ভারতের ঐতিহাসিক প্রাসাদ ‘লালগড় প্যালেস’। রাজস্থানের শহর বিকানের মহারাজা গঙ্গা সিং প্রাসাদটি নির্মাণ করেন। ১৯০২ সাল থেকে ১৯২৬ সালের মধ্যে প্রাসাদটি নির্মাণ করা হয় বলে মত ইতিহাসবিদদের। বিকানের রাজবংশের প্রধান উত্তরসূরী এখন রাজকুমারী রাজ্যশ্রী কুমারী। মহারাজা কারনি সিংহের মেয়ে রাজ্যশ্রী কুমারী থাকেন লালগড়ের এ প্রাসাদেই। পাশাপাশি এ প্রাসাদের বড় একটি অংশ রূপান্তরিত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী রাজকীয় হোটেলে।
Advertisement
ইতিহাস: বিকানেরের মহারাজা রাও গঙ্গা সিংহ প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশদের হয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ব্রিটিশ রাজপরিবারেরও অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন তিনি। তার ছেলে মহারাজা রাও সাদুল সিংহের সম্মতিতে বিকানের যুক্ত হয় স্বাধীন ভারতের রাজপুতানার অংশে।
পরে সেই রাজ্যের নাম হয় রাজস্থান। বিকানের শহর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে এ প্রাসাদ ১৯০২-১৯২৬ সাল পর্যন্ত তৈরি করেছিলেন মহারাজা রাও গঙ্গা সিংহ। রাজতন্ত্র লোপ পাওয়ার আগে বিকানের রাঠৌর বংশের শেষ রাজা ছিলেন রাও কারনি সিংহ।
লাল বেলেপাথরের দৃষ্টিনন্দন এ রাজবাড়ি দেখতে বরাবরই দর্শনার্থীরা ভিড় জমাতেন। ১০০ বছরের পুরোনো এ রাজবাড়ি আজও তার সৌন্দর্য হারায়নি। প্রাসাদটির নকশা করেছিলেন ব্রিটিশ স্থপতি স্যার স্যামুয়েল সুইটন জ্যাকব।
Advertisement
মহারাজা গঙ্গা সিং (১৮৮১-১৯৪২) সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তার পিতা মহারাজা লাল সিংয়ের স্মরণে রাজবাড়ির নামকরণ করবেন। তাই লালগড় প্যালেস হিসেবেই পরিচিতি পায় প্রাসাদটি।
১৯২০ সালে জর্জেস ক্লেমেনসৌ, কুইন মেরি, কিং জর্জ পঞ্চম, লর্ড হার্ডিং এবং লর্ড ইরভিনসহ অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিরা এ প্রাসাদে অতিথি হয়ে আসেন। লর্ড কার্জন লালগড় প্রাসাদের প্রথম উল্লেখযোগ্য অতিথি ছিলেন।
ভারতীয়, ইউরোপীয় এবং মুঘল স্থাপত্যরীতি অনুসরণে তৈরি এ প্রাসাদের মূল স্থপতি ছিলেন ব্রিটেনের সুইন্টন জ্যাকব। বাইরে লাল পাথর খোদাই করা আর ভেতরে মার্বেলে তৈরি এ প্রাসাদ নির্মাণে খরচ হয়েছিল এক লাখেরও বেশি রুপি। ৪০০ জন অতিথি একসঙ্গে বসতে পারেন লালগড়ের এ প্রাসাদের ভোজনশালায়।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ ব্যক্তিগত বই সংগ্রহগারের মধ্যে এ প্রাসাদের পাঠাগার আছে চতুর্থ স্থানে। বাহারি বাগান এবং জাদুঘর এ প্রাসাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সোনম কাপুরের ‘খুবসুরত’ ছবির কিছু অংশের শুটিং হয়েছিল এ প্রাসাদে।
Advertisement
রাজকুমারির গল্প: এ রাজ পরিবারের বর্তমান উত্তরাধিকারী রাজ্যশ্রী কুমারী। মাত্র ৭ বছর বয়সে তিনি অনূর্ধ্ব ১২ বিভাগে এয়ার রাইফেল চ্যাম্পিয়নশিপে বিজয়ী হয়েছিলেন। এরপরেও শ্যুটিংয়ে দেশ-বিদেশ থেকে একাধিক খেতাব পেয়েছেন।
১৯৬৮ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে শ্যুটিংয়ে দক্ষতার স্বীকৃতিস্বরূপ অর্জুন পুরস্কারে সম্মানিত হন। শ্যুটিংয়ের প্রতি রাজ্যশ্রীর আগ্রহ তৈরি করেছিলেন তার বাবা। ১৯৬৮ সালে দিল্লিতে পড়াশোনার পর বিয়ে করে রাজ্যশ্রী চলে গিয়েছিলেন লন্ডন।
তবে তার দাম্পত্য জীবন সুখের হয়নি। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, ডিভোর্সের স্মৃতি এখনো তিনি ভুলতে পারেন না। তবে বিবাহবিচ্ছেদ তাকে জীবনসংগ্রামে অনেক বেশি পরিণত করেছে বলে মনে করেন রাজ্যশ্রী।
তার ছেলে সজ্জন কুমার এবং মেয়ে অনুপমা কুমারীও বিকানের রাজবংশের উত্তরাধিকারী হিসেবে গর্বিত। শিল্পকলার গুণগ্রাহী এবং প্রকৃতিপ্রেমী রাজকুমারি রাজ্যশ্রী দিনের বেশিরভাগ সময় কাটান প্রাসাদের বাগানে।
রাজকুমারি বেশ কয়েকটি বইও লিখেছেন রাজস্থান, বিকানের রাজবংশ এবং ইতিহাস নিয়ে। রাজ্যশ্রী নিজ ভিটায়ই আজীবন কাটাতে চান।
জেএমএস/এসইউ/এমকেএইচ