আবারও বাংলাদেশের বোলিংয়ের সামনে অসহায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টাইগার বোলারদের তোপে আগের ম্যাচের মতোই খাবি খেয়েছে ক্যারিবীয়রা। যদিও এবার একটু উন্নতি হয়েছে সফরকারিদের। মিরপুরে প্রথম ওয়ানডেতে ১২২ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর একই ভেন্যুতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আজ (শুক্রবার) অলআউট হয়েছে ১৪৮ রানে। খেলেছে ৪৩.৪ ওভার।
Advertisement
অর্থাৎ জয়ের সঙ্গে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজটা নিজেদের করে নিতে হলে বাংলাদেশকে করতে হবে ১৪৯ রান। আর সেটা হলে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক সিরিজ জয়ের কীর্তি গড়বে টাইগাররা।
টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং বেছে নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আজও ইতিবাচক শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন দলটির ওপেনার সুনিল অ্যামব্রিস। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে রুবেল হোসেনের করা প্রথম বলেই দারুণ টাইমিংয়ে বাউন্ডারি মারেন তিনি।
কিন্তু আগের ম্যাচের মতো আজও অ্যামব্রিস ফিরেছেন মোস্তাফিজের বোলিংয়ে, তার ব্যাটের কানা ছুঁয়ে আসা বল গালিতে দাঁড়িয়ে সহজেই তালুবন্দী করেন মেহেদি মিরাজ। ১৫ বলে ৬ রান করেন অ্যামব্রিস।
Advertisement
দলীয় ১০ রানের মাথায় প্রথম উইকেট হারানোর পর অভিষিক্ত জর্ন ওটলেকে নিয়ে প্রতিরোধের আভাস দেন জশুয়া ডা সিলভা। দুজন মিলে যোগ করেন ২৬ রান। ইনিংসের ১১তম ওভারে হাসান মাহমুদকে অসাধারণ এক পুল শটে ছক্কা হাঁকান ওটলে। তবে স্পিন আসতেই ভাঙে জশুয়া-ওটলের প্রতিরোধ। এক ওভারেই দুজনকে ফেরান মিরাজ।
দশম ওভারে প্রথম আক্রমণে এসে নিজের তৃতীয় ওভারে জোড়া সাফল্যের দেখা পান অফস্পিনার মিরাজ। ইনিংসের ১৪তম ওভারের প্রথম বলে শর্ট মিডঅফে তামিম ইকবালের হাতে ক্যাচ তুলে দেন ৪৪ বলে ২৪ রান করা অভিষিক্ত ওটলে। একই ওভারের চতুর্থ বলে ভুল লাইনে ডিফেন্ড করে সোজা বোল্ড হয়ে যান জশুয়া, তার ব্যাট থেকে আসে ২২ বলে ৫ রান।
মিরাজের জোড়া উইকেটের পরের ওভারেই ডাকা হয় আরেক স্পিনার সাকিব আল হাসানকে। নিজের প্রথম ওভারের শেষ বলে আন্দ্রে ম্যাকার্থিকে আর্মারে বোকা বানান সাকিব। স্লগ করতে গিয়ে সোজা বোল্ড হন ৭ বলে ৩ রান করা ম্যাকার্থি।
উইন্ডিজের মরার ওপর খাড়ার ঘা হয়ে আসে ১৮তম ওভারের রানআউট। অধিনায়ক জেসন মোহাম্মদ শর্ট স্কয়ার লেগে ঠেলেই দ্রুত রানের জন্য দৌড় শুরু করেন। দারুণ থ্রোতে স্ট্রাইকার এন্ডে মায়ারসের বিদায়ঘণ্টা বাজান নাজমুল হোসেন শান্ত। আগের ম্যাচে ইনিংসের সর্বোচ্চ ৪৪ রান করা মায়ারস এবার ফেরেন শূন্য রানে।
Advertisement
মাত্র ৪১ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে কঠিন চাপে পড়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ষষ্ঠ উইকেটে ইনিংস সর্বোচ্চ ২৬ রানের জুটি গড়েন জেসন মোহাম্মদ ও এনক্রুমাহ বোনার। নিজের প্রথম স্পেল থানা প্রান্ত থেকে করে এক উইকেট নেয়ার পর ২৫তম ওভারে মিডিয়া প্রান্তে বোলিং শুরু করেন সাকিব। সেই ওভারের শেষ বলেই ভাঙেন জেসন-বোনার জুটি। লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে বিদায় নেন ১১ রান করা ক্যারিবীয় অধিনায়ক।
এর পরের ওভারে প্রথম উইকেটের দেখা পান আগের ম্যাচে অভিষেক হওয়া হাসান মাহমুদ। তার নিচু হওয়া ডেলিভারিতে বোল্ড হন ইতিবাচক খেলে ২৫ বলে ২০ রান করা বোনার, মাত্র ৭১ রানে ঘটে উইন্ডিজের সপ্তম উইকেটের পতন।
দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে তাদের বিপদ আরও বাড়ান মেহেদি মিরাজ। ইনিংসের ৩০তম ওভারের চতুর্থ বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন ২ রান করা রেইফারকে। আম্পায়ার আউট দেননি সেটি, রিভিউ নিয়ে উইকেট পায় বাংলাদেশ।
দলীয় নব্বইয়ের আগেই অষ্টম উইকেট হারানোর পর পাল্টা আক্রমণ করেন রভম্যান পাওয়েল ও দশ নম্বরে ব্যাটসম্যান আলজেরি জোসেফ। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে একশ পার করে দেন এ দুজন।
শেষতক তাদের ৪৬ বলে ৩২ রানের প্রতিরোধ গড়া জুটিটি ভাঙেন দারুণ বোলিংয়ে ক্যারিবীয়দের নাভিশ্বাস তোলা মোস্তাফিজ। জোসেফকে (১৭) গালিতে লিটন দাসের ক্যাচ বানান কাটার মাস্টার।
কিন্তু রভম্যান পাওয়েল যতটা সম্ভব লড়েছেন। তার লড়াইয়েই শেষ দুই উইকেটে ৬০ রান যোগ করেছে ক্যারিবীয়রা। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনিই আউট হয়েছেন। মেহেদি মিরাজকে ডাউন দ্য উইকেটে মারতে গিয়ে হয়েছেন স্ট্যাম্পিং। পাওয়েলের ৪১-ই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংসের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ।
বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল মেহেদি হাসান মিরাজ। ২৫ রানে তিনি নিয়েছেন ৪ উইকেট। এছাড়া দুর্দান্ত বোলিং করা মোস্তাফিজ ১৫ রানে ২টি এবং সাকিব আল হাসান ৩০ রানে শিকার করেন ২ উইকেট।
এসএএস/এমএমআর