করোনা মহামারি শুরুতে কানাডার বাণিজ্যিক বিমান সংস্থাগুলি মারাত্মকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে। যাতায়াত বিধি-নিষেধের মিশ্রণ এবং অসুস্থতা ধরা পড়ার ভয়ের কারণে যাত্রীদের স্তর ৯০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। যা এই শিল্পে নিয়োজিত শত শত পাইলট এবং টেকনিশিয়ানদের চাকরির ক্ষেত্রে আঘাত হেনেছে।
Advertisement
অন্যদিকে যে সমস্ত যাত্রীর ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে তাদের অর্থ ফেরত দিলে কানাডার বিমান সংস্থাকে আর্থিকভাবে সহায়তা দেবে ফেডারেল সরকার। এমন ঘোষণার কথা বলা হয়েছে গত বছরের নভেম্বরে।
পরিবহনমন্ত্রী মার্ক গার্নো বলেছিলেন, ফেডারেল সরকার বিমান সংস্থাগুলির সহায়তার জন্য একটি প্যাকেজে কাজ করছে। আমরা আর্থিক সহায়তা সম্পর্কিত বড় বিমান সংস্থাগুলির সঙ্গে একটি প্রক্রিয়া স্থাপন করতে প্রস্তুত যা কানাডিয়ানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে কানাডায় করোনা পরিস্থিতি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় কোভিড-১৯ পরীক্ষার নতুন বিধি-বিধানের ধাক্কা লেগেছে উড়োজাহাজ পরিবহন শিল্পে। পরিচালন কার্যক্রম ছোট করে আনার পাশাপাশি এবার ১ হাজার ৭০০ কর্মীকে ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিয়েছে এয়ার কানাডা।
Advertisement
কোম্পানিটির পক্ষ থেকে বুধবার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের প্রথম প্রান্তিকে তাদের সেবা কার্যক্রম ২৫ শতাংশ হ্রাস পাবে। এর ফলে এয়ার কানাডার এক্সপ্রেস ক্যারিয়ার বিভাগ থেকেও ২০০ কর্মীকে বিদায় নিতে হবে।
এয়ার কানাডার এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও চিফ কমার্শিয়াল অফিসার লুসি গিলেমেত্তে এক বিবৃতিতে বলেন, এই কঠিন সিদ্ধান্তের প্রভাব আমাদের কর্মীদের ওপর পড়ায় আমরা অনুতপ্ত।
কারণ মহামারির মধ্যেও তারা আমাদের যাত্রীদের দেখভাল করেছেন, ক্ষতিগ্রস্ত কমিউনিটির পাশে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের ভ্রমণ সংক্রান্ত কঠোর বিধি-নিষেধ কোম্পানির আয়ে প্রভাব ফেলছে।
প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানি ওয়েস্টজেট এক হাজার কর্মীকে বাড়িতে পাঠানোর ঘোষণা দেয়ার পাঁচদিন পর এয়ার কানাডা এ ঘোষণা দিল। তবে অটোয়ার পক্ষ থেকে এভিয়েশন শিল্পের জন্য একটি সহায়তা পরিকল্পনা করা হলে হয়তো ছাঁটাইয়ের পরিমাণ কমানো যেত বলে মনে করে ইউনিফর।
Advertisement
ইউনিফরের প্রেসিডেন্ট জেরি ডায়াস এ প্রসঙ্গে বলেন, পরিবহনমন্ত্রী ওমর আলগাবরার এই মুহূর্তে প্রধান অগ্রাধিকার হওয়া উচিত এয়ারলাইন কর্মীদের সহায়তা করা। শিল্পটির সহায়তায় কেন্দ্রীয় সরকারের গড়িমসির কারণে এয়ারলাইন কর্মীদের যে হতাশা, এয়ার কানাডার এ ঘোষণা তা আরও বাড়িয়ে দেবে।
সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষক মাহমুদ হাসান দিপু জানান, শুধু এয়ারলাইন্স আর ট্যুরিজমে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত চাকুরি হারানোদের চেয়ে বিমানবন্দরকেন্দ্রিক বিভিন্ন ব্যবসা কেন্দ্র আর সিকিউরিটিসহ নানাবিধ সার্ভিসে নিয়োজিত যে পরিমাণ শ্রমশক্তি চাকরি হারিয়েছে তার সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি হবে।
এয়ারলাইন্সে নিয়োজিত কর্মীরা চাকরিবিধির আওতায় কিছুটা টার্মিনেশট বেনিফিট পেলেও এয়ারপোর্ট কেন্দ্রিক ব্যবসা কেন্দ্র আর সংশ্লিষ্ট নানাবিধ সার্ভিসে ন্যুনতম মজুরিতে যারা নিয়োজিত ছিল তারা আরও ভয়াবহ সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে যা পারিবারিক ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
অন্যদিকে এ সপ্তাহেই কানাডার পরিবহনমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন ওমর আলগাবরা। মার্ক গারনোর স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন তিনি। মার্ক গারনো পেয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব।
এয়ার কানাডা বলছে, কর্মী ছাঁটাই ও পরিচালন কার্যক্রম সীমিত করে আনার ফলে ২০২১ সালের প্রথম প্রান্তিকে তাদের সক্ষমতা ২০১৯ সালের একই প্রান্তিকের ২০ শতাংশে এসে দাঁড়াবে। আটলান্টিক কানাডা অঞ্চলের অতিরিক্ত রুটের কার্যক্রম বন্ধ করার কথা এ সপ্তাহেই অঞ্চলটির বিমান বন্দরগুলোকে জানিয়ে দিয়েছে তারা।
গ্যান্ডার, এন.এল, গুজ বে ও ফ্রেডেরিক্টনে এরয়ার কানাডার সব ফ্লাইট ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত থাকবে। পাশাপাশি ইয়েলোনাইফ, এন.ডব্লিউ.টিতে ফ্লাইটও ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত থাকবে।
এদিকে এয়ারলাইন্সগুলো অধিক সংখ্যায় আঞ্চলিক রুট বন্ধ করায় সরকার হতাশ বলে জানিয়েছেন পরিবহনমন্ত্রীর মুখপাত্র, উল্লেখ্য কানাডায় করোনা মহামারিতে অন্যান্য ব্যবসার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এয়ারলাইনস ও রেস্টুরেন্ট ব্যবসা যেখানে এখনও অনেক কর্মচারী বেকার রয়েছে।
এমআরএম/এমকেএইচ