কৃষি ও প্রকৃতি

৫ লাখ টাকার বরই বিক্রির আশা করছেন ফারুক

দেখতে অনেকটা ছোট আকৃতির আপেলের মতো। রঙও আপেলের মতো সবুজ ও হালকা হলুদের ওপর লাল। খেতে অনেক মিষ্টি। এ বরই অনেকটা বাউকুলের মতো দেখা গেলেও এটি মূলত আপেল কুল। এ বছর খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় আপেল কুলের পাশাপাশি নতুন জাতের কাশ্মিরি আপেল কুল চাষে এসেছে সাফল্য। ভালো দাম পাচ্ছেন কৃষক।

Advertisement

পাঁচ বিঘা জমিতে কুল চাষ করেছেন ডুমুরিয়ার গুটুদিয়া গ্রামের কৃষক মো. ফারুক হোসেন। তিনি বলেন, এবছর কুল প্রথম বিক্রি করেছি ১৮০ টাকা কেজি করে। এখন ১৯০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। তাদের ফলন ও বিক্রি খুব ভালো। কৃষি অফিস থেকে তাদের সার্বিক সহযোগিতা করছে।

এ বছর উপজেলায় কুল চাষির সংখ্যা বেড়েছে। ফলনও বেড়েছে। কোনো প্রকার সমস্যা না হলে এবার ৫ লাখ টাকার কুল বিক্রি হবে বলে তিনি আশা করছেন।

স্থানীয় আরেক কৃষক তুষার বিশ্বাস। তিনি বলেন, কুল চাষের জন্য উপযুক্ত স্থানগুলোর মধ্যে ডুমুরিয়া অন্যতম। যেখান সূর্যের আলো পায়, সেসব জায়গায় আপেল কুল ভালো হয়।

Advertisement

ভিটা জমিতে যে কুলগুলো চাষ হয়, তার চেয়ে ঘেরের বেড়ির আইলে যে কুলটা হয়, সেই কুলের রং, স্বাদ, উৎপাদন ও বাজারের চাহিদা খুবই ভালো। কুল গাছ থেকে সংগ্রহ বাছাই ও প্যাকেজিং করে পরিবহনের মাধ্যমে ঢাকার কারওয়ান বাজারে আড়তে বিক্রি করেন তারা।

ডুমুরিয়ার শোলমারি গ্রামের কৃষক হোসেন সরদার এ বছর তার জমিতে ব্যাপক পরিমাণের কুল চাষ হয়েছে। তিনি ১৮ বছর ধরে কুল চাষ করছেন। ফলন বেশি হওয়াতে ফলের ওজনে তার গাছ ঝুঁকে পড়েছে। তিনি বলেন, শীতের কারণে তার কুল ভালো হয়েছে। এবার তিনি দুই বিঘা জমিতে কুলের চাষ করেছেন। আশা করছেন এবার চার লাখ টাকার কুল বিক্রি হবে।

ডুমুরিয়ার জিলেরডাঙ্গী গ্রামের মৎস চাষি নিমাই চন্দ্র তার নিজস্ব মৎস ঘেরের বেড়িতে প্রায় একশত আপেল কুলের গাছ রোপণ করেন। তিনি বলেন, শীতের কারণে তার কুল ভালো হয়েছে। এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি কুল বিক্রয় হবে বলে তিনি আশা করেন।

ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, ডুমুরিয়ায় এবার ১০০ হেক্টর জমিতে কুল চাষ হয়েছে। অধিকাংশ কুলই ঘেরের পাড়ে নিরাপদ ও বিশুদ্ধ উপায়ে উৎপাদন হয়েছে। এখানের উৎপাদিত কুল দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। এখান থেকে ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকার কুল দেশের বিভিন্ন মার্কেটে বিক্রি হয়।

Advertisement

এখানে যে জাতগুলো করা হয়েছে তার মধ্যে আপেল কুল, বাউকুল, নারকেল কুল। ইতোমধ্যে আপেল কুল ও কাশ্মিরি আপেল কুলের হারভেস্টিং (গাছ থেকে কুল সংগ্রহ) চলছে। এখান থেকে কুল সরাসরি ঢাকায় যাচ্ছে। এ বছর কুলের বাজার মূল্য বেশ ভালো।

তিনি আরো বলেন, দক্ষিণাঞ্চল লবণাক্ত এলাকা। কুল লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে। এ উপজেলায় ঘেরের পাড়ে ও বাণিজ্যিকভাবে আরো বাগান তৈরি হচ্ছে। তারা কৃষকদের বিভিন্ন সহযোগিতা ও পরামর্শ দিচ্ছেন। কৃষকদের মাঠের যে সমস্যাগুলো হচ্ছে, সেগুলো মাঠে গিয়ে সমাধান করার চেষ্টা করছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এ বছর উপজেলা ১০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের কুল চাষ হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে পাঁচ হেক্টর বেশি। এ বছর এ উপজেলা থেকে এক কোটি টাকার কুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এমএমএফ/জিকেএস