ক্যাম্পাস

১২ বছর ধরে পশু-পাখির জন্য রান্না করেন গাজিউল

কখনো কি অনুভব করেছেন বিড়াল বা অন্য কোনো প্রাণীর নীরব সুখ-দুঃখ? কখনো কি মনে হয়েছে বেওয়ারিশ পশু-পাখিরও খাদ্য ও চিকিৎসার প্রয়োজন হয়? আপনি আমি না ভাবলেও দায় এড়াতে পারেননি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) কর্মরত এক ব্যক্তি।

Advertisement

টানা ১২ বছর ধরে প্রতিদিন রান্না করছেন ক্যাম্পাসের পশু-পাখির জন্য। নিজের বেতনের একটা বড় অংশ দিয়েই নীরবে চলছে তার এই মহৎ কাজ।

গাজিউল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নিম্নমান সহকারী। তার সকাল শুরু হয় প্রাণীদের সঙ্গে।

ভোর ৬টায় বাসা থেকে মোটরসাইকেলে ক্যাম্পাসে আসেন। সাংস্কৃতিক কেন্দ্র টিএসসিসিতে এসে প্রায় দেড় ঘণ্টায় রান্না শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে বিভিন্ন জায়গায় কুকুর, বিড়ালকে খাওয়ান।

Advertisement

টিএসসিসি, রাকসু ভবন, শহিদুল্লাহ কলা ভবন, শহীদ মিনারসহ প্রায় ১৫ জায়গায় ঘুরে ঘুরে খাবার দেন তিনি। এভাবে আরও দেড় ঘণ্টা সময় লাগে পুরো ক্যাম্পাসের প্রায় ৫০টি কুকুরকে খাওয়াতে।

তার সঙ্গে গিয়ে দেখা যায়, পশু-পাখির সঙ্গে তার এমন সখ্য হয়েছে যে, নাম ধরে ডাকলেই কাছে চলে আসছে প্রাণীগুলো। ডাবু, লালু, শেফালিসহ বিভিন্ন নামে ডাকছেন প্রাণীগুলোকে।

খাবারের উপাদান জানতে চাইলে গাজিউল ইসলাম বলেন, ‘চাল, গরুর মাংসের চর্বি আর ডাল দিয়ে তৈরি হয় খিচুড়ি। প্রতিদিন ১০ কেজি চাল এবং মাসে ২০ কেজি চর্বি ব্যবহার করেন। এতে প্রতি মাসে প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ হয়। এছাড়া তার বাসায় আরও ১৪টি কুকুরসহ আশপাশের কয়েকটি প্রাণীর জন্য রান্না করেন তার মেয়ে।’

কীভাবে চলে এই খরচ, এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘করোনার আগ পর্যন্ত নিজের মাসিক বেতনের প্রায় অর্ধেক খরচ হতো এসব প্রাণীর পেছনে। করোনা শুরুর তিন মাস পর হঠাৎ দেখা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহার সঙ্গে। তিনি তার সঙ্গে কাজ করার অনুমতি চান। সেই থেকে অধ্যাপক সাহা আর্থিকভাবে সহযোগিতা করছেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আব্দুস সোবহান, টিএসসিসির পরিচালক অধ্যাপক ড.হাসিবুল আলম প্রধান ও সহকারী পরিচালক আহসান হাবীব, রবীন অনেকেই কাজগুলো দেখে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।’

Advertisement

নিজের বেতনের টাকায় কুকুর বা প্রাণীদের খাবার দিচ্ছেন। করোনার ঝুঁকির মধ্যেও বাদ দেননি কাজটি। এজন্য অনেকে ‘মানসিক রোগী’ বলেও আখ্যা দিয়েছিলেন তাকে। এজন্য মন খারাপও হয়েছে। তবে খাবার দেয়া ছাড়েননি গাজিউল।

এখনো কেন করছেন এসব, এমন প্রশ্নের উত্তরে গাজিউল বলেন, ‘একদিন ঝিরঝিরে বৃষ্টির সময় এক মেয়েকে মেরুদণ্ড ভাঙা অসুস্থ একটি কুকুর ছানাকে ভাগাড়ে রেখে যেতে দেখলাম। শীতে বাচ্চাটি কাঁপছিল। তাই তাকে ফেলে যাওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করেছিলাম। সে বলেছিল, এটা বাড়ি নোংরা করে। সারাদিন চেঁচামেচি করে।’

পরে তিনি ভাবলেন এই পশুগুলোরও বেঁচে থাকার অধিকার আছে। এদের সবাই যদি তাড়িয়ে দেয় তাহলে যাবে কোথায়? এরপর তিনি কুকুর ছানাটিকে বাসায় নিয়ে ডাক্তার দেখালেন। ডাক্তার বললেন, এটা বাঁচবে না। তবে হাল ছাড়েননি এই প্রাণীপ্রেমী। ওষুধ খাওয়ালেন। সফলও হয়েছিলেন। কুকুরটির সুস্থ হতে প্রায় পাঁচ বছরের বেশি সময় লেগেছিল।

তিনি বলেন, ‘মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। এসব প্রাণীর দেখভাল করার জন্য সৃষ্টিকর্তা দায়িত্ব দিয়েছেন। বিবেকের দায় থেকেই কাজটি করি। এটাই ভালো লাগে।’

সালমান শাকিল/এসআর/এমএস