অর্থনীতি

তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর ব্যবধান ১৫ শতাংশ চায় বিএসইসি

অতালিকাভুক্ত কোম্পানির সঙ্গে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট কর হারের ব্যবধান ১৫ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

Advertisement

আগামী বাজেটে এ বিষয়ে প্রস্তাব দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম।

মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) বিএসইসির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান। আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি দুবাইতে আয়োজিত রোড শো নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।

বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করতে হলে করপোরেট করের ব্যবধান বাড়াতে হবে। আগে করের ব্যবধান ১০ শতাংশ থাকলেও চলতি বাজেটে সেটি কমিয়ে সাড়ে সাত শতাংশ করা হয়েছে। এতে করে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এ জন্য বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আনতে করপোরেট করের ব্যবধান বাড়াতে হবে।

Advertisement

অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত বলেন, বহুজাতিক কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলে তাদের রুলস-রেগুলেশন মানতে দুই থেকে তিন শতাংশ আরও খরচ বেড়ে যাবে। এতে করে তারা তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। তাছাড়া তাদের টাকার প্রয়োজন হয় না। তাদের অতিরিক্ত অর্থ রয়েছে। যে কারণে তাদের কিছু ইনসেনটিভ দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে তাদের ইনসেনটিভ দেয়ার একমাত্র উপায় কর ছাড়। করপোরেট কর হারের ব্যবধান ১৫ শতাংশ করা হলে তারা তালিকাভুক্ত হওয়ায় ক্ষেত্রে আগ্রহী হবে।

দুবাইতে আয়োজিত রোড শো-র বিষয়ে তিনি বলেন, দুবাইতে আয়োজিত প্রতিটি প্রোগ্রামে ভিন্ন ফ্লেভার থাকবে। সেখানে বাংলাদেশকে পজিটিভভাবে তুলে ধরা হবে। আমরা আশাকরি, এতে বিনিয়োগ আসবে।

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মাহবুব আলম বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারী এবং এনআরবিদের সামনে আমাদের ক্যাপিটাল মার্কেট তুলে ধরতে হবে। রোড শো-র মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগ অনেক বাড়বে এবং ক্যাপিটাল মার্কেটের ডেভলপমেন্ট হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইকোনমিক গ্রোথ খুবই ভালো। দেশের ইকোনমিক গ্রোথের সঙ্গে আমাদের ক্যাপিটাল মার্কেট পিছিয়ে আছে। বিভিন্ন দেশের ইকোনমিক গ্রোথের সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু ক্যাপিটাল মার্কেট ডেভেলপ করে এবং ক্যাপিটাল মার্কেট থেকে মূলত লংটার্ম ফাইন্যান্সিং হয়ে থাকে।

Advertisement

মাহবুব আলম বলেন, ফাইন্যান্সিংয়ের জন্য দেশি বিনিয়োগ বাড়ছে তবে বিদেশি বিনিয়োগটা কম হচ্ছে। কারণ এখানে আমাদের যারা এনআরবিরা আছেন বিদেশে, আপনারা জানেন আমাদের ইদানিং রেমিট্যান্স বেড়েছে করোনার পরেও। আর করোনা পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন দেশে ইকোনমি কিন্তু অনেক ক্রাইসিস আছে। ইনভেস্টমেন্ট বা রিটার্ন ইনভেস্টমেন্ট অনেক দেশে নেগেটিভ হয়ে গেছে। কাজেই ফরেন ইনভেস্টররা বাংলাদেশের প্রতি ইন্টারেস্টেড। বাংলাদেশ কিন্তু করোনার পরে অনেক তাড়াতাড়ি এটাকে রিকভারি করেছে এবং আমরা আবার গ্রোথ স্টেজে চলে গেছি। আমাদের রিটার্ন ইনভেস্টমেন্ট সেটাও কিন্তু ভালো।

বিএসইসির এই নির্বাহী পরিচালক বলেন, আমাদের দেশে যে ইনফ্রাসক্ট্রাচার প্রজেক্ট হচ্ছে, ব্যাপক কাজ চলছে আমাদের এখানে। এই ইনফ্রাসক্ট্রাকচার প্রজেস্ট এবং বিভিন্ন লংটার্ম প্রজেক্ট যেগুলো আছে সেগুলোতে ফাইন্যান্সিংয়ের জন্য আমাদের এখান থেকে এখন, বাংলাদেশে যেটা হয়ে থাকে সেটা মূলত এতদিন ব্যাংকিং সেক্টরের এবং গভর্নমেন্ট সেক্টর কিছু বৈদেশিক সাহায্য নেয়। বেসিক্যালি কিন্তু লোন ওপেন বাজার থেকে এই ব্যয় নির্বাহ করা হয়। এই যে হিউজ ইনফ্রাসক্ট্রাচার ডেভলপমেন্ট এবং জিডিপিতে বরাদ্দ এটা কিন্তু শুধুমাত্র রেভিনিউ বাজেট দিয়ে কিন্তু বেশিদিন চলতে পারে না। পাশাপাশি প্রাইভেট সেক্টর যেভাবে ডেভলপ করছে আমাদের দেশে এই প্রাইভেট সেক্টরে যে ফাইন্যান্সিং সেটা কিন্তু ব্যাংকিং সেক্টর আর সাপ্লাই দিতে পারছে না। ব্যাংকিং সেক্টর সিক হয়ে যাচ্ছে আস্তে আস্তে।

মাহবুব আলম আরও বলেন, ক্যাপিটাল মার্কেটের গ্রোথ গত কয়েক মাসে অনেক ভালো। সুতরাং এখানে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এবং আমাদের যারা এনআরবিরা আছেন তারা শো করছেন। আমাদের কাজ হচ্ছে তাদের এই আগ্রহটা কাজে লাগানো। তাদের সামনে আমাদের ক্যাপিটাল মার্কেটকে তুলে ধরা। আমাদের ক্যাপিটাল মার্কেটে নতুন নতুন প্রোডাক্ট আসছে। এতদিন এই প্রোডাক্টগুলো আমাদের ক্যাপিটাল মার্কেটে ইক্যুইটি বেজ ছিল। বাট এখন আমরা নতুন নতুন প্রোডাক্ট ইনট্রুডিউস করছি। এখানে বন্ড মার্কেট ডেভলপমেন্টের জন্য কাজ চলছে। সুকুকসহ অন্যান্য প্রোডাক্ট নিয়েও কাজ করছে। লংটার্ম ইনভেস্টমেন্টের জন্য আমাদের এই প্রোডাক্টগুলো দরকার। এই প্রোডাক্টগুলোতে ইনভেস্টমেন্ট করার জন্য যে সুযোগ আছে আমরা সেই সব তুলে ধরব বিদেশি এবং এনআরবিদের কাছে। আমরা আশা করছি, এই রোড শো-র মাধ্যমে আমাদের বিদেশি বিনিয়োগ অনেক বাড়বে এবং ক্যাপিটাল মার্কেটের ডেভলমেন্ট হবে।

এমএএস/এমআআর/জেআইএম