পিপলস লিজিংয়ের নামে কেনা শেয়ারের অংশ নিজ নামে হস্তান্তর করায় সাবেক চেয়ারম্যানসহ তিনজনকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি আরো দুটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিকেও এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি হাজির হতে বলেছেন হাইকোর্ট। অর্থাৎ মোট পাঁচজনকে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে হবে আদালতে।
Advertisement
অবসায়ন প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকা পিপলস লিজিংয়ের সাময়িক অবসায়ক (প্রবেশনাল লিক্যুডেটর) মো. আসাদুজ্জামান খানের এ সংক্রান্ত আবেদনের বিষয়ে শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি খুরশিদ আলম সরকারের একক কোম্পানি বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে আজ আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মেজবাহুর রহমান। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে শুনানি করেন কাজী এরশাদুল আলম।
আইনজীবী মেজবাহুর রহমান জানন, নিজের বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব থেকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইনান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের অনুকূলে শেয়ার ফেরত দিতে নির্দেশ কেন দেয়া হবে না, তার ব্যাখ্যা জানতে প্রতিষ্ঠানের সাবেক চেয়ারম্যান এম মোয়াজ্জেম হোসেনসহ তার পরিবারের আরো দুই সদস্যকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি আদালতে সশরীরে হাজির হয়ে তাদের এ জবাব দিতে বলা হয়েছে।
Advertisement
২০১৫ সালে এসএস স্টিল লিমিটেডের আইপিও (ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিং বা প্রাথমিক গণপ্রস্তাব) শেয়ার কেনার জন্য ৬ কোটি ২৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেয় পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইনান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড। পরে ২০১৮ সালে এসএস স্টিল লিমিটেডের আইপিও অনুমোদন পাওয়ার পর ওই টাকার বিপরীতে ১০ টাকা মূল্যের ৩১ লাখ ৩০ হাজার শেয়ার পিপলস লিজিংয়ের অনুকূলে স্থানান্তর করা হয়।
ওই একই সময় বাকি ৩১ লাখ ২৫ হাজার শেয়ার পিপলস লিজিংয়ের অনুকূলে স্থানান্তর না করে এম মোয়াজ্জেম হোসেন নিজের বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাবে স্থানান্তর করে নেন। তখন তিনি পিপলস লিজিংয়ের চেয়ারম্যান।
আইনজীবী মেজবাহুর রহমান বলেন, ‘উচ্চ আদালতের অনুমোদন নিয়ে পিপলস লিজিং অবসায়ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে কোম্পানি আইনের ৩৩১ ধারার অধীনে প্রবেশনাল লিক্যুডেটর মো. আসাদুজ্জামান খান ২০২০ সালের ৯ ডিসেম্বর একটি আবেদন করেন। সে আবেদনে মোয়াজ্জেম হোসেনের বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাবে স্থানান্তর করা ৩১ লাখ ২৫ হাজার শেয়ার পিপলস লিজিংয়ে ফেরত পাওয়ার নির্দেশনা চান। আদালত এর ব্যাখ্যা জানতে এম মোয়াজ্জেম হোসেন এবং ওই তিন প্রতিষ্ঠানসহ পাঁচজনকে তলব করেছেন।’
আইনজীবী জানান, বাকি দুজন হলেন ক্যাপ্টেন মোয়াজ্জেম হোসেনের পরিবারের সদস্য। তাদের একজন ফারজানা মোয়াজ্জেম ও এহসান-ই-মোয়াজ্জেম।
Advertisement
১৯৯৭ সালের ২৪ নভেম্বর আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পিপলস লিজিংকে অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর থেকে প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকের কাছ থেকে মেয়াদি আমানত ও বিভিন্ন ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা ধার করে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠানটির আমানত ছিল দুই হাজার ৩৬ কোটি টাকা। আর ঋণের পরিমাণ এক হাজার ১৩১ কোটি টাকা, এর মধ্যে খেলাপিই ৭৪৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ খেলাপি ঋণের হার ৬৬ শতাংশ।
২০১৫ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে লোকসান গুনে আসা প্রতিষ্ঠান এটি। খেলাপিদের নিকট থেকে টাকা আদায় করতে না পারায় আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই পিপলস লিজিং অবসায়নের জন্য আদালতে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই দিনই মামলার শুনানি শেষে প্রতিষ্ঠানটি অবসায়নে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন আদালত।
এফএইচ/ইএ/জেআইএম/জিকেএস