হজরত উম্মে ইয়াস। হজরত উমামা বিনতে হারেছ রাদিয়াল্লাহু আনহার মেয়ে। বিয়ের পর স্বামী বাড়ি যাওয়ার আগে মেয়ের প্রতি অতুলনীয় ১০ উপদেশ দিয়েছেন। যা আজও ইতিহাসের পাতায় উজ্জ্বল। বাস্তব জীবনের সব নারীর জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা।
Advertisement
মেয়ে উম্মে ইয়াসের বিয়ের পর বিদায়ক্ষণে মা হজরত উমামা বিনতে হারেছ রাদিয়াল্লাহু আনহা অশ্রুসিক্ত নয়নে পরম মমতায় উম্মে ইয়াসকে কাছে টেনে নিয়ে জীবনঘনিষ্ঠ কিছু উপদেশ দেন। তিনি বলেন, ‘হে আমার প্রিয় মেয়ে! তোমাকে আমি ১০টি নসিহত করছি। এগুলো তুমি খুব ভালো করে স্মরণ রাখবে। তাহলো-- সব সময় অল্পতেই সন্তুষ্ট থাকবে! অল্পেতুষ্টি ও পরিতৃপ্তিকে সবর্দা নিজের সঙ্গী বানিয়ে নেবে।- যে কোনো আদেশ পালন করার জন্য সবসময় নিজেকে প্রস্তুত রাখবে।- যেসব স্থানে সচরাচর চোখ যায় সেদিকে তুমি সতর্ক দৃষ্টি রাখবে! আর দুর্গন্ধযুক্ত স্থানের দিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখবে! যেন তোমার অপ্রীতিকর কোনো কিছু তার চোখে না পড়ে এবং কোনো দুর্গন্ধ যেন তার নাকে না যায়।- সে যখন খেতে বসবে, তুমি যত্মসহকারে তার তদারকি করবে। আর তার ঘুমের সময় যথাসম্ভব শান্তভাব ও নীরবতা বজায় রাখবে। কারণ, ক্ষুধা মেজাজের মধ্যে উষ্ণতা সৃষ্টি করে আর ঘুমের অভাব ক্রোধের উদ্রেক করে।- তার ঘর-বাড়ি ও ধন-সম্পদ আন্তরিকভাবে সংরক্ষণ করবে। নিজের ও পরিবারের প্রতি খুব যত্নশীল হবে। কারণ, ধন-সম্পদ সংরক্ষণ করতে পারা উত্তম ব্যবস্থাপনার পরিচায়ক। আর নিজের ও পরিবারের প্রতি যত্ন নিলে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় হয়।- স্বামীর গোপন কথার হেফাজত করবে। সে হয়ত তোমার কাছে তার একান্ত গোপন কথা বলবে। তুমি কখনও কোনো অবস্থাতেই তার সে গোপন কথাগুলো কারো কাছে প্রকাশ করবে না। যদি প্রকাশ কর, নিজের বিশ্বস্ততা হারাবে।- যদি সে তোমাকে কোনো কাজের আদেশ করে তৎক্ষণাৎ সেটা পালন করার চেষ্টা করবে। তার কোনো আদেশ অমান্য করো না এবং তার কোনো হুকুমের অবাধ্য হয়ো না। যদি তার অবাধ্য হও, সে ক্রোধান্বিত হয়ে তোমার সঙ্গে বিরূপ আচরণ করবে।- স্বামীর বিষন্নতার সময় সমবেদনা প্রকাশ করবে। তার যখন হৃদয় ভঙ্গ বা মনোক্ষুন্ন থাকবে; সে যখন বিষন্ন থাকবে তখন তুমি তার সামনে আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করো না। এটা খুবই গর্হিত একটা অভ্যাস। আবার সে যখন আনন্দিত ও খুশি থাকবে, তখন তুমি তার সামনে গোমরামুখ ও বিষন্ন থেকো না। কেননা এতে সে ভীষণ বিরক্তি বোধ করবে।
- তার সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায় এমন কাজগুলোর প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব দিবে। তাহলে সেও এমন কাজগুলো করবে, যেগুলোর মাধ্যমে তোমার সম্মান ও মর্যাদা বাড়বে।
- আর যেভাবে চললে স্বামী খুশি হবে, যেভাবে চললে তার মর্জি মতো হবে তুমি সেভাবেই চলার চেষ্টা করবে। তাহলে সেও এমনভাবে চলবে, যেভাবে চললে তুমি খুশি হবে।
Advertisement
বিশেষ করে মনে রাখবে!নিজের পছন্দের উপর অন্যের পছন্দকে এবং নিজের বাসনার উপর অন্যের বাসনাকে অগ্রাধিকার দেয়া ছাড়া কেউ কখনো কারো প্রিয় ও ভালোবাসার পাত্র হতে পারে না। অন্যের কাছে নিজেকে প্রিয় ও আপন করার জন্য অনেক কিছুই বিসর্জন দিতে হয়।
হজরত উম্মে ইয়াস স্বামীর ঘরে দিয়ে মা উমামা বিনতে হারেফ রাদিয়াল্লাহু আনহার প্রতিটি নসিহত যথাযথভাবেই পালন করেনছিলেন। এ বরকতে মহান আল্লাহ তাআলা তার জীবনকে করেছিল সুন্দর ও সুখময়। আল্লাহ তাআলা তাকে দান করেছিলেন ৭ ছেলে সন্তান। তারা সবাই পর্যায়ক্রমে ইয়েমেরন বাদশাহ হয়েছিলেন।
সুতরাং সব মুমিনা নারীর উচিত, উল্লেখিত উপদেশগুলো নিজেদের জীবনে গ্রহণ করা। সুখী দাম্পত্য জীবন পাওয়ার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব নারীকে হজরত উমামা বিনতে হারেছ রাদিয়াল্লাহু আনহার দেয়া নসিহতগুলো মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Advertisement
এমএমএস/এমকেএইচ