বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেয়ার পরপরই পূর্বসূরী ডোনাল্ড ট্রাম্পের কিছু উল্লেখযোগ্য নীতি পরিবর্তনের কাজ শুরু করেছেন জো বাইডেন।
Advertisement
করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় পদক্ষেপ জোরদারসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ১৫টি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। অন্য নির্বাহী আদেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তন এবং অভিবাসন বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থানের ঠিক উল্টো।
যেসব আদেশে স্বাক্ষর করলেন বাইডেন-
নির্বাহী আদেশের বর্ণনা করে দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট বাইডেন ‘শুধু ট্রাম্প প্রশাসনের সবচেয়ে বড় ক্ষতিগুলোই সংশোধন করবেন না বরং তিনি দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।’
Advertisement
করোনাভাইরাস মহামারি সামাল দিতে ধারাবাহিক কিছু পদক্ষেপ নেয়া হবে। এতে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে চার লাখেরও বেশি মানুষ মারা গেছেন।
সব ধরনের কেন্দ্রীয় সরকারি দফতরে মাস্ক পরা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বাধ্যতামূলক করা হবে।
মহামারির বিষয়ে পদক্ষেপের সমন্বয় করতে একটি আলাদা দফতর গড়ে তোলা হবে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে বেরিয়ে যেতে ট্রাম্প প্রশাসনের শুরু করা প্রক্রিয়া স্থগিত করা হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাথে আবারো যুক্ত হওয়ার পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। তার মুখপাত্র স্টেফানি ডুজারিক জানান, মহাসচিব বলেছেন, সমন্বিত বৈশ্বিক পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে এটি ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ’।
Advertisement
বাইডেন আরো জানিয়েছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই হবে তার প্রশাসনের অন্যতম অগ্রাধিকার।
২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তিতে আবার যোগ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে নির্বাহী আদেশ সই করেছেন তিনি। গত বছর আনুষ্ঠানিকভাবে এই চুক্তি থেকে বের হয়ে এসেছিলেন ট্রাম্প।
বিতর্কিত কিস্টোন এক্সএল পাইপলাইনের অনুমোদন বাতিল করেছেন বাইডেন। এই পাইপলাইনের বিরুদ্ধে পরিবেশবাদী এবং আদিবাসী আমেরিকান গোষ্ঠীগুলো এক দশকের বেশি সময় ধরে লড়াই করে আসছে।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি বলেন, শুক্রবার কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে প্রথম বৈশ্বিক নেতা হিসেবে ফোন করার পর এ বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলবেন বাইডেন।
বেসরকারি অর্থায়নে নির্মাণাধীন পাইপলাইনটির মূল্য প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার। কোম্পানিটি কানাডার আলবার্টা থেকে নেব্রাস্কায় দৈনিক আট লাখ ৩০ হাজার ব্যারেল অপরিশোধিত তেল পরিবহন করতো। ২০১৫ সালে এই পাইপলাইন কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠায় আনা একটি বিলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন বারাক ওবামা। কিন্তু সেই নীতি বদলে পাইপলাইন নির্মানের অনুমতি দিয়েছিলেন ট্রাম্প।
অভিবাসনের উপর ট্রাম্প প্রশাসনের জারি করা জরুরি প্রস্তাবনা বাতিল করেছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। এই জরুরি প্রস্তাবনার অধীনে মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণে অর্থায়ন এবং বেশ কয়েকটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল।
এছাড়া অন্যান্য নির্বাহী আদেশগুলো বর্ণ এবং লৈঙ্গিক সমতা বিষয়ক।
বাইডেন প্রশাসনের আওতায় প্রথম অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকিকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তিনি কি প্রেসিডেন্ট বাইডেনের স্বার্থকে প্রচার করবেন নাকি ‘সাদামাটা সত্য’ উপস্থাপন করবেন।
এর উত্তরে তিনি বলেন, ‘মুক্ত ও স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের ভূমিকার প্রতি গভীর শ্রদ্ধার’ সাথে তিনি ‘সরকারে স্বচ্ছতা এবং সত্য ফিরিয়ে আনতে’ প্রেসিডেন্টের সাথে কাজ করবেন।
করোনাভাইরাসের নিষেধাজ্ঞার কারণে শপথ অনুষ্ঠান বেশ আলাদা হয়েছে। শপথ অনুষ্ঠানে মাত্র হাতে গোনা কয়েক জন উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান বিচারপতি জন রবার্টসের কাছে শপথ নেয়ার পর প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, ‘গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।’
শপথ নেয়ার পর হোয়াইট হাউসে যাওয়ার সময় টুইটার পোস্টে তিনি বলেন, ‘আমাদের সামনে যে সংকট রয়েছে তা সামাল দিতে অপচয় করার মতো কোনো সময় নেই।’
বাইডেনের আগে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন কমলা হ্যারিস। এই পদে দায়িত্ব নেয়া প্রথম নারী এবং প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ও এশিয়ান-আমেরিকান ব্যক্তিও তিনি।
শপথ অনুষ্ঠানে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন লেডি গাগা। এছাড়াও গান গেয়েছেন জেনিফার লোপেজ ও গার্থ ব্রুকস।
সূত্রঃ বিবিসি
এমকে/জেআইএম