করোনাভাইরাসের কারণে ব্যাপক পরিমাণে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহার বেড়েছে। একদিকে জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যেমন এই স্যানিটাইজার খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, অন্যদিকে এটা ব্যবহারের কারণে দেখা দিচ্ছে শিশুদের নানা ধরনের সমস্যা। সম্প্রতি ‘আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন’-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় এমন তথ্য জানিয়েছে গবেষকরা।
Advertisement
গবেষণায় বলা হয়েছে, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের ফলে শিশুদের চোখ ও ত্বকের সমস্যা মারাত্মকভাবে বাড়তে পারে। শিশুস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অপূর্ব ঘোষ ভারতীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে বলেন, ‘হ্যান্ড স্যানিটাইজারে ৭০ শতাংশের বেশি অ্যালকোহল রয়েছে। এই প্রভাব অত্যন্ত বেশি। করোনার কারণে আমরা সবাই স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছি। কিন্তু এটা খুব স্বাস্থ্যকর নয়। বিশেষ করে শিশুদের চোখ ও ত্বকের জন্য।’
মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০১৯ সালে যতজন শিশুকে চোখে বিষক্রিয়ার কারণে চিকিৎসা দেয়া হয়েছিল, তার মধ্যে ১.৩ শতাংশের বিষক্রিয়ার কারণ ছিল হ্যান্ড স্যানিটাইজার। কিন্তু ২০২০ সালে সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ শতাংশের কাছাকাছি। শুধু চোখের নয়, বাড়ছে ত্বকের সমস্যাও।
ত্বক বিশেষজ্ঞ ডা. পিয়ালি চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘এখনো পরিসংখ্যানগত কোনো প্রমাণ নেই। ৭০ শতাংশ অ্যালকোহলের কারণে ত্বকের কিছু পরিবর্তন হবে, সেটাই স্বাভাবিকই।’
Advertisement
শিশুদের ত্বকের পরিবর্তন নিয়ে তিনি বলেন, ‘শিশুদের তালুর ত্বক যতটা নরম হওয়ার কথা, তা কমেছে- সেটা বহু শিশুর ক্ষেত্রেই দেখেছি। অনেক শিশুর আঙুলের ত্বকে ফাটল ধরছে। এটা সাধারণত সেই সব মানুষের ক্ষেত্রেই হয়, যারা সারাদিন প্রচুর ধোঁয়া-মোছার কাজ করেন। শিশুদের ক্ষেত্রে এটি বিরল। অনেকের নখেও ফাটল ধরছে। এমনকি নখে ফাঙ্গাসঘটিত সংক্রমণও হচ্ছে।’
চিকিৎসকরা বলছেন, অনেক সময়ই শিশুরা নিজের খেয়ালে মুখে বা চোখে হাত দেয়। সেই সময় তাদের হাতে যদি স্যানিটাইজার লেগে থাকে, তা চোখে বা মুখে গেলে বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে। বহু শিশু ভুল করে স্যানিটাইজার খেয়ে ফেলেছে। এমন বহু ঘটনাই অহরহ ঘটছে।
‘ত্বকে নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকে। তার মধ্যে অনেকগুলোই উপকারী। সেগুলো মারা গেলে শরীরের ক্ষতি হয়। স্যানিটাইজার একসঙ্গে ভাল-মন্দ সব ব্যাকটেরিয়াকেই মেরে ফেলছে’, বলেন ডা. পিয়ালি।
এতদিন ধরে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতেই স্যানিটাইজারের ব্যবহার নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। তবে ধীরে ধীরে স্যানিটাইজারের ব্যবহারের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনা জরুরি বলে মনে করছেন অনেক চিকিৎসক। অনেক চিকিৎসক বাজারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা স্যানিটাইজারের গুণমানের বিষয়গুলোও খতিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করছেন।
Advertisement
এআরএ/জেআইএম