ফিচার

পুষ্টিচাল আসলে কী, কেন খাবেন?

স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে দেশের দরিদ্র মানুষকে পুষ্টিচাল দিচ্ছে সরকার। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, পুষ্টিচাল আসলে কী? কেনই বা এ চাল খাবেন? তাই জেনে রাখা ভালো, সাধারণ চালের সঙ্গে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি১, ভিটামিন-বি১২, ভিটামিন-বি৯ (ফলিক অ্যাসিড), আয়রন এবং জিঙ্ক উপাদান সমৃদ্ধ দানাদার চাল বা কার্নেল উৎপাদন করা হয়।

Advertisement

পরে সাধারণ চালের সঙ্গে ১০০:১ অনুপাতে কার্নেল মিশিয়ে পুষ্টিসমৃদ্ধ চাল (ফর্টিফায়েড রাইস) প্রস্তুত করা হয়। প্রতি ১০০টি সাধারণ চালের সঙ্গে একটি পুষ্টিচাল অর্থাৎ ১০০ কেজিতে এক কেজি হারে পুষ্টিচাল মেশানো হয়। এ মিশ্রণ সয়ংক্রিয়ভাবেই হয়ে থাকে। এ চালের মাধ্যমে পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয়, কিন্তু চালের স্বাদের কোনো পরিবর্তন হয় না।

যেহেতু এ চালের সঙ্গে আরও ৬ ধরনের পুষ্টি মেশানো হয়, এজন্যই একে পুষ্টিচাল বলা হয়। এ চালে শুধু কার্বোহাইড্রেট বা প্রোটিনই থাকে না, আছে আরও পুষ্টিগুণ। সবগুলো উপাদানই শরীরের জন্য খুব উপকারী। অন্যদিকে সাদা চালে এতো বেশি পুষ্টিগুণ থাকে না।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাইস ফোর্টিফিকেশন (চাল সংশোধন) করা হয়। যার ফলে উৎপাদিত হয় পুষ্টিচাল। এ চালে ভিটামিন বা খনিজ উপাদান ভরপুর। এ কারণেই অপুষ্টির শিকার বা স্বল্প আয়ের দেশগুলো পুষ্টিচাল বিতরণ করে থাকে খুব কম মূল্যে।

Advertisement

যেভাবে তৈরি হয় পুষ্টিচাল: সবচেয়ে উন্নত ও পুষ্টিমানসম্পন্ন ধান ফোর্টিফিকেশনের (সংশোধন) মাধ্যমেই তৈরি হয় পুষ্টিচাল। এরপর এ চালের মধ্যে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ, অ্যামিনো অ্যাসিড ও অন্যান্য পুষ্টির সংযোজন ঘটানো হয়। ধান কাটার পর সেগুলো উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পরিষ্কার করে চাল তৈরি হয়।

এরপর চালগুলোকে ভালোভাবে ধুয়ে ও ভিজিয়ে রেখে জ্বাল দেওয়া হয়। এতে চালের গায়ে লেগে থাকা ময়লা-আবর্জনা দূর হয়, সঙ্গে ব্যাকটেরিয়া থাকলেও চলে যায়। এরপর চালগুলো শুকানো হয়। এ চালের রং কিন্তু কখনোই ধবধবে সাদা হয় না। হালকা হলুদ রঙের হয়ে থাকে। তবে ব্রাউন রাইসের মতো খয়েরি হয় না।

পুষ্টিচাল কেমন: ফোর্টিফাইড চালে সাধারণ চালের তুলনায় বেশি মাত্রায় থায়ামিন ও নিয়াসিন আছে। এ ছাড়াও ফাইবার ও প্রোটিনের মাত্রাও অনেক। পাশাপাশি ম্যাগনেশিয়াম, দস্তা, আয়রন, ফোলেট ইত্যাদি পুষ্টি উপাদান আছে।

এ চাল নিয়মিত খেলে শরীরের দীর্ঘমেয়াদী বিভিন্ন রোগ থেকেও মুক্তি মেলে। যেমন ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগের ঝুঁকি কমে। এ চালে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আছে। যা শরীরে ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধি থেকেও মুক্তি দিতে পারে।

Advertisement

৯০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এ চাল জনস্বাস্থ্যের উন্নতিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। কোস্টারিকা, নিকারাগুয়া, পানামা, পাপুয়া নিউগিনি, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ এবং ফিলিপাইনে রাইস ফোর্টিফিকেশন এখন বাধ্যতামূলক।

২০০১ সালে কোস্টারিকার সব চালে ভিটামিন বি (থায়ামিন), ভিটামিন বি (নায়াসিন), ভিটামিন ই, ফলিক অ্যাসিড, সেলেনিয়াম ও দস্তা মেশানো হয়। এরপর থেকে সেখানকার জনগণের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটেছে। অ্যানিমিয়ার সমস্যা থেকেও তারা মুক্তি পেয়েছেন।

ডাব্লিউএইচও/জেএমএস/এসইউ/জেআইএম