বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মতো বাংলাদেশও উন্নত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জনগণের মাঝে ভোট না দেয়ার মানসিকতা দেখা দিয়েছে বলে মনে করেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর।
Advertisement
বুধবার (২৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে এমন মন্তব্য করেন ইসি সচিব। তিনি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ভোট ভালো হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন।
মো. আলমগীর বলেন, ‘চসিক সিটিতে উপস্থিতি একটু কম ছিল। কারণ আপনারা দেখেছেন যে, শুধু চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে নয়, যেকোনো বড় শহরে নির্বাচন যখন হচ্ছে বিশেষ করে ভাসমান লোকজন বেশি থাকে, বাইরের লোকজন বেশি থাকে, সেখানে একটু উপস্থিতিটা কম হয়। চট্টগ্রামে আমরা আরেকটু বেশি আশা করেছিলাম। দেখা গেছে যে, ভোটার উপস্থিতি আশার চেয়ে একটু কমই হয়েছে।’
‘২০০৮ সালের আগের নির্বাচনগুলোয় ভোটার উপস্থিতি যত ছিল, তখনও তো নিশ্চয়ই ভাসমান লোক ছিল। এখন ভোটার উপস্থিতি এত কম কেন?’
Advertisement
এ প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, ‘এখানকার নাগরিকরা কেন যেন রাষ্ট্রের প্রতি তাদের একটা দায়িত্ব যে আছে, ভোট যে তার অধিকার, এটা তারা মনে করছেন না। ভোটের দিন তারা মনে করেন যে, কী কষ্ট করে যাব, কেন ভোট দেব, ভোট দিয়ে আমার লাভ কী- এ ধরনের মনমানসিকতা হয়ে গেছে। এটা দেখবেন যে, উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এরকম হয়।’
‘আমেরিকার (যুক্তরাষ্ট্র) ক্ষেত্রে দেখেন, এত উন্নত তারা, সবদিক থেকেই উন্নত। কিন্তু ভোটের ক্ষেত্রে দেখবেন ভোট দিতে যায় না বেশিরভাগ মানুষ। আমাদের দেশেও অনেকটা ওইরকম, উন্নত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মনে হয় এই লক্ষণ দেখা দিয়েছে। দেশ উন্নত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানসিকতার বদল হয়েছে। মানুষ মনে করে, অন্যের জন্য আমি কেন কষ্ট করে ভোট দিতে যাব?’
চসিক নির্বাচনে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে, বিরোধী দলের এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি কোথায় হলো? ৭৩৫টা কেন্দ্র, তার মধ্যে মাত্র দুটি কেন্দ্রে ইভিএম ভাঙচুর করা হয়েছে। ইভিএম না ভাঙলে সেখানে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হতো। ইভিএম ভাঙায় সেখানে নির্বাচন স্থগিত রাখা হয়েছে।’
সহিংসতার পরও ভোট শান্তিপূর্ণ বলা যায় কি না? জবাবে তিনি বলেন, ‘৭৩৫টা কেন্দ্রের মধ্যে দুটি কেন্দ্রে সহিংসতা হয়েছে। এটাকে কী বলবেন? পারসেনটেজ করেন। কত শতাংশ হয়। শান্তিপূর্ণ কত আর অশান্তিপূর্ণ কত?’
Advertisement
ইভিএমে ভোট হলেও ভোট শেষ হওয়ার আড়াই ঘণ্টা পরও কত শতাংশ ভোট পড়েছে, তা জানাতে পারেননি ইসি সচিব।
মো. আলমগীর আরও বলেন, ‘গণমাধ্যম থেকে যেটুকু দেখেছি এবং আমাদের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে যে প্রতিবেদন পেয়েছি, আমরা বলব ভালো নির্বাচন হয়েছে।’
‘তবে দুটি কেন্দ্রে কিছু উচ্ছৃঙ্খল লোকজন যারা ইভিএমে ভোট হোক চান না, তারা ওখানে আক্রমণ চালিয়েছিল। ইভিএম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আমরা ওই দুটি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করেছি। এছাড়া অন্য কেন্দ্রগুলোতে অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবে নির্বাচন হয়েছে। যারা ভোট দিতে এসেছিলেন, তারা ভোট দিয়ে গেছেন’- যোগ করেন ইসি সচিব।
সহিংসতার বিষয়ে মো. আলমগীর বলেন, ‘আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে এ ধরনের নির্বাচনগুলোতে কিছু ঘটনা ঘটে। তার হিসেবে যদি বলেন, তাহলে বলবো যে বরঞ্চ কমই হয়েছে। মাত্র দুটি কেন্দ্রে সহিংসতা হয়েছে। যারা দুষ্কৃতকারী, তারা এগুলো করার চেষ্টা করেন। বিশেষ করে ইভিএমে ভোট হলে অনেকেই মনে করেন যে, জাল ভোট দেয়া যাবে না। তারাই সাধারণত এগুলো করে। কিছু লোক তো থাকেই এরকম। তারপরও চট্টগ্রামের ভোট সুষ্ঠু করার জন্য প্রায় ২০ হাজার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য কর্মরত ছিল। কমিশনের পক্ষ থেকে যতরকম ব্যবস্থা নেয়ার দরকার, তা নেয়া হয়েছিল।’
পিডি/এসএস/এএসএম/জেআইএম