মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ইতোমধ্যে মানুষের জনসমাগমের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে বন্ধ রাখা হয়েছে সবধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে ভার্চুয়ালি এ সকল শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এরই ধারাবাহিকতায় আলোচনায় এসেছে অনলাইন ক্লাস।
Advertisement
মহামারি করোনার কারণে বিশ্বের প্রায় সব দেশে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সরাসরি পাঠদান বন্ধ। এ অবস্থায় অনলাইনে চলছে পাঠদান। সম্প্রতি দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, বিশ্বের শতকরা ৫০ ভাগেরও বেশি শিক্ষার্থী ও শিক্ষক মনে করেন অনলাইন ক্লাস তাদের শিক্ষাজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
প্রফেসর ড. সান্দ্রা গার্দোনিও, একজন পদাৰ্থবিজ্ঞনী যিনি দীর্ঘদিন ধরে সার্ফেস সায়েন্সের ওপর গবেষণা করে আসছেন। বর্তমানে তিনি স্লোভেনিয়ার অন্যতম প্রসিদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব নোভা গোরিছার স্কুল অব সায়েন্সের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা রীতিমতো দুরূহ একটি বিষয়। বিশেষত বিজ্ঞানভিত্তিক বিষয় যেখানে ব্যবহারিক কার্যক্রম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সেখানে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করাটা অসম্ভব একটি বিষয়।
Advertisement
তিনি বলেন, অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে আরও একটি সীমাবদ্ধতা হচ্ছে আমরা কোনোভাবে নিশ্চিত হতে পারি না শিক্ষার্থী আদৌ কোনো কোর্স থেকে কিছু শিখতে পারছে কি না, শ্রেণিকক্ষে যখন আমরা কোনও শিক্ষা-কার্যক্রম পরিচালনা করি তখন সরাসরি আমরা শিক্ষার্থীদের তত্ত্বাবধায়নের সুযোগ পাই।
তাদের কোনো প্রশ্ন থাকলে সেটা তৎক্ষণাৎ জানার সুযোগ হয় কিন্তু অনলাইন ক্লাসের ক্ষেত্রে এ ধরনের সুযোগ একেবারে সীমিত। এছাড়াও আমাদের মধ্যে যে সকল শিক্ষক তুলনামূলভাবে কিছুটা সিনিয়র, যথার্থ কারিগরি জ্ঞানের অভাবে সঠিকভাবে ক্লাস পরিচালনা করাটা তাদের জন্য অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
অনলাইনে ক্লাস পরিচালনার ক্ষেত্রে আরও একটি প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে পরীক্ষা পরিচালনা করা, একজন শিক্ষার্থী আদৌ কতটুকু দক্ষতার সঙ্গে কোনও পরীক্ষা সম্পন্ন করলো সেটিও অনলাইনের মাধ্যমে নিরূপণ করা অনেকাংশে অসম্ভব।
প্রফেসর সান্দ্রার এ বক্তব্যের সাথে অনেকটা একমত পোষণ করেছেন ইউনিভার্সিটি অব নোভা গোরিছার শিক্ষার্থী আদ্রিয়ান গঞ্জালেজ। তিনি বলেন, একবার এক পরীক্ষা চলাকালীন হঠাৎ করে আমার কম্পিউটারের ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
Advertisement
পরে যখন অন্য এক ডিভাইস দিয়ে আমি ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত হই, আমি জানতে পারি আমাকে পরীক্ষা থেকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে কিন্তু আমি সম্পূর্ণ আত্মবিশ্বাসী যে আমি কোনও ধরনের অসদুপায় অবলম্বন করিনি।
তবুও শিক্ষকের পরামর্শ অনুযায়ী আমাকে আবারও সামনে ওই সাবজেকটের পরীক্ষায় বসতে হবে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকলে যেভাবে শিক্ষকদের সংস্পর্শে এসে আমরা কোনও বিষয়ে প্রত্যক্ষ জ্ঞান অর্জন করতে পারতাম অনলাইন ক্লাসে সেটা কোনোভাবে সম্ভব হয়ে উঠছে না।
অন্যদিকে অনলাইন ক্লাসকে বৈষম্যমূলক হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন হাঙ্গেরিতে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব পেচের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. আন্দ্রাস ল্যাঙ্ক।
তিনি বলেন, কারিগরি দিক থেকে ইউরোপ এগিয়ে, তাই এখানে অনলাইনে ক্লাস পরিচালনা করতে আমাদের তেমন একটা বেগ পেতে হয় না। কিন্তু আমার অনেক শিক্ষার্থীও আছে যারা আফ্রিকাসহ তৃতীয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিক।
এ সকল দেশে ঠিক মতো ইন্টারনেট সংযোগ অনেক সময় পাওয়া যায় না। এছাড়াও অনলাইনে কোনও ক্লাসে অংশ নিতে যে ধরনের ডিভাইস কিংবা স্মার্টফোনের প্রয়োজন হয় সেটি এ সকল দেশের অনেক নাগরিকদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।
করোনা প্রতিরোধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ইতোমধ্যে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করেছে, তা সত্ত্বেও বিশেষজ্ঞদের এক অংশ মনে করছে খুব শিগগিরই এ পৃথিবী থেকে করোনা নির্মূলের সম্ভাবনা নেই।
এ পরিস্থিতিতে পৃথিবীর অনেক দেশে শিক্ষা-প্ৰতিষ্ঠানগুলো নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে সীমিত পরিসরে তাদের কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দিয়েছে। তবে কবে নাগাদ শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা সম্ভব হবে পুরোদমে সে বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না পৃথিবীর কোনও দেশ।
এমআরএম/এমকেএইচ