দেশজুড়ে

ধান চাষে বেড়েছে প্রযুক্তির ব্যবহার

শষ্য ভাণ্ডারখ্যাত উত্তরের জেলা নওগাঁয় বসতবাড়ি ও পুকুর খনন করায় কমছে আবাদি জমি। ফসলি জমি কমায় স্বল্প সময়ে একাধিক ফসল উৎপাদনের চেষ্টা করছে কৃষক। ফসল উৎপাদনে প্রযুক্তির ব্যবহার ও উন্নত জাত ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি অফিস। তাদের পরামর্শে স্বল্প সময়ে অধিক উৎপাদনে প্রযুক্তির ব্যবহারে ঝুঁকছেন চাষীরা।

Advertisement

এক সময় চাষাবাদ হতো গরু ও মহিষ দিয়ে। এতে জমি প্রস্তুত থেকে রোপণ পর্যন্ত লাগতো দীর্ঘ সময়। আবার শ্রমিক সংকটে পড়তে হতো বিড়ম্বনায়। সময়ের ব্যবধানে গত কয়েক বছর থেকে প্রযুক্তি ও যন্ত্রাংশ ব্যবহারে কৃষকদের সেই কষ্ট অনেকটা লাঘব হয়েছে। এখন শ্রমিকদের অপেক্ষায় দিন গুণতে হয় না কৃষকদের। প্রযুক্তি ও যন্ত্রাংশ ব্যবহারের ফলে স্বল্প সময়ে কয়েক বিঘা জমি চাষাবাদ করা হচ্ছে।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গত তিন বছরের ব্যবধানে আবাদ কমেছে ইরি-বোরো আট হাজার ৫৫০ হেক্টর ও গম পাঁচ হাজার ৬৩০ হেক্টর। বেড়েছে আমনের আবাদ ৩৫ হাজার ৫৮০ হেক্টর, আম ১২ হাজার ১০৫, আলু ৬১০, সরিষা তিন হাজার ৭৫৫, সবজি ৬৬৬, ভুট্টা ১ হাজার ৪৬৫ ও পেঁয়াজ ৮৭০ হেক্টর।

এছাড়া জমি প্রস্তুতে ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার প্রায় ৯৫ শতাংশ, ফসলে স্প্রে মেশিন ৯৫ শতাংশ, মাড়াই মেশিন ৭৫ শতাংশ, ধান রোপন ১ শতাংশ, কর্তন মেশিন ৩ শতাংশ এবং কম্বাইন হার্ভেস্টার ১০ শতাংশ ব্যবহার হচ্ছে।

Advertisement

বদলগাছী উপজেলার দাউতপুর গ্রামে কৃষক আলতাফ হোসেন বলেন, আগে গরু দিয়ে হালচাষ করতে খরচ বেশি পড়তো। এখন পাওয়ার টিলার দিয়ে চাষবাদ করা হচ্ছে। যেখানে এক বিঘা জমি চাষাবাদ করতে তিন-চার গরুর হাল (নাঙ্গল) লাগতো। সেখানে কয়েক মিনিটের মধ্যে এক বিঘা জমি চাষ করা হয়। যন্ত্রের ফলে সময় এবং টাকা দুটোই কম লাগছে।

একই গ্রামের কৃষক জাহিদুল ইসলাম বলেন, জমিতে কখন কী প্রয়োগ করতে হবে, রোগবালাই দমনে কী কীটনাশক দিতে হবে তার সার্বিক পরামর্শ কৃষি অফিস দেয়। এতে বাড়তি খরচ হয় না। আবার ফসলও ভালো হয়। ফলে লাভবান হচ্ছি।

সদর উপজেলা পাহাড়পুর গ্রামের কৃষক মাবুদ হোসেন বলেন, আগে গরু দিয়ে চাষাবাদ করতাম। এতে সময় এবং খরচ বেশি পড়তো। গত তিন-চার বছর থেকে ট্রাক্টর/পাওয়ার টিলার দিয়ে চাষবাদ হচ্ছে। এতে টাকাও কম আবার দু-একদিনের মধ্যেই রোপণ করা যায়।

এ সময় একই গ্রামের মাঠে গরু দিয়ে চাষ করছেন কৃষক আব্দুল হালিম। তিনি বলেন, গরুর হালের জোড়া দিয়ে নিজের চাষের পাশাপাশি অন্যের জমিও চাষ করি। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ১০ কাঠা জমি চাষে ৪০০ টাকা চুক্তি নিয়েছি। পাশের জমি আগেই রোপণ করা হয়েছে, সেখানে ট্রাক্টর দিয়ে আর হাল চাষ সম্ভব নয়। এজন্য গরুর হাল চাষে চুক্তি নিয়েছি বলে জানান তিনি।

Advertisement

বদলগাছী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান আলী বলেন, অল্প জমিতে কীভাবে বেশি উৎপাদন করা যায় বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে তা কৃষকদের হাতে কলমে শেখানো হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে স্থানীয় ফলনের জাত বাদ দিয়ে, উন্নত জাতের ব্যবহার বাড়ছে। এছাড়া উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামেই চাষাবাদে প্রযুক্তি ও যন্ত্রাংশ ব্যবহার হচ্ছে। ফলে প্রতি ইঞ্চি জমির ব্যবহার হওয়ায় উৎপাদন যেমন বাড়ছে খরচও তেমনি কমছে।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. শামছুল ওয়াদুদ বলেন, জমি রয়েছে আগের মতোই। প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে একই পরিমাণ জমিতে বাড়তি ফসল উৎপাদন হচ্ছে। রফতানিকৃত ফসলের জন্য কম বালাইনাশক প্রয়োগে কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। সবজির ক্ষেত্রে সেক্স ফেরোমেন এবং আমের ক্ষেত্রে ব্যাগিং পদ্ধতি কৃষকরা ব্যবহার করছে। আশা করছি আগামীতে এর ব্যবহার বাড়বে।

এছাড়া বর্তমান সরকার কৃষিক্ষেত্রে যান্ত্রিকীকরণের ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে বৃহৎ প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এ মৌসুম থেকে আমরা শুরু করতে যাচ্ছি। প্রতিটি জেলায় একটা ব্লক তৈরি করা হবে। যেখানে কৃষিতে প্রযুক্তি ব্যবহারের যন্ত্রাংশ রাখা হবে, যা দিয়ে ধান লাগানো থেকে শুরু করে কাটা-মাড়াই কাজে ব্যবহৃত হবে। যাকে ‘সমলায়’ চাষ বলা হয়।

আব্বাস আলী/এএইচ/এমকেএইচ