মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, জার্মানিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত
Advertisement
তদানীন্তন পাকিস্তান আমলে পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) প্রধান অর্থকরী ফসল ছিল পাট। পাট ও পাটজাত পণ্যই ছিল পাকিস্তানের প্রধান রফতানি পণ্য। দেশের জাতীয় আয়ের ৬৫ শতাংশই আসত কৃষি খাত থেকে। দেশীয় ব্যবহার ও রফতানিতে চা ও চামড়ার উপস্থিতি এবং অবস্থান ক্রমে বাড়তে থাকে।
এ দেশ মুসলমান জনসংখ্যা অধ্যুষিত হওয়ায় পবিত্র ঈদুল আজহার সময় প্রচুর গরু, ছাগল প্রভৃতি পশু কোরবানি হয়। এছাড়া সারা বছরই এসব পশুর মাংস ক্রয়-বিক্রয় হয়ে থাকে। ফলে চামড়ার উৎপাদন ও সরবরাহ বাংলাদেশে বহুপূর্ব থেকে ক্রমে বাড়ছে। ব্যবসা হিসেবে এ দেশে চামড়া খাতের যাত্রা শুরু হয়েছে গত শতাব্দীর চল্লিশের দশকে।
১৯৪০ সালে ব্যবসায়ী রণদা প্রসাদ সাহা (আরপি সাহা) নারায়ণগঞ্জের কাছে সর্বপ্রথম একটি ট্যানারি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫১ সালের অক্টোবরে তত্কালীন সরকার ঘোষিত এক গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে ঢাকার হাজারীবাগে ট্যানারি শিল্প স্থাপিত হয়। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে এ খাত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।
Advertisement
১৯৮০-এর দশক থেকে বাংলাদেশে রফতানি পণ্য হিসেবে তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্ভব ও প্রসার হতে থাকে। বর্তমানে দেশের রফতানি আয়ের ৮৫ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। ১৯৯০ সাল পরবর্তী সময়ে ওয়েট ব্লু উৎপাদনের সীমিত পরিসর পেরিয়ে ক্রাসড ও ফিনিশড লেদার, জুতা, ব্যাগ ও অন্যান্য চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে চামড়া খাতের রফতানিতে পণ্য বৈচিত্র্য এসেছে।
বাংলাদেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য বিদেশেও পরিচিতি পায় এবং দ্বিতীয় বৃহৎ রফতানি পণ্য হিসেবে পরিগণিত হয়। ২০১৩-১৪ সালে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য থেকে আয় হয় ১ হাজার ২৫৮ দশমিক ৮২ মিলিয়ন ডলার। পরবর্তী তিন অর্থবছরও এ খাতের রফতানি আয় ছিল যথাক্রমে ১ হাজার ১৩০ মিলিয়ন ডলার, ১ হাজার ১৬১ মিলিয়ন ডলার ও ১ হাজার ২৩৪ মিলিয়ন ডলার।
২০১৮-১৯ অর্থবছরেও এ খাতের রফতানি আয় ছিল ১ হাজার ১৯ দশমিক ৭৮ মিলিয়ন ডলার। তবে বাংলাদেশের চামড়া প্রক্রিয়াকরণ ও পণ্য উৎপাদনে পরিবেশসম্মত কমপ্লায়েন্স না থাকায় আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা কখনো আশানুরূপ হয়নি। ২০১৭ সালের পর থেকে চামড়া খাতের চলমান অগ্রযাত্রায় ভাটা পড়তে থাকে।
বিশ্বব্যাপী নভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে রফতানি আয় কমে গিয়ে ৭৯৭ দশমিক ৬১ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়। রফতানি আয়ের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থান হারিয়ে চামড়া খাত তৃতীয় স্থানে নেমে এসেছে।
Advertisement
চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য দেশীয় কাঁচামালভিত্তিক একটি রফতানিমুখী শিল্প। জাতীয় আয়ের প্রবৃদ্ধি, রফতানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয়, কর্মসংস্থান এবং মূল্য সংযোজনের নিরিখে এটি একটি অপার সম্ভাবনাময় খাত। একটি আধুনিক কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার নির্মাণসহ পরিবেশবান্ধব চামড়া শিল্পনগরী গড়ে তোলার লক্ষ্যে শিল্প মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) মাধ্যমে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে।
সাভারে অবস্থিত এ শিল্পনগরীর জন্য ২০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। সিইটিপিসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ ও রাস্তাঘাট তৈরি করে এ শিল্পনগরীতে হাজারীবাগসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ট্যানারিগুলো একত্র করে একটি পরিবেশসম্মত আধুনিক চামড়া শিল্প গড়ার জন্য সরকার কর্তৃক ২০০৩-০৫ সাল পর্যন্ত ১৭৫ দশমিক ৭৫ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।
এ শিল্পনগরীতে ট্যানারি ও কারখানা স্থাপনের জন্য ২০৫টি প্লট তৈরি করে ১৫৫টি শিল্প ইউনিটকে বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে ট্যানারির মালিকদের সিইটিপি নির্মাণের কথা থাকলেও পরবর্তীতে সরকারের অর্থায়নে সিইটিপি স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয় এবং প্রকল্প ব্যয় সংশোধনপূর্বক ৫৪৫ দশমিক ৩৬ কোটি টাকা ধার্য করে ২০১০ সাল পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়।
সিইটিপি ও ডাম্পিং ইয়ার্ড নির্মাণসহ আরো কিছু টেকনিক্যাল কাজের জন্য আহ্বানকৃত দরপত্র ও হাইকোর্টের আদেশ মোতাবেক একটি চীনা কোম্পানি কাজ পায়। ২০১২ সালের মার্চে এ কোম্পানিকে ২৪ মাস সময় দিয়ে কার্যাদেশ দেয়া হয়। আগস্ট, ২০১৩ সালে সিইটিপিকে আরো যুগোপযোগী করার জন্য সংশোধনীর মাধ্যমে তিনটি কম্পোনেন্ট যথা সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, স্লুয়েজ পাওয়ার জেনারেশন সিস্টেম ও সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম যুক্ত করে ট্যানারি মালিকদের ২৫০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণসহ মোট প্রকল্প ব্যয় ১ হাজার ৭৮ দশমিক ৭১ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়।
সিইটিপি নির্মাণকাজের সুপারভিশন ও মনিটরিংয়ের জন্য বুয়েটের বিআরটিসিকে নিযুক্ত করা হয়। প্রকল্পের চতুর্থ সংশোধনীতে এসপিজিএস কম্পোনেন্টটি বাদ দিয়ে প্রাক্কলিত ব্যয় ১ হাজার ১৫ দশমিক ৫৬ কোটি টাকা এবং সময় জুন, ২০২১ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়।
কিন্তু নিয়োজিত চীনা ঠিকাদার কোম্পানিটি সময়মতো কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি। নানা অজুহাতে এ কোম্পানি সময় বৃদ্ধি করতে থাকে। সিইটিপির মাধ্যমে পানি, লবণ, স্লাজ, কেমিক্যালস কোনোটিই ঠিকমতো পরিশোধন হচ্ছে না।
কোম্পানিটি ছয় মাস-এক বছর করে ১০ বার সময় বৃদ্ধি করেছে। ১১তম সময় বৃদ্ধির স্বাক্ষরিত এমওইউয়ের মাধ্যমে ৩১ ডিসেম্বর, ২০২০-এর মধ্যে কাজ শেষ করার চুক্তি হয়। বলতে গেলে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ কোম্পানিটির কাছে জিম্মি হয়ে পড়ে। সম্প্রতি কোম্পানিটি আরো সময় চেয়ে আবেদন করেছে।
এরই মধ্যে সরকার ও হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১৭ সালের এপ্রিলে হাজারীবাগ থেকে সব ট্যানারি সাভারস্থ শিল্পনগরীতে স্থানান্তর করা হয়। সিইটিপির বিভিন্ন কম্পোনেন্টের কাজ সমাপ্ত হওয়ার আগেই ১৩০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান তাদের উৎপাদন শুরু করে। আগে হাজারীবাগের বর্জ্য ও দূষিত কেমিক্যালস বুড়িগঙ্গা নদীর পানিতে মিশ্রিত হতো, এখন সাভারের ট্যানারি এস্টেটের দূষণ ধলেশ্বরী নদীর পানিতে মিশে যাচ্ছে।
এদিকে পরিবেশ অধিদফতর ট্যানারি শিল্পনগর কর্তৃপক্ষকে মোটা অংকের জরিমানা করেছে। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে সিইটিপি, রাস্তাঘাট, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি কাজ করে এবং ক্ষতিগ্রস্ত ট্যানারি মালিকদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে পরিবেশসম্মত ট্যানারি শিল্পনগরীতে সব ট্যানারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান একত্রিত করার একটি মহৎ প্রচেষ্টা চীনা ঠিকাদার কোম্পানিটির অদক্ষতা ও গাফিলতির কারণে এখনো সফলতার মুখ দেখতে পারেনি।
বাংলাদেশের চামড়া ও চামড়াজাত সামগ্রী রফতানিকারকরা সীমিত স্কেলে রফতানি চালিয়ে গেলেও এলডব্লিউজি সনদের অভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। বাংলাদেশে উন্নত মানের চামড়া থাকা সত্ত্বেও কমপ্লায়েন্সের শর্ত পূরণের জন্য কিছু বড় উদ্যোক্তা বিদেশ থেকে চামড়া আমদানি করে চামড়ার জুতা, ব্যাগ ও অন্যান্য পণ্য তৈরি করে রফতানি করে থাকে।
কিছু বড় উদ্যোক্তা বাংলাদেশে তৈরি উন্নত মানের জুতা, ব্যাগ প্রভৃতি আমদানি করলেও ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ লিখতে না দিয়ে ‘কান্ট্রি অব অরিজিন’ গোপন রাখে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক ‘লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ (এলডব্লিউজি)’ চামড়াজাত দ্রব্য পরিবেশসম্মত উপায়ে উৎপাদিত হয় কিনা, এ ব্যাপারে সার্টিফিকেট দিয়ে থাকে। বাংলাদেশের ট্যানারি ও চামড়াজাত পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করে সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করার যোগ্যতা অর্জন করে না।
হাজারীবাগ থেকে উচ্ছেদকৃত ছোট ছোট ট্যানারি মালিক সাভারস্থ নিজস্ব প্লটে এখনো অর্থাভাবে ব্যবসা শুরু করতে পারেননি। এ খাতের অনেক উদ্যোক্তাই আগে থেকে বিভিন্ন ব্যাংকে ঋণখেলাপি। সে কারণে তারা নতুন ঋণ সংগ্রহ করতে পারেননি। প্রকল্প এলাকায় কারখানা ভবন নির্মাণ, নতুন যন্ত্রপাতি আমদানি, পুরনো যন্ত্রপাতি স্থানান্তর ইত্যাদি কাজে উদ্যোক্তাদের বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করতে হয়।
দীর্ঘদিন কারখানা বন্ধ থাকা, আয় না থাকা সত্ত্বেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ, বিদ্যমান ঋণের কিস্তি বা সুদ পরিশোধের বাধ্যবাধকতার কারণে অনেক উদ্যোক্তা আর্থিক সংকটে নিপতিত হয়েছেন।
হাজারীবাগের পরিত্যক্ত জমি রাজউক ‘রেড জোন’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। সেজন্য ট্যানারি মালিকরা তাদের জমি বা স্থাপনা বিক্রয় কিংবা বিকল্প কোনো কাজে ব্যবহার করতে পারছেন না। সেটি করতে পারলে তাদের অর্থকষ্ট কিছুটা লাঘব হতে পারত। অন্যদিকে রাজউক এ জমি অধিগ্রহণও করার ইচ্ছা পোষণ করছে না।
সাভারস্থ নতুন ট্যানারি এস্টেটে বরাদ্দকৃত প্লট বা জমি এখনো বিসিক লিজ দলিল করে দেয়নি। এর কারণ অনেকে জমির মূল্যের সব কিস্তি এখনো পরিশোধ করতে পারেনি। বিসিককে মূল্য পরিশোধ করার পর আবার সুদও পরিশোধ করতে হবে। লিজ দলিল সম্পন্ন না হওয়ায় এ জমি বন্ধক রেখে ব্যাংকঋণ প্রদানে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে।
তবে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক চামড়া শিল্প উদ্যোক্তাদের খেলাপি ঋণ আগামী দশ বছরের জন্য পুনঃতফসিলীকরণসহ আরো কিছু সুযোগ-সুবিধা বা প্রণোদনা ঘোষণা করেছে, যা তাদের পুনর্বাসনে সহায়ক হতে পারে।
বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পের যে উত্থান ও সম্প্রসারণ হয়েছে, তার পেছনে সরকার প্রদত্ত সহজ শর্তে ঋণ, শুল্ক ও কর অব্যাহতি, ক্যাশ প্রণোদনাসহ পরিবহন ও বন্দরে সর্বপ্রকার লজিস্টিক সুবিধা যথেষ্ট সহায়ক হয়েছে। ২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশে উত্তীর্ণ হবে।
তখন ইউরোপীয় বাজারে তৈরি পোশাক রফতানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা না-ও থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে গড়ে ৮ দশমিক ৭ শতাংশ হারে শুল্ক দিয়ে ইউরোপের বাজারে পণ্য রফতানি করতে হবে। তৈরি পোশাক শিল্প বিপর্যয়ে পড়ার আগেই বাংলাদেশকে ইউরোপের বাজারে জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে হবে। বিকল্প হিসেবে অন্য কোনো খাতকে রফতানিতে যোগ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। এ সম্ভাবনাময় খাতটি হলো চামড়া শিল্প খাত।
বর্তমান কভিড-১৯ মহামারির কারণেও চামড়া শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিশ্বব্যাপী অব্যাহত লকডাউনের কারণে চামড়া ও চামড়াজাত দ্রব্যের ক্রয়-বিক্রয় কমে গেছে। কারণ চামড়াজাত পণ্য কোনো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির আওতায় পড়ে না।
এ শিল্পে নেতিবাচক প্রভাবের ফলে উদ্যোক্তারা দারুণ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। মহামারির কারণে চামড়া প্রক্রিয়াজাত বন্ধ থাকায় প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। চলমান পরিস্থিতিতে আরো বিপুলসংখ্যক শ্রমিক বেকার হওয়ার পথে।
সাভার চামড়া শিল্পনগরীর সিইটিপি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এখনো পরিবেশসম্মতভাবে সম্পন্ন না হওয়ায় বেসরকারি মালিকদের পরিচালনার জন্য গঠিত কমিটির কাছে ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পুরোপুরি হস্তান্তর করা যাচ্ছে না। অন্যদিকে প্রায় বিশ বছর ধরে চলমান প্রকল্পটি জুন, ২০২১-এরপর আর বর্ধিত করা সমীচীন কিনা, তাও ভেবে দেখা প্রয়োজন।
ট্যানারি ও চামড়াজাত দ্রব্যের প্রস্তুতকারী শিল্প মালিকদের মূল চ্যালেঞ্জ হলো কমপ্লায়েন্স। ইএসকিউ (এনভায়রনমেন্ট, সোশ্যাল অ্যান্ড কোয়ালিটি), আইএসও এবং অন্যান্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করা সম্ভব হলেই আন্তর্জাতিক ক্রেতা আকর্ষণ হবে এবং এলডব্লিউজি সনদ অর্জনে সহায়ক হবে।
বর্ণিত প্রেক্ষাপটে চামড়া শিল্পের বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য নিম্নবর্ণিত কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয় বিবেচনা করা যেতে পারে।
১. অদক্ষ ও ব্যর্থ চীনা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে আর সময় বর্ধিত না করে চীন সরকারের কাছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের এবং কোম্পানিটিকে কালো তালিকাভুক্ত করার পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে।
২. বেসরকারি পরিচালনা কমিটির কাছে সিইটিপিসহ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা হস্তান্তরের আগে একটি পেশাদারি অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ কোম্পানির মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ সমীক্ষা প্রয়োজন। এ কাজ ইউরোপীয় বিশেষায়িত কোম্পানির মাধ্যমে করা যেতে পারে। প্রয়োজনে জার্মান জিআইজেড বা ইইউর সহায়তা চাওয়া যেতে পারে।
এরূপ সহায়তার অবর্তমানে সরকারি প্রণোদনা প্রদান করে কাজটি সম্পন্ন করা যায়। প্রস্তাবিত সমীক্ষার পর যেখানে যা প্রয়োজন, তা-ই করে সিইটিপির সফল কমিশনিং এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্পন্ন করা যেতে পারে। এ কাজে কয়েক বছর সময় লাগতে পারে। ইত্যবসরে উদ্যোক্তাদের ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে বিশেষ ঋণের ব্যবস্থা করা যায়।
৩. প্লটের জমির মূল্য পরিশোধ হলে সুদ গ্রহণ ছাড়া বিসিক লিজ দলিল সম্পাদন করে দিতে পারে, যাতে এ জমি ঋণ গ্রহণের সময় ব্যাংকে বন্ধক রাখতে পারেন মালিকরা।
৪. হাজারীবাগের জমি হুকুম দখল করে সরকার পরিকল্পিত নগরায়ণ করতে পারে অথবা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে রাজউক জমি বিক্রি বা ইমারত নির্মাণের অনুমতি দিতে পারে।
৫. সরকার চামড়া শিল্পের পুনরুদ্ধারের জন্য করোনাকালীন বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারে। সেই সঙ্গে তৈরি পোশাক শিল্পের অনুরূপ চামড়া শিল্প খাতেও কর অব্যাহতি ও নগদ প্রণোদনা দেয়া যেতে পারে।
৬. চামড়া শিল্প উদ্যোক্তাদেরও সততা এবং পেশাদারিত্ব বজায় রেখে কাজ করতে হবে। গৃহীত ঋণের অর্থ অন্যত্র ব্যয় বা বিনিয়োগ না করে চামড়া খাতেই ব্যবহার করবেন এবং ব্যাংকঋণ সময়মতো পরিশোধ করতে সচেষ্ট হবেন। একটি সম্ভাবনাময় খাতকে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শুধু বাঁচিয়ে রাখাই নয়, জাগিয়ে তুলতে হবে।
মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া : সরকারের সাবেক সিনিয়র সচিব। বর্তমানে জার্মানিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত।
এমআরএম/জেআইএম