একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস। প্রায় ৭ যুগ পর জীবনের শেষ সময়ে এসে নিজের আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ পেলেন বৃদ্ধ হায়দার আলী। ঘটনাটি সিনেমার মতো অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটি বাস্তব। ১৫ বছর বয়সে বাড়ি ছেড়েছিলেন তিনি। সেই থেকে ঘর ছাড়া। গত সোমবার মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার চান্দগ্রামে ৮৫ বছর বয়সে এসে মামা হায়দার আলীর দেখা হয় ভাগনা আব্দুর রহিমের। এ সময় তারা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৭০ বছর আগে আলী হায়দার এসেছিলেন বড়লেখা উপজেলার চান্দগ্রাম এলাকায়। তখন তাঁর বয়স ছিল ১৪-১৫ বছর। চান্দগ্রাম বাজারটিও এখনকার মতো ছিল না। এখানে আসার পর এলাকার অনেকের বাড়িতে গরু-মহিষ চরিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন তিনি। বছর তিনেক আগে অসুস্থ হয়ে পড়েন হায়দার আলী। কাজ করতে পারতেন না। খালি জায়গায় পড়ে থাকতেন। বয়সের ভারে স্পষ্ট করে কথাও বলতে পারেন না। এ অবস্থায় মধ্য চান্দগ্রামের ব্যবসায়ী সোনা মিয়া চান্দগ্রাম বাজারের একটি খালি দোকানকোঠায় তার থাকার ব্যবস্থা করেন। তাদের বাড়ি থেকে পাঠানো হতো খাবার। জানা গেছে, নোয়াখালী জেলার চাটখিল উপজেলার কুলছড়ি গ্রামের মৃত ইয়াকুব আলীর প্রথম পক্ষের দ্বিতীয় ছেলে আলী হায়দার। মা মারা গেলে বাবা আবার বিয়ে করেন। সৎ মায়ের সংসারে আপন মায়ের অভাব পূরণ হয়নি। প্রতিনিয়ত চলত নির্যাতন। নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় আলী হায়দার ও তার বড় ভাই নাদেরুজ্জামান বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান। আলী হায়দার চলে যান ভারতে। বড় ভাই নাদেরুজ্জামানের আর খোঁজ মিলেনি। ভাইরা চলে যাওয়ার পর একমাত্র ছোট বোন সাফিয়া বেগমও মামার বাড়ি চলে যান। প্রায় চার মাস ভারতে ঘোরাঘুরি করার পর মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার চান্দগ্রাম এলাকায় চলে আসেন আলী হায়দার। এদিকে সোনা মিয়ার ছেলে আখতার আহমদ আলী হায়দারকে নিয়ে গত ১৮ সেপ্টেম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছবিসহ একটি স্ট্যাটাস দেন। এই স্ট্যাটাসের সূত্র ধরে আলী হায়দারের আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ মিলে। এরই ধারাবাহিকতায় গত সোমবার বড়লেখার চান্দগ্রামে আসেন আলী হায়দারের ছোট বোন সাফিয়া বেগমের ছেলে আব্দুর রহিম। মামা-ভাগনার মিলনে তখন এক আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।আব্দুর রহিম বলেন, ‘আমরা তো ধরেই নিয়েছিলাম মামা মারা গেছেন। আখতারের পরিবার ও ফেসুবকের কল্যাণে তাকে ফিরে পেয়েছি।’ পরে সোনা মিয়ার ভাড়া করে দেয়া একটি প্রাইভেট কারে করে সোমবার রাতেই তারা নোয়াখালীয় চলে গেছেন।ছামির মাহমুদ/এসএস/এমএস
Advertisement