কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম তানভীর আরাফাতকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। ভেড়ামারা পৌরসভা নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকালে কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহসিন হাসানের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগের বিষয়ে তাকে তলব করা হয়েছে।
Advertisement
আগামী ২৫ জানুয়ারি তানভীর আরাফাতকে সশরীরে আদালতে উপস্থিত হয়ে এ বিষয়ে কারণ দর্শাতে বলেছেন দেশের উচ্চ আদালত হাইকোর্ট। বুধবার (২০ জানুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন। সংশ্লিষ্ট আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. তাহিরুল ইসলাম আদেশের বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন।
তাহিরুল ইসলাম বলেন, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা পৌরসভা নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকালে একই জেলার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের ঘটনায় কুষ্টিয়া জেলার পুলিশ সুপারকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। আগামী ২৫ জানুয়ারি তাকে আদালতে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহসিন হাসানের সঙ্গে এসপি এস এম তানভীর আরাফাতের দুর্ব্যবহারের বিষয়ে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা একটি আবেদনের কপি সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ে পাঠানো হয়। এর অনুলিপি আইন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের আইজির দফতরেও পাঠানো হয়।
Advertisement
মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) রাতে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবর আবেদনের অনুলিপি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
আবেদনে কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহসিন হাসান বলেন, ‘কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা পৌরসভা নির্বাচনে ১৪ জানুয়ারি থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রথম শ্রেণির জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হই। এরপর ১৬ জানুয়ারি আমার দায়িত্বপালন অবস্থায় সকাল ১০টায় ভেড়ামারা পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে অবস্থানকালে জনৈক ভোটারের অভিযোগের ভিত্তিতে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করি। সেখানে কতিপয় ব্যক্তিকে ভোটকেন্দ্রের বুথের ভেতর লম্বা বেঞ্চে পোলিং এজেন্টদের সঙ্গে বসে থাকতে দেখি। তখন তাদের পরিচয়পত্র দেখাতে বললে তারা পরিচয়পত্র না দেখিয়ে প্রিসাইডিং অফিসারের স্বাক্ষরিত এ-ফোর সাইজের কাগজ দেখান।’
‘আমি সংশ্লিষ্ট প্রিসাইডিং অফিসারকে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বুথের বাইরে ডাকি। কথা বলা শুরু করতেই ওই ভোটকেন্দ্রে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাত ৪০-৫০ জন ফোর্সসহ প্রবেশ করেন। তিনি প্রবেশ করেই প্রিসাইডিং অফিসারকে উচ্চস্বরে তলব করেন। তাৎক্ষণিক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমানসহ কয়েকজন ফোর্স প্রিসাইডিং অফিসারকে আমার সাথে কথা বলতে না দিয়েই তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য চাপাচাপি করেন। তখন আমি নিজের পরিচয় দিয়ে বলি প্রিসাইডিং অফিসারের সাথে একটি বিষয়ে কথা বলছি। কথা শেষ হলে উনাকে নিয়ে যান। এরপরও এএসপি মোস্তাফিজুর রহমান ধমক দিয়ে প্রিসাইডিং অফিসারকে আমার সামনে থেকে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ সুপার তানভীর আরাফাত আমার দিকে অগ্রসর হন এবং আমাকে জিজ্ঞেস করেন, “আপনি কে? কী করেন এখানে?”
‘আমি আমার পরিচয় দিলে তিনি আরও ক্ষিপ্তস্বরে বলেন, “আপনি এখানে কী করেন? বেয়াদব, বের হয়ে যান এখান থেকে।” আমি পুলিশ সুপার ও তার ফোর্সদের আক্রমণাত্মক চরম অসৌজন্যমূলক ও মারমুখী আচরণে হতচকিত ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকি। এরপর এসপিসহ তার সঙ্গী ফোর্সরা আমার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় আমাকে উদ্দেশ্য করে একাধিকবার বলেন, “এসব লোককে পাঠায় কে? বেয়াদব ছেলে। এখানে কাজ কী আপনার? বের হয়ে যান এখান থেকে।” তারা কেন্দ্র থেকে চলে যাওয়ার পর আমি বিষয়টি ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করি।’
Advertisement
আবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘পুলিশ সুপার ও তার সঙ্গী ফোর্সদের আচরণ স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিধিমালা ২০১০ এর ৬৯, ৭০, ৭৪, ৮০ ও ৮১ বিধির সরাসরি লঙ্ঘন। তাই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রার্থনা করছি।’
এফএইচ/এমআরআর/এমকেএইচ