ে ইউনিয়নবাসী পরিষদ ঘেরাও করে।
গত ২০ জানুয়ারি এ ব্যাপারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে মো. আবু ইউসুফ মাতব্বর ও সেলিমকে ৫ হাজার করে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করান চেয়ারম্যান এমনটাই অভিযোগ তাদের। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জন্মনিবন্ধন, মৃত্যুসনদ, নাগরিক সনদসহ সব ধরনের কাগজপত্র তুলতে অতিরিক্ত অর্থ নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
নাগেরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ উদ্যোক্তা আমেনা বেগম বেবি বলেন, ‘জন্মনিবন্ধনের জন্য সরকারি ফি ৫০ টাকা। কিন্তু আমরা অতিরিক্ত ১০০ টাকা নিয়ে থাকি। আর কোনো সনদে অতিরিক্ত টাকা নেয়া হয় না।’
Advertisement
কেচুয়ারচর গ্রামের অ্যাডভোকেট শামীম রেজা সবুজ বলেন, ‘আমার এক তলাবিশিষ্ট ভবন। যা এক হাজার স্কয়ার ফিট। ঘরটিতে চার বছরে ৫ হাজার ৬০০ টাকা ট্যাক্স ধরেছে চেয়ারম্যান। আমি দেখেছি, সরকারি গেজেট অনুযায়ী চার বছরে ঘরটিতে আসে মাত্র ৬০০ টাকা। বেশি চাওয়ায় টাকা দেইনি। গেজেট অনুযায়ী দেব।’
একই গ্রামের আবু ইউসুফ মাতব্বর বলেন, ‘চেয়ারম্যান মহসিন অতিরিক্ত হোল্ডিং ট্যাক্স নিচ্ছে। এছাড়া জন্মনিবন্ধন, মৃত্যুসনদ, নাগরিক সনদসহ সব ধরনের কাগজপত্র তুলতে অতিরিক্ত অর্থ নিচ্ছেন তিনি। প্রতিবাদ করায় আমাকে জরিমানা করান চেয়ারম্যান।’
এদিকে নাগেরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. মহসিন সরদার বলেন, ‘হোল্ডিং ট্যাক্স সবার জন্য বাধ্যতামূলক। নিয়ম অনুযায়ী ট্যাক্স নেয়া হচ্ছে। কেউ যদি আমাদের কাছে অভিযোগ করে, তাহলে বিষয়টি দেখব। কিছু লোক আগামীতে এই ইউনিয়নে নির্বাচন করবে তাই ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করছেন। অতিরিক্ত ট্যাক্স নেয়ার বিষয়টি মিথ্যা। তবে জন্মনিবন্ধনে ১০০ টাকা বেশি নেয়া হয়।’
গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আলমগীর হুসাইন মুঠোফোনে বলেন, ‘এই ঘটনায় একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করা হচ্ছে। একটি গণশুনানিও হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
মো. ছগির হোসেন/এআরএ/জিকেএস