তথ্যপ্রযুক্তি

প্রযুক্তির অপব্যবহারে সাইবার অপরাধ বাড়ছে : আসিফ মহিউদ্দীন

প্রতিনিয়ত তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে। সেই সাথে বাড়ছে সাইবার অপরাধের পরিমাণও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুককেন্দ্রিক অপরাধের অভিযোগ শোনা যাচ্ছে বেশি। অনেকেই ফেসবুক আইডি হ্যাকের শিকার হচ্ছেন। অন্যদিকে ই-মেইল আইডি হ্যাক, ফেক আইডি তৈরি করে ব্ল্যাকমেইল, সেক্সটোরেশন, মোবাইল ব্যাংকিং জালিয়াতিসহ নানাবিধ প্রতারণার শিকার হচ্ছে মানুষ। এসব বিষয়ে আলাপকালে জাগো নিউজের পাঠকদের পরামর্শ দিয়েছেন সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) আসিফ মহিউদ্দীন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জুনায়েদ হাবীব-

Advertisement

জাগো নিউজ: শুরুতেই জানতে চাইব, সাইবার ক্রাইম কাকে বলে?

আসিফ মহিউদ্দীন: ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন- ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ই-মেইল, টুইটারের মাধ্যমে অপব্যবহারের দ্বারা সংঘটিত অপরাধগুলোকে আমরা সাইবার ক্রাইম বলি।

জাগো নিউজ: সাইবার স্পেসে কেমন অপরাধ হয়, অর্থাৎ এ অপরাধের ধরনগুলো কেমন?

Advertisement

আসিফ মহিউদ্দীন: বর্তমানে সাইবার ক্রাইম বা সাইবার অপরাধের মাত্রা ব্যাপক বেড়েছে। ডিজিটাল যুগে ইন্টারনেট এখন বেশ সহজলভ্য হয়ে গেছে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা এবং স্মার্ট ফোনের সহজপ্রাপ্যতার কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীর সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসমূহ ব্যবহারের নীতিমালা সম্পর্কে অনেকেরই নেই পরিপূর্ণ ধারণা। আবার ধারণা থাকলেও অনেকেই মানছেন না সেসব নীতিমালা। ফলে প্রযুক্তির অপব্যবহারের সাথে সাথে সাইবার অপরাধও বাড়ছে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, স্কুল-কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীরাই এ ধরনের অপরাধের সাথে জড়িত থাকে। যেমন- কোনো ব্যক্তির যদি কারোর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তখন হয়তো বা সে ব্যক্তি একটি ফেক আইডি খুলে বসেন ও ব্যক্তিগত কিছু ছবি অথবা মেসেজ দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করা শুরু করেন। কিছুদিন আগে আমাদের কাছে একটি অভিযোগ আসে।

এক ব্যক্তি তার ব্যাংক ডকুমেন্টসহ জমি সংক্রান্ত দলিল ফেসবুকে রেখে দিয়েছেন। পরবর্তীতে তার আইডি হ্যাক হয় এবং হ্যাকার ওই ব্যক্তিকে ব্ল্যাকমেইল করা শুরু করেন। এ বিষয়গুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি। আশা করছি কিছুদিনের মধ্যেই আমাদের সাইবার ক্রাইমের ফরেনসিক বিভাগের উদ্বোধন হবে। এরপর থেকে আমরা এ সমস্যাগুলোর দ্রুত সমাধান করতে পারবো।

জাগো নিউজ: সাইবার অপরাধ কেন সংঘটিত হচ্ছে বলে মনে করেন? কারা জড়াচ্ছে এসব অপরাধে? এ ব্যাপারে আপনার বিশ্লেষণ জানতে চাচ্ছি?

Advertisement

আসিফ মহিউদ্দীন: পুলিশ সর্বদা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছে। এ ধরনের অপরাগুলো সচরাচর হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে সামাজিক অবক্ষয়। বাবা-মার অনুশাসনেও ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। অনেক বাবা-মা লক্ষ্য করছেন না তার সন্তান আসলে মোবাইল বা ইন্টারনেট ব্যবহার করে কি করছে। আমাদের সময় প্রযুক্তির সহজপ্রাপ্যতা ছিল না।

বাসার বাইরে বের হওয়ার ক্ষেত্রে আগে জবাবদিহিতার মাত্রাও ছিল বেশি। কিন্তু এখন পরিবার কর্তৃক সন্তানদের ক্ষেত্রে জবাবদিহিতার ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। আগে বেশিরভাগ সময় ছেলে-মেয়েরা পাড়ার মাঠে বিভিন্ন খেলাধুলা করে সময় কাটাত।

কিন্তু বর্তমানে ছেলেমেয়েরা ইন্টারনেটে বেশিরভাগ সময় কাটাচ্ছে। ফলে তারা বিভিন্ন ধরনের অপরাধে সহজেই জড়িয়ে পড়ছে। আমরা এসব অপরাধ দমনে সর্বদা তৎপর। একই সাথে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধিতেও কাজ করছি।

জাগো নিউজ: বাংলাদেশে ই-কমার্সের বাজারে দ্রুত জনপ্রিয়তায় এসেছে। তবুও বিভিন্ন সময় ভুঁইফোড় পেজগুলোতে টাকা লেনদেনের ক্ষেত্রে পণ্য ক্রয় করাটা কতটুকু নিরাপদ?

আসিফ মহিউদ্দীন: ডিজিটাল বাংলাদেশ ই-কমার্স সাইট দিন দিন ত্বরান্বিত হচ্ছে। এক দেশ থেকে আরেক দেশে পণ্য কেনাবেচা হচ্ছে। এটি অবশ্যই প্রশংসনীয়। তবে ই-কমার্স সাইটগুলো পরিচালনা করতে অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। এর মধ্যে ই-কমার্স সাইটগুলোর সঠিক মনিটরিং, জবাবদিহিতা ও পণ্য কেনাবেচায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। তা নাহলে জনগণ প্রতারণার শিকার হবে।

জাগো নিউজ: সাধারণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য আপনার কোনো পরামর্শ আছে কী?

আসিফ মহিউদ্দীন: সাধারণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের উদ্দেশ্যে আমার পরামর্শ থাকবে বিভিন্ন ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের ক্ষেত্রে যেসব সিকিউরিটি মেজারমেন্ট রয়েছে সেগুলো যাতে সঠিকভাবে মেইনটেইন করে। এমন কোনো ব্যক্তিগত তথ্য অথবা ছবি যা পরবর্তীতে হ্যাকারের হাতে গেলে কোনোরকম ব্ল্যাকমেইলিংয়ের সুযোগ থাকবে সেগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

কারও সাথে আপত্তিকর কোনো আলাপচারিতায় অংশ নেয়া যাবে না। নিজের পাসওয়ার্ড কিছুতেই অন্য ব্যক্তির সাথে শেয়ার করা যাবে না। পাসওয়ার্ডের ক্ষেত্রে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে; যাতে সহজেই কেউ অনুমান করতে না পারে।

এমএমএফ/এমএস