সুনামগঞ্জের পুঁতিশিল্পী কাউছার আলম ভেবেছিলেন বিএ পাস করে ভালো একটি চাকরি করে পরিবারের সবার মুখে খাবার তুলে দেবেন। কিন্তু তা আর হলো না। সরকারি-বেসরকারি অনেক জায়গায় আবেদন করেও চাকরি জোটেনি। তাতে তার দুঃখ নেই। বর্তমানে তিনি একজন পুঁতিশিল্পী হিসেবে সুনামগঞ্জের সবার কাছে পরিচিত।
Advertisement
জানা যায়, নিজের হাতে পুঁতি দিয়ে তৈরি করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পোর্ট্রেট। যেটি ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের দর্শনীয় স্থানে রয়েছে। জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বাগগাঁও গ্রামের ইছাক মিয়া ও হালেমা খাতুনের ৪ ছেলে-মেয়ের মধ্যে তৃতীয় সন্তান কাউছার আলম ৩ বছর রাত-দিন খেটে বঙ্গবন্ধুর পুঁতির পোর্ট্রেটটি তৈরি করেন।
গত পাঁচ বছর ধরে পুঁতি দিয়ে আল্লাহ, মা-বাবা, ফুলদানি, টিস্যুবক্স, কলমদানি ও ব্যাগসহ ৩০ রকমের পণ্য তৈরি ও বিক্রয় করছেন। নারীদের প্রশিক্ষণ দিতে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও আছে তার। ২০১৮ সালে পুঁতি দিয়ে মানুষের পোর্ট্রেট বা ছবি তৈরির চিন্তা করেন। প্রথমেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দিয়ে শুরু করেন।
প্রথম দেড় বছর কাজ করে সফল হতে পারেননি কাউছার। কিন্তু হতাশ হননি। মুজিববর্ষকে সামনে রেখে রাত-দিন খেটেছেন। একপর্যায়ে বঙ্গবন্ধুর পোর্ট্রেট তৈরির কাজে সফল হন। গতবছরের ১৬ মার্চ পোর্ট্রেটটি নিয়ে গণভবনে যান। গণভবনের একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে সেখানে পাঠিয়ে দেন তাকে। পোর্ট্রেটটি এখন সেখানেই আছে।
Advertisement
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কর্মকর্তা ইয়াসমিন আক্তার জাগো নিউজকে জানান, পুঁতির পোর্ট্রেটটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে এলে যে কক্ষে বসেন; সেই কক্ষের সামনে রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যখন এ অফিসে আসবেন, তিনি দেখে যেখানে রাখার নির্দেশ দেবেন; সেখানেই রাখা হবে। পোর্ট্রেটে একটি ডিভাইস লাগানো আছে, যাতে সুইচ টিপলেই বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শোনা যাবে।
পুঁতিশিল্পী কাউছার আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘পুঁতি আর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র দিয়ে আমাদের সংসার চলে যায়। তারপর সুনামগঞ্জ শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাঠাগারে অফিস সহায়ক পদে কাজ করি। সকালে সবাইকে পুঁতি প্রশিক্ষণ দিয়ে তারপর সাইকেল চালিয়ে চাকরিতে যাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট্রের কর্মকর্তা ইয়াসমিন আক্তার পোর্ট্রেটটি রেখে আমাকে বলেছিলেন, এর বিনিময় মূল্য কত টাকা কিংবা এর বিনিময়ে আমি কী চাই। আমি বলেছি, আমি কিছুই চাই না, আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কাজটি যাতে দীর্ঘদিন মানুষ দেখে, সে আবদার করবো।’
লিপসন আহমেদ/এসইউ/জেআইএম
Advertisement