মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য আশীর্বাদ। এ প্রকল্পের মাধ্যমে উৎপাদিত বিদ্যুৎ যেমন বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, অন্যদিকে প্রকল্প ঘিরে স্থানীয়দের মাঝেও রয়েছে আনন্দ। বিশেষ করে জমি অধিগ্রহণে পর্যাপ্ত অর্থপ্রাপ্তি।
Advertisement
এসব আনন্দের মাঝেও রয়েছে দুঃখের-গ্লানি। সেখানে খেটে খাওয়া মানুষ আর লবণ চাষিদের দুঃখই বেশি। তারা জানান, কক্সবাজারের মহেশখালীতে মাতারবাড়ি প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ায় মাঠ সংলগ্ন যেখান থেকে জোয়ারের লবণাক্ত পানি জমিতে প্রবেশ করতো, সেখানে বাঁধ দেয়া হয়েছে। ফলে লবণ পানি জমিতে আসে না। আগে সাগর থেকে আসা জোয়ারের পানি ধরে নিজ জমিতে শুকিয়ে লবণ তৈরি করে একটা লাভের মুখ দেখা যেত। এখন পানি আসে না, লবণ চাষও আর হয় না।
অন্যদিকে বাঁধ দেয়ার আগে যেসব জমিতে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি প্রবেশ করেছে, সেগুলোর প্রভাব রয়েছে আজও। জমিতে লবণাক্ত পানি থাকায় অন্য ফসলও ঠিকমতো চাষ হচ্ছে না। যদিও সম্প্রতি বৃষ্টির পানি জমিতে পড়ায় কিছু ফসল হয়েছে। তা তুলনামূলক খুব কম। এতে উভয় সংকটে মাতারবাড়ির চাষিরা।
মাতারবাড়ির সারডিল, মাইজপাড়া, মাইচপাড়া, খংশমিয়াজি, ফুলজানমুড়া এলাকা ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।
Advertisement
মমিন নামে এক কৃষক বলেন, ‘এর আগে আমাদের মাঠে জোয়ারের পানি আসত, লবণ পানির সঙ্গে মাছও প্রবেশ করত। এ পানি আমরা জমিতে রেখে লবণ তৈরি করতাম। মাত্র তিন কানি (১২০ শতক) জমিতে এক মৌসুমে ৭০০ থেকে ৯০০ মণ লবণ সংগ্রহ করা যেত। এতে কৃষকের ঘরে কোনো অভাব ছিল না, এখন অর্থের কষ্ট দিন দিন বাড়ছে।’
জিয়া নামে এক কৃষক বলেন, ‘বাঁধ দেয়ার ফলে আমাদের নানা দিক থেকে ক্ষতি হয়েছে। এর আগে আমরা চাইলেই বাড়ি থেকে বের হয়ে মাছ ধরে খেতে পারতাম, এটা বিক্রি করা হতো। এদিক থেকে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে একটা ভালো অর্থ পেতাম, সেটা আর হচ্ছে না।’
অন্যদিকে প্রকল্প সংলগ্ন জমি অধিগ্রহণের সময় পর্যাপ্ত দাম পাওয়ায় অনেকের হয়েছে দালানকোঠা। কেউ কেউ গড়ে তুলেছেন ব্যবসা, শহরে করেছেন বাড়ি।
মাসুদ নামে একজন জানান, মাতারবাড়ি প্রকল্প এলাকায় দুই কানি জমি থাকায় ৫৪ লাখ টাকা পেয়েছি। এটা দিয়ে আমার ব্যবসা-বাড়ি হয়েছে। অনেকে আবার এই টাকা দিয়ে শহরে জমি কিনেছেন। তবে যাদের জমি সেখানে ছিল না, যারা লবণ চাষি বা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত তাদের জন্য ক্ষতি হয়েছে।
Advertisement
লবণ চাষি বা মাছ ধরে যারা জীবিকা নির্বাহ করেন তাদের জন্য কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কি-না, এ ব্যাপারে জানতে স্থানীয় চেয়ারম্যান মোহাম্মদ উল্লাহকে ফোন দেয়া হলেও তার সাড়া মেলেনি।
প্রকল্প সূত্র জানায়, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে মোট খরচ হচ্ছে ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। তার মধ্যে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) ঋণ হিসেবে দিচ্ছে ২৮ হাজার ৯৩৯ কোটি তিন লাখ টাকা। বাকি সাত হাজার ৪৫ কোটি টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার ও সিপিজিসিবিএল। প্রকল্পটি ২০২৪ সালে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিপিজিসিবিএল) আওতায় বাস্তবায়নাধীন এই বিদ্যুতের প্রকল্পে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে প্রথম ইউনিট এবং জুলাইয়ে দ্বিতীয় ইউনিট চালুর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০২৬ সালের জুলাইয়ে ওয়ারেন্টি পিরিয়ড সমাপ্তির লক্ষ্য নিয়ে বর্তমানে কাজ চলছে।
ইএআর/এমএএস/পিডি/সায়ীদ আলমগীর/এসএইচএস/এইচএ/জেআইএম