হাইকোর্টের নির্দেশে দেশের বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অক্সিজেনের ব্যবহার মূল্যসহ করোনাভাইরাস সংক্রান্ত ১০টি জরুরি পরীক্ষার মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
Advertisement
মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদনের পর এ তালিকা দেশের সব বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকদের অনতিবিলম্বে কার্যকর করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি, তালিকাটি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের দৃশ্যমান স্থানে টানানোর জন্য বলা হয়েছে।
শনিবার (২৩ জানুয়ারি) জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক সমূহ) ডা. মো. ফরিদ হোসেন মিঞা।
অক্সিজেনের নির্ধারিত মূল্য
Advertisement
একক ও মেনিফোল্ড অক্সিজেন সিলিন্ডার সিস্টেমে ঘণ্টায় ২ থেকে ৫ লিটার অক্সিজেন ব্যবহারের জন্য ১০০ টাকা, ৬ থেকে ৯ লিটারের জন্য ১২৫ টাকা এবং ১০ থেকে ১৫ লিটারের জন্য ১৫০ টাকা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেমে (জেনারেটর বেইজড) ঘণ্টায় ২ থেকে ৫ লিটার অক্সিজেন ব্যবহারের জন্য ১২০ টাকা, ৬ থেকে ৯ লিটারের জন্য ৩০০ টাকা এবং ১০ থেকে ১৫ লিটারের জন্য মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫০ টাকা।
সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেমে (লিকুইড অক্সিজেন ট্যাংক বেইজড) ঘণ্টায় ২ থেকে ৫ লিটার অক্সিজেন ব্যবহারের জন্য ১২০ টাকা, ৬ থেকে ৯ লিটারের জন্য ২৫০ টাকা এবং ১০ থেকে ১৫ লিটার ব্যবহারের জন্য ৩০০ টাকা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেমে (হাইফ্লোনজেল ক্যানোলা) ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ লিটার অক্সিজেন ব্যবহারের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০০ টাকা।
Advertisement
জরুরি ১০টি পরীক্ষার মূল্য
সিবিসি পরীক্ষার সর্বোচ্চ স্থিরমূল্য ধরা হয়েছে ৪০০ টাকা। এছাড়া সর্বনিম্ন ৪০০ ও সর্বোচ্চ মূল্য ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সিআরপি পরীক্ষার স্থিরমূল্য ৬০০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা।
এলএফটি পরীক্ষার স্থিরমূল্য নির্ধারণ করেছে ১০০০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মূল্য ৯৫০ থেকে ১৬০০ টাকা।
এস.ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষার স্থিরমূল্য ৪০০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মূল্য ৩০০ থেকে ৬৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এস ইলেক্ট্রোলাইট পরীক্ষার স্থিরমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৫০ থেকে ১৪৫০ টাকা।
ডি. ডিমার পরীক্ষার স্থিরমূল্য ১৫০০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মূল্য ধরা হয়েছে ১১০০ থেকে ৩২০০ টাকা।
এস. ফেরিটিন পরীক্ষার স্থিরমূল্য নির্ধারণ করা হয়েয়ে ১২০০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মূল্য ধরা হয়েছে ১০০০ থেকে ২২০০ টাকা।
এস. প্রোকালসিটোনিন পরীক্ষার স্থিরমূল্য ২০০০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫০০ থেকে ৪৫০০টাকা।
সিটি স্ক্যানের (চেস্ট) স্থিরমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০০০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মূল্য ৫০০০ থেকে ১৩০০০ হাজার টাকা।
অ্যানালগ চেস্ট এক্স-রের স্থিরমূল্য ৪০০ টাকা এবং ডিজিটাল পদ্ধতির মূল্য নির্ধারণ করা ৬০০ টাকা।
এ দুটি এক্স-রের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মূল্য ধরা হয়েছে যথাক্রমে ৩০০ থেকে ৫০০ এবং ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা।
এ বিষয়ে ডা. মো. ফরিদ হোসেন মিঞা বলেন, ‘অধিদফতর দাম নির্ধারণ করে অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিল। জমা দেয়া হয়েছিল উচ্চ আদালতেও। এখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়েছে। তাই নির্ধারিত এ মূল্য তালিকা কার্যকর করার জন্য বলা হয়েছে এবং হাসপাতালের দৃশ্যমান স্থানে টাঙাতেও বলা হয়েছে। এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিও দিয়েছি । উচ্চ আদালতের আদেশ পালনের বিষয়ে এখন একটি প্রতিবেদনও দাখিল করব।’
২০১৮ জুলাই মাসে এ বিষয়ে একটি রিট আবেদন করেন আইনজীবীদের সংগঠন হিউম্যান রাইটস ল’ইয়ার্স অ্যান্ড সিকিউরিং এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি অব বাংলাদেশের পক্ষে কোষাধ্যক্ষ মো. শাহ আলম।
এর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ২৪ জুলাই হাইকোর্ট রুল জারিসহ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন।
এর ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের শেষ দিকে হাইকোর্ট বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফি (ইউজার ফি) নির্ধারণের অগ্রগতি জানাতে নির্দেশ দেন।
এর মধ্যে অক্সিজেনের মূল্য নির্ধারণ ও কোভিড-১৯ সম্পর্কিত কিছু পরীক্ষার মূল্য নির্ধারণে সভা করে সরকার। বাংলাদেশ বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক ওনার্স এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে কথা বলে মূল্য নির্ধারণ করে অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
আর এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন ডিসেম্বরে হাইকোর্টে দাখিল করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ১৩ ডিসেম্বর হাইকোর্ট আদেশ পাওয়ার পর এ মূল্য তালিকা কোভিড হাসপাতালের উন্মুক্ত স্থানে প্রদর্শনের জন্য সাত দিনের মধ্যে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
এফএইচ/এসএস/এমএস