ধর্ম

বিখ্যাত নারী ইসলাম প্রচারক ড. আবলার ইন্তেকাল

আরব বিশ্বের প্রখ্যাত নারী ইসলাম প্রচারক অধ্যাপক ড. আবলা আল কাহলাবি (৭২) মহামারি করেনায় আক্রান্ত হয়ে মিসরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

Advertisement

কে এই নারী ইসলাম প্রচারক কাহলাবিকায়রো টাইমস, গালফ নিউজ ও আলজাজিরাসহ অনেক গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, বহু গুণ ও প্রতিভার অধিকারী ড. আবলা আল কাহলাবি ১৯৪৮ সালের ১৫ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। মিসরের জনপ্রিয় অভিনেতা ও আধুনিক সংগীতশিল্পী মোহামেদ আল কাহলাবি ছিলেন তার বাবা।

১৯৭৪ সালে তিনি তূলনামূলক ইসলামী আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭৮ সালে পিএইচডি ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।

ড. আবলা তার বাবার অনুরোধেই মিসরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের জন্য ইসলামিক অ্যান্ড আরবি স্টাডিজ কলেজের ফিকহ (ইসলামি আইন বিষয়) বিভাগের অধ্যাপনা শুরু করেন। এরপর তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি বিভাগে সুনামের সঙ্গে অধ্যাপনার দায়িত্ব পালন করেন।

Advertisement

১৯৭৯ সালে কলেজ অব এডুকেশনের ইসলামী শরিআহ বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগ দেন। এর আগে তিনি সৌদি আরবের রিয়াদে কলেজ অব এডুকেশন ফর গার্লস ও আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের গার্লস কলেজেও শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি ইসলামের প্রচার-প্রসারে নারীদের মাঝে দাওয়াতি কাজ শুরু করেন। মিসরসহ সৌদিআরবের পবিত্র নগরী কাবা শরিফেও নারীদের দারসে অংশগ্রহণ করেন।

ড. আবলা শুধু মিসরীয় ইসলাম প্রচারকই নন, তিনি আরববিশ্বে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। কারণ তিনি পবিত্র কাবা শরিফে নারীদের সন্ধ্যাকালীন অধিবেশনেও তিনি কুরআন-সুন্নাহর দারস দিতেন।

১৯৮৭ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত ড. আবলা পবিত্র কাবা শরিফে নারীদের জন্য সংরক্ষিত স্থানে মাগরিবের পর সান্ধ্যকালীন অধিবেশনে বিশ্বের অনেক দেশের নারীদের মজলিসে দারস দেয়া শুরু করেন। এ সময় ইসলামের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সভ্যতা ভিত্তিক প্রামাণ্য আলোচনায়ও শুরু করেন তিনি। যা মুসলিম নারীদের ইসলামী জীবনবিধান সম্পর্কে জ্ঞান আহরণে দারুণভাবে প্রভাবিত করে।

Advertisement

ড. আবলা সৌদি আরব থেকে মিসরে ফিরে এসে ধর্ম প্রচার অব্যাহত রাখার পাশাপাশি সামাজিক বহু কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়াতেও তিনি ধর্ম প্রচারে কাজ করেন।

মিসরের কায়রোতে তার বাবা নামে প্রতিষ্ঠিত মুহাম্মদ আল কাহলাবি মসজিদে নিয়মিত নারীদের জন্য দারস দিতেন। এছাড়া কায়রোর বাসাতিন এলাকায় তিনি ইসলামী জীবনব্যবস্থা বিষয়ক জীবনঘনিষ্ঠ পর্যালোচনা শুরু করেন।

ড. আবলা ‘আল বাকিয়াত আস সালিহাত’ নামে কায়রোর মুকাত্তিম নগরে সমাজাসেবামূলক সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। এ সমাজসেবা সংস্থার আওতায় ইয়াতিম শিশুদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র, দূরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্তদের জন্য হাসপাতাল স্থাপন করেন।

ফতোয়া বিভাগ, মসজিদ, মাদরাসাসহ বৃদ্ধদের আশ্রয়কেন্দ্র ও আলঝাইমার রোগাক্রান্ত বৃদ্ধদের জন্য বিশেষায়িত চিকিৎসাকেন্দ্রেসহ সুবিশাল কমপ্লেক্সও গড়ে তুলেন তিনি।

অবশেষে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পর তিনি ফেসবুক লাইভে শুরু করেন দ্বীন প্রচারের কাজ। তাঁর সর্বশেষ নিয়মিত প্রোগ্রাম ছিল চিরস্থায়ী আমল বিষয়ক ‘আল বাকিয়াত আস সালিহাত’ নামক অনুষ্ঠান।

কোরআন, হাদিস ও ফিকহের পাশাপাশি ইসলামের ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে অগাধ জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন ড. আবলা। অধ্যয়ন ও অধ্যাপনার পাশাপাশি মিশরের জনগণের কাছে তিনি সমাজসেবক হিসেবে সমধিক পরিচিত ছিলেন।

গত ২৪ জানুয়ারি কায়রোর একটি হাসপাতালে দুই সপ্তাহ চিকিৎসাধীন থাকার পর মহান রবের ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেছেন ওপারের সুন্দর ভুবনে। আল্লাহ তাআলা নারী ইসলাম প্রচারক ও সমাজসেবক ড. আবলাকে জান্নাতের উচ্চ মাকাম দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জিকেএস