কুষ্টিয়ায় ময়লা-অাবর্জনার স্তুপ থেকে উদ্ধার হওয়া সেই নবজাতকের অবস্থা সংকটাপন্ন। শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে তার চরম কষ্ট হচ্ছে। জীবন বাঁচাতে শিশুটির দত্তক প্রত্যাশী দম্পতি আল আমিন ও সুমি বেগম তাকে ঢাকার শ্যামলীস্থ শিশু হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। আর সেখানে তাকে লাইভ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। গত শনিবার রাতে কোনো এক সময়ে ফুটফুটে এ নবজাতকটির জন্ম হয়। কুষ্টিয়া শহরতলীর বিসিক শিল্পনগরী এলাকার কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের পাশের ময়লা আবর্জনার স্তুপের মাঝে নবজাতকটিকে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় কোনো এক পাষণ্ড। শিয়াল আর কুকুরের অবাধ বিচরণ থাকলেও বিধাতার অপার কৃপায় সেখানে অক্ষত ছিল নবজাতক শিশুটি। রোববার সকালে রাস্তার পাশে কান্না শুনতে পেয়ে স্থানীয় হোটেলের এক নারী শ্রমিক নবজাতকটিকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। রাস্তার ময়লা-আবর্জনার পাশে পড়ে থাকা এই শিশুটিকে উদ্ধারের পর কুষ্টিয়া জুড়ে হৈ চৈ পড়ে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন শিশুটির সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। এক আত্মীয়ের মাধ্যমে নবজাতক শিশু উদ্ধারের খবর পেয়ে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ছুটে যান ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোতে কর্মরত কুষ্টিয়া শহরতলীর কুমারগাড়া এলাকার আলামিন মিয়া ও তার স্ত্রী সুমী বেগম। নিঃসন্তান এই দম্পতি পিতা-মাতা হওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করে নবজাতক শিশুটির দায়িত্বগ্রহণ করার প্রস্তাব দেন জেলা প্রশাসনের কাছে। জেলা প্রশাসনের অনুমতিক্রমে তারা হাসপাতাল থেকে শিশুটিকে কুষ্টিয়ার একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করেন। সেখানে শিশুটির শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হওয়ায় তারা উন্নত চিকিৎসার জন্য সোমবার বিকেলে তাকে ঢাকায় নিয়ে যান। রাত ১২টার দিকে ঢাকার শ্যামলীস্থ শিশু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় নবজাতক শিশুটিকে। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দ্রুত লাইভ সাপোর্টে রাখার পরামর্শ দেন। কিন্তু সে সময় শিশু হাসপাতালে লাইভ সাপোর্ট খালি না থাকায় আল আমিন ও সুমি দম্পতি তাকে মোহাম্মদপুর কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করেন। শিশুটির দত্তক প্রত্যাশী আল আমিন মঙ্গলবার রাতে মুঠোফোনে জাগো নিউজকে জানান, সন্ধ্যা ৭টার দিকে কেয়ার হাসপাতাল থেকে নবজাতককে শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে তাকে লাইভ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। প্রফেসর রহুল আমিনের অধীনে শিশুটি চিকিৎসাধীন রয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শিশুটির অবস্থা শংকটাপন্ন। বাঁচবে কিনা জানি না ? শিশু হাসপাতালের চিকিৎসকরা শিশুটিকে রক্ত দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। রাত ৮টায় মুঠোফোনে আল আমিন জানান, তিনি রক্ত যোগাড় করতে ব্যস্ত রয়েছেন। শিশুটি যাতে সুস্থ হয়ে তাদের কোলে ফিরে আসতে পারে সেজন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। নবজাতক এই শিশুটির নাম রাখা হয়েছে ছামীম হোসেন। আল আমিন আরো জানান, স্ত্রী সুমি বেগম তার সঙ্গে ঢাকায় রয়েছেন। তিনি মায়ের মতো অপার মমতায় শিশুটিকে দেখভাল করছেন। বিয়ের ৯ বছর পার হলেও আল আমিন মিয়া ও সুমি বেগম দম্পত্তির সংসারে কোনো সন্তান আসেনি। সুমি বেগম জানান, দীর্ঘ ৯ বছর বিয়ে হলেও আমাদের সংসারে কোনো সন্তান নেই। খবর পাওয়ার পর এই নবজাতককে নিজের সন্তান মনে করে শিশুটির চিকিৎসা ও দেখভাল করছি। কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জমির উদ্দিন জানান, জন্মের পর শিশুটি গর্ভধারিণী মা ও আত্মীয়-স্বজনের পরিচর্যা না পাওয়ায় শরীরে নানা জটিলতা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে শ্বাস কষ্ট হচ্ছে। শিশুটি উন্নত চিকিৎসা এবং নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা গেলে সম্পূর্ণ সুস্থ হতে পারে।নবজাতক শিশুটি উদ্ধারের ঘটনায় কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি সাধারণ ডাইরী করা হয়েছে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন জানান, নবজাতকটি সম্পূর্ণ সুস্থ হলে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আল আমিন ও সুমি দম্পত্তির কাছে হস্তান্তর করা হবে। আল-মামুন সাগর/এআরএ/আরআইপি
Advertisement