ফের টিউলিপ ফুল ফুটল গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া পূর্বখণ্ড গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের বাগানে। দৃষ্টিনন্দন তার এই টিউলিপ বাগান দেখতে ভিড় করছে মানুষ। গত বছরও তিনি বাগানে এ ফুল ফুটিয়ে সারা দেশে সাড়া ফেলে দেন।
Advertisement
ফুল চাষি দেলোয়ার হোসেন তার এ বাগানের নাম দিয়েছেন ‘মৌমিতা ফ্লাওয়ারস’। এ বাগানে জার্বেরা, চায়না গোলাপ ও বিদেশি বিভিন্ন ফুল চাষে সফল হয়েছেন তিনি। সফল ফুল চাষি হিসেবে ২০১৭ সালে বঙ্গবন্ধু কৃষি পদকও পান দেলোয়ার।
এছাড়া দেশে প্রথমবারের মতো ভাইরাসমুক্ত সবজির চারা উৎপাদনে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করে আলোচনায় আসেন তিনি।
জানতে চাইলে ফুল চাষি দেলোয়ার হোসেন জানান, আমাদের দেশে ফুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ চাহিদা মেটাতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ফুল আমদানি করা হয়। ফুল চাষে জড়িয়ে আছে কৃষি অর্থনীতির একটি অংশ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ফুল চাষে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠলেও আমরা পিছিয়ে। অর্থনীতি ও চাহিদার কথা চিন্তা করে বিভিন্ন বিদেশি ফুল দিয়ে আমার স্বপ্নযাত্রা শুরু হয়। নানা প্রতিবন্ধকতার পরও থেমে থাকিনি। জার্বেরা, চায়না গোলাপের পর টিউলিপ ফুল ফুটিয়ে গত বছর পেয়েছিলাম নতুন সফলতা।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, পৃথিবীজুড়ে বিভিন্ন প্রজাতির টিউলিপ থাকলেও গত বছরের মতো এবারও নেদারল্যান্ডস থেকে গত ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এক প্রজাতির চার রঙের বিশ হাজার টিউলিপ বাল্ব এনে তিনটি বাগানে রোপণ করি।
গাজীপুরে সফল হওয়ার পর দেশের অন্যান্য স্থানে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য চুয়াডাঙ্গায় তিন হাজার ও ঠাকুরগাঁওয়ে সাড়ে তিন হাজার বাল্ব রোপন করা হয়। বাকি সাড়ে বাকি বাল্ব তার গাজীপুরের শ্রীপুরের ‘মৌমিতা ফ্লাওয়ার’ বাগানে রোপন করা হয়। এ কয়েকদিন পরিচর্যা শেষে চলতি সপ্তাহর প্রথম থেকেই থেকেই এ বাগানে ফুল ফুটতে শুরু করে। যদিও অন্য দুটি স্থানে এখনও ফুল ফোটা শুরু হয়নি। আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে ২০ থেকে ২২ দিনেই ফুটে টিউলিপ ফুল বলে জানান তিনি।
দেলোয়ার আরও জানান, টিউলিপ ফুল ফুটতে সাধারণত ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার প্রয়োজন হয় বলে শীতপ্রধান এলাকাগুলোর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য চুয়াডাঙ্গা ও ঠাকুরগাঁওয়ে পরীক্ষামূলক বাগান করেছেন। গত বছর টিউলিপ ফুল ফুটিয়ে সফল হওয়ার পর এ মৌসুমে ব্যাপকভাবে টিউলিপ বাগান করার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু করোনার কারণে সেটা আর হয়ে উঠেনি। একসময়ে টিউলিপময় ভালবাসার ছোঁয়া তিনি সারাদেশেই ছড়িয়ে দিতে চান তিনি।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের ফুল গবেষক ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ফারজানা নাসরিন খান বলেন, টিউলিপ সাধারণত শীতপ্রধান অঞ্চলের ফুল। আমাদের দেশে শীত মৌসুমে অনেকেই বাসাবাড়িতে শখের বশে টবে টিউলিপ ফুলের চাষ করেন। তবে ফুল পাওয়া খুবই অস্বাভাবিক।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, দেলোয়ারের বাগানে টিউলিপ ফুল ফোটায় নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে। দেশে বাণিজ্যিকভাবে এখনও এই ফুল চাষ শুরু হয়নি। তবে শীত মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে টিউলিপ ফুলের চাষ করা যায়। বিশেষ করে উত্তরের জেলাগুলোতে এই ফুল চাষ উপযোগী। দেশের কৃষকদের মনে নতুন করে টিউলিপ ফুল চাষের স্বপ্ন ছড়িয়ে দিয়েছেন ফুল চাষি দেলোয়ার।
গাজীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মাহবুব আলম বলেন, বর্তমানে উচ্চমূল্যে টিউলিপ ফুল আমদানি করে আমাদের দেশের চাহিদা মেটাতে হয়। সফল ফুল চাষি দেলোয়ারের বাগানে গত বছরের মতো এবারও টিউলিপ ফুল ফোটায় নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। টিউলিপ ফুল চাষ সম্প্রসারণের মাধ্যমে কৃষি অর্থনীতিতে দারুণ ছোঁয়া লাগবে।
শিহাব খান/আরএইচ/এএসএম