বিশেষ প্রতিবেদন

পিএসসিতে যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্নের নম্বর বাড়লেও বাড়েনি সময়

প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিএসসি) পরীক্ষায় যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্নের নম্বর ৩৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০ নম্বর করা হলেও সময় বাড়ানো হয়নি। ফলে নির্ধারিত আড়াই ঘণ্টায় সকল প্রশ্নের উত্তর দেয়া নিয়ে শঙ্কিত কোমলমতি পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। আর শহরের চেয়ে গ্রামেই এ উদ্বেগ আরো বেশি। পরীক্ষার সময় না বাড়ানোর কারণে ফল বিপর্যয়েরও আশঙ্কাও করছেন অনেক শিক্ষক। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, ২০০৯ সাল থেকে চালু হওয়া পিএসসি পরীক্ষায় ২০১২ সালে সৃজনশীল প্রশ্নের আদলে ১০ নম্বর যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্ন রাখা হয়। ২০১৩ সালে আরো ২৫ নম্বর বাড়ানো হয়। গত বছর আরো ১০ শতাংশ বাড়িয়ে ৩৫ নম্বর করা হয়েছে। এ বছর তা ৫০ নম্বর করা হয়েছে। চিন্তা করে যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্নের উত্তর দিতে হয় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। ২০১২ সালে প্রথম যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্ন চালু হওয়ার পরে নির্ধারিত দুই ঘণ্টায় বেশির ভাগ পরীক্ষার্থী সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি। বিষয়টি পর্যালোচনা করে ২০১৩ সালে পরীক্ষার সময় ৩০ মিনিট বাড়িয়ে আড়াই ঘণ্টা করা হয়। তবে এ বছর যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্ন ৫০ নম্বরের করা হলেও পরীক্ষার সময় বাড়ানো হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পিএসসি পরীক্ষায় যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্নের উত্তর তৈরির জন্য এখনো সারা দেশে শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষক দেয়া হয়নি। শহর এলাকায় যোগ্য শিক্ষক থাকলেও গ্রাম এলাকার অনেক শিক্ষকদের এ বিষয়ে তেমন কোনো ধারণাই নেই। এমন কি ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা এসব প্রশ্নের উত্তর তৈরির জন্য নিষিদ্ধ নোট গাইডের ওপর নির্ভর করছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই শিক্ষার্থীদের হাতে নোট গাইড তুলে দিচ্ছেন। অনেক শিক্ষকেরর বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের নোট গাইড কিনতে বাধ্য করারও অভিযোগ রয়েছে।   রাজধানীর একাধিক পিএসপি পরীক্ষার্থীর অভিভাবকের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের সঙ্গে। এসময় তারা অভিযোগ করেন, অনেক শিক্ষকই সঠিকভাবে যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্নের উত্তর তৈরি করতে পারেন না। তারা শিক্ষার্থীদের নিষিদ্ধ গাইড বই কিনতে উৎসাহিত করেন। গাইড দেখেই শিক্ষার্থীরা প্রস্তুতি নিয়েছে। তারা আরো অভিযোগ করেন, এক বছরে পাঁচটি গাইড কিনেছেন। পরীক্ষার মাত্র ২০ দিন আগেও শিক্ষকদের পরামর্শে প্রস্তুতি অনুপম গাইড কিনতে হয়েছে। এ অবস্থায় পরীক্ষার্থীরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শতভাগ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে কিনা এ নিয়ে তারা প্রশ্ন তোলেন।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর চেয়ে গ্রাম এলাকার শিক্ষার্থীরা অনেক ক্ষেত্রেই পিছিয়ে রয়েছেন। যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্নের উত্তর তৈরি করতেই তারা হিমশিম খাচ্ছেন। এ অবস্থায় পরীক্ষায় সময় বৃদ্ধি না করায় এসব পরীক্ষার্থীরা নির্ধারিত সময়ে সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন কিনা তা নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও শিক্ষকরা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. শাহানা আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, শিক্ষার্থীদের ভেবে-চিন্তে যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। এজন্য ক্ষুদে পরীক্ষার্থীর অনেক সময় ব্যয় হয়। এবছর প্রশ্নের আকার বাড়লেও সময় বাড়ানো হয়নি। আমাদের শিক্ষার্থীদের ওভাবেই প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে পরীক্ষার হলে নির্ধারিত সময়ে কোমলমতি পরীক্ষার্থীরা সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে কি না এ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারলে ফল বিপর্যয় হতে পারে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের উপ-পরিচালক মো. মিজাউল ইসলাম বলেন, নোট-গাইডের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতেই মাধ্যমিক পর্যায়ের সৃজনশীল প্রশ্নপত্রের আদলে যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্নপত্র চালু করা হয়েছে। পাঠ্যবইয়ের বিষয়বস্তু সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকলেই যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব। ২০১৮ সাল থেকে যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্নপত্র শতভাগ করার চিন্তভাবনা চলছে। এ জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে যোগ্য করে তোলা হচ্ছে।এনএম/এসএইচএস/পিআর

Advertisement