শিক্ষা

অটোপাসের উচ্ছ্বাস ঘরবন্দি, শতভাগ পাস সব বোর্ডে

জেএসসি-জেডিসি ও এসএসসি-সমমান পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে এ বছরের এইচএসসি-সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার ইতিহাসের প্রথম শতভাগ পরীক্ষার্থী পাস করেছেন। গত পরীক্ষায় পাসের হার ছিল ৭৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

Advertisement

তবে এবার অটোপাস হওয়ায় জিপিএ-৫ সাড়ে তিন গুণ বেড়ে ১ লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ এ দাঁড়িয়েছে। জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে ছেলেদের চাইতে ৪ হাজার ৮৬৯ জন মেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। গত পরীক্ষায় মোট জিপিএ-৫ ছিল ৪৭ হাজার ২৮৬ জন।

শনিবার (৩০ জানুয়ারি) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এইচএসসির ফল প্রকাশের পর পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে এসব তথ্য জানা গেছে। সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি ফলাফল প্রকাশ করেন। এরপর শিক্ষামন্ত্রী ফলাফল নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, এইচএসসি-সমমান পরীক্ষা নেয়ার জন্য আমরা অনেকদিন অপেক্ষা করার পরও করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় সকলকে পাস দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আমাদের কাছে আর কোনো রাস্তা না থাকায় এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। তবে আমাদের পরীক্ষার্থীরা ক্লাসে তাদের সিলেবাস শেষ করেছে। পরীক্ষা দেয়ার জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুত নিতে পেরেছে। এ কারণে তাদের পরীক্ষা ছাড়া পাসের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’

Advertisement

তিনি বলেন, ‘আশা করি শিক্ষার্থীরা প্রাপ্ত ফল পেয়ে সন্তুষ্ট থাকবে। তারপরও যদি কেউ নিজের ফলে অসন্তোস প্রকাশ করে, তারা রিভিও করার সুযোগ পাবে। দ্রুত শিক্ষা বোর্ডগুলো থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করা হবে।’

এএইচএসসি-সমমানের ফলের পরিসংখ্যান বলছে, জেএসসি এবং এসএসসিতে জিপিএ-৫ না পেয়ে ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৮ হাজার ৫৭০ জন। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালে এই সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ১৫৭ জন।

অপরদিকে, জেএসসি ও এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে ২০১৯ সালের এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাননি এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৪৫ হাজার ৮৬৫ জন। ২০১৮ সালে এই সংখ্যা ছিল ৫২ হাজার ৬৩৪ জন।

বেড়েছে জিপিএ-৫

Advertisement

গত বছরের চাইতে এবার সাড়ে তিনগুণ জিপিএ-৫ বেড়েছে। এবার ১ লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন। তার মধ্যে ৮৩ হাজার ৩৩৮ জন মেয়ে আর ছেলেদের মধ্যে ৭৮ হাজার ৪৬৯ জন রয়েছেন। জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে ছেলেদের চাইতে ৪ হাজার ৮৬৯ জন মেয়ে এগিয়ে রয়েছেন।

তবে জেএসসি-এসএসসির ভিত্তিতে এইচএসসির ফলাফল নির্ণয় করা হলেও দুই স্তরে জিপিএ-৫ পেয়েও ৩৯৬ জন জিপিএ-৫ প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। দুই স্তরে পিছিয়ে থাকলেও ১৭ হাজার ৪৩ জন এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছেন।

এগিয়ে মেয়েরা

এবার জিপিএ-৫ এ ছেলেদের চাইতে মেয়েরা এগিয়ে রয়েছেন। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৮৩ হাজার ৩৩৮ জন মেয়ে, আর ছেলেদের মধ্যে ৭৮ হাজার ৪৬৯ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন। সে হিসাবে ১২ দশমিক ৬৩ শতাংশ মেয়ে আর ১১ দশমিক ১০ শতাংশ ছেলে পরীক্ষা ছাড়া জিপিএ-৫ পেয়েছে।

সাধারণ আট বোর্ডের ফল

এ বছর সাধারণ নয়টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ৪ হাজার ৫৩৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মোট ১১ লাখ ৪৫ হাজার ৩২৯ জন শিক্ষার্থীর এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেয়ার কথা ছিল। পরীক্ষা না হওয়ায় পাস করেছেন তাদের সবাই। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬১৪ হাজার। অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের গড়ে ১৩ দশমিক ৪১ শতাংশ জিপিএ-৫ পেয়েছেন।

সাধারণ শিক্ষা বোর্ডগুলোর মধ্যে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির মধ্যে ঢাকা বোর্ড শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। এ বোর্ডে ৫৭ হাজার ৯২৬ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন। এ ক্ষেত্রে সিলেট বোর্ডে সর্বনিম্ন হিসাবে ৪ হাজার ২৪২ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন। এছাড়াও মাদরাসা বোর্ডে ৪ হাজার ৪৮ জন এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে ৪ হাজার ১৪৫ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন।

মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের ফল

মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ২ হাজার ৬৮৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৮৮ হাজার ৩০২ জন পরীক্ষার্থী ছিলেন। শতভাগ পাস হলেও এবার মাদরাসা বোর্ডে জিপিএ-৫ কমেছে। এবার ৪ হাজার ৪৮ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ২ হাজার ২৪৩ জন। সে হিসাবে এবার ১ হাজার ৮০৫ জন কমে গেছে।

কারিগরি শিক্ষা বোর্ড

কারিগরি বোর্ডের অধীনে ১ হাজার ৮৪০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১ লাখ ৩৩ হাজার ৭৪৬ জন পরীক্ষার্থী ছিলেন। শতভাগ পাসে এবার জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৪ হাজার ১৪৫ জন, গত বছর ৩ হাজার ২৩৬ জনের। এ বোর্ডেও জিপিএ-৫ কমেছে ৯০৯ জনের।

বিদেশি ৮টি কেন্দ্রের ফল

এইচএসসি পরীক্ষায় বিদেশ কেন্দ্রে ২১৫ জন পরীক্ষার্থীর সবাই পাস করেছেন। বিদেশে আটটি কেন্দ্রে পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৬২ জন। বিদেশ কেন্দ্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও আটটি। গত বছর বিদেশ কেন্দ্রে পাসের হার ছিল ৯৪ দশমিক ০৭ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ২৬ জন পরীক্ষার্থী।

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারির কারণে এবার পরীক্ষা ছাড়াই এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এবার নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, কারিগরি ও মাদরাসা বোর্ডের প্রকাশিত ফল অনুযায়ী এইচএসসিতে সবাই পাস করেছেন। গত এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় গড় পাসের হার ছিল ৭৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ।

পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের ১ এপ্রিল থেকে। কিন্তু করোনার প্রকোপ বাড়তে শুরু করলে ১৮ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে অটোপাসের ঘোষণা দেয় সরকার।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘জেএসসি-জেডিসি উপর ২৫ শতাংশ আর এসএসসি-সমমানের উপর ৭৫ শতাংশ হারে এইচএসসি ফল নির্ণয় করা হয়েছে। এতে বিষয় ভিত্তিক গড় নম্বরে কেউ কেউ পিছিয়ে গেছে, কেউ এগিয়ে রয়েছে। কেউ কেউ আগের বছরে ব্যবহারিক বিষয়ে বেশি নম্বর পেয়ে এগিলে গেলেও এবার তার উল্টো হয়েছে।’

এমএইচএম/ইএ/এমএস