ভ্রমণ

কালিম্পংয়ের ভুতুড়ে বাড়িতে ছুটি কাটিয়েছেন যারা

পাহাড়ি এক স্থান হলো কালিম্পং। পাহাড়ের উপত্যকায় তিস্তা নদী প্রবহমান। তিস্তা কালিম্পংকে সিকিম রাজ্য থেকে আলাদা করেছে। লাল মাটির কালিম্পংয়ের চারপাশে সবুজ প্রকৃতি, পাহাড়ের নিচে বহমান নদী সব মিলিয়ে স্থানটি পর্যটকদের পাগলের মতো আকর্ষণ করে। এ ছাড়াও কালিম্পংয়ে রয়েছে একটি বাড়ি, সেখানে ছুটি কাটিয়েছেন অনেক নায়ক-নায়িকাসহ বিখ্যাতরা। অনেকের মতে, বাড়িটি না-কি ভুতুড়ে।

Advertisement

কালিম্পংয়ের মর্গ্যান হাউস হন্টেড হিসেবে বেশ পরিচিত। গ্রীষ্মকালে বসবাসের জন্য ১৯৩০ সালে পাহাড়ের উপরে একটি বিলাসবহুল বাড়ি তৈরি করেন জর্জ মর্গ্যান এবং তার স্ত্রী। নিজেদের পদবীর সঙ্গে মিলিয়ে তারা বাড়ির নাম দেন মর্গ্যান হাউস।

মর্গ্যান দম্পতি মারা যাওয়ার পর কোনো উইল না থাকায় ওই বাড়ি সরকারের হাতে চলে যায়। চারপাশে গাছ-গাছালিতে ভরা এ মর্গ্যান হাউসে অনেক সেলিব্রেটি প্রায়ই ছুটি কাটাতে আসতেন। উত্তমকুমার, সুপ্রিয়াদেবী, কিশোরকুমার, উৎপল দত্তদের প্রিয় জায়গা ছিল এটি।

তবে অনেকের মতে, মর্গ্যান হাউসে না-কি ভূত-প্রেতের দেখা মেলে। রাতে না-কি মর্গ্যান হাউসে কারা ঘুরে বেড়ায়। তাদের উপস্থিতি টের পাওয়া গেলেও দেখা মেলেনি কারো। ব্রিটিশ উপনিবেশের বাড়িটিকে তাই অনেকেই ভুতুড়ে বাড়ি বলে।

Advertisement

স্থানীয়দের বিশ্বাস, মর্গ্যান এবং তার স্ত্রীর আত্মা না-কি এখনো নিজেদের প্রিয় বাড়ির মায়া ত্যাগ করতে পারেনি। অনেকেই সেখানে বিভিন্ন ছায়া, আওয়াজসহ ভৌতিক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন।

যদি কালিম্পংয়ে গিয়ে মর্গ্যান হাউসে রাত কাটাতে চান; তাহলে অবশ্যই আগে থেকে সরকারি এ গেস্ট হাউসের জন্য অনলাইনে বুকিং দিতে হবে।

এবার জেনে নিন কালিম্পংয়ের মাটি কেন লাল?ফাইলিট ও শিস্টের অতিরিক্ত উপস্থিতির কারণে সেখানকার মাটির রং কালো। তবে কিছু কিছু জায়গার মাটি লাল। শিবালিক পর্বত অন্যান্য হিমালয়ের পাদদেশীয় পার্বত্য এলাকার মতোই ঢালু ও নরম মাটিবিশিষ্ট। বর্ষাকালে এখানে প্রায়ই ধস নামে। কালিম্পং থেকে হিমালয়ের তুষারাবৃত উঁচু উঁচু শৃঙ্গগুলো দেখা যায়। মাউন্ট কাঞ্চনজঙ্ঘা ৮ হাজার ৫৯৮ মিটার উঁচু। যা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম শৃঙ্গ। কালিম্পং থেকে খুব স্পষ্টভাবে দেখা যায়।

যা যা দেখবেন কালিম্পং গেলে

Advertisement

ক্যাকটাসের বাগান: মর্গ্যান হাউস থেকে ২০ কদম হাঁটলেই দেখা মিলবে ক্যাকটাস নার্সারি। বাহারি রূপের ক্যাকটাসে মুগ্ধ হবেন উদ্ভিদপ্রেমীরা। ১০ হাত লম্বা ক্যাকটাস থেকে শুরু করে এক ইঞ্চি, সবই দেখতে পাবেন সেখানে। ইচ্ছে করলে সেখানকার নার্সারি থেকে পছন্দসই ক্যাকটাস কিনতেও পারবেন পর্যটকরা। সেখানে নার্সারির ভেতরে রয়েছে কটেজ; চাইলে সেখানেও থাকতে পারবেন। নার্সারি থেকে কিছুটা দূরে রয়েছে গল্ফক্লাব। ঘুরে আসতে পারবেন সেখান থেকেও।

পাহাড়ে ঘেরা কালিম্পং: কালিম্পং নগরকেন্দ্র ডেলো পাহাড় ও দুরপিন পাহাড়ের মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী একটি শৈলশিরার ওপর অবস্থিত। এর উচ্চতা ১ হাজার ২৪৭ মিটার অর্থাৎ ৪ হাজার ৯১ ফুট। দক্ষিণ কালিম্পংয়ের এ স্থানটির সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। এ পাহাড় থেকে স্পষ্টভাবে দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা। এখান থেকে সিকিম, নাথুলা, টাইগার হিল, কার্শিয়ং, শিলিগুড়ি সবই বেশ কাছে।

দুরপিন দারাতে রয়েছে বৌদ্ধমঠ জ্যাং ধক পালরি ও ফোড্যাং গুম্ফা। ১৯৭৫ সালে দালাইলামার তত্ত্বাবধানে এ তিব্বতি বৌদ্ধ মঠ প্রতিষ্ঠিত হয়। বৌদ্ধ স্থাপত্যের এক অসাধারণ নিদর্শন এ মঠ।

সর্বোচ্চ পাহাড়: কালিম্পংয়ের সর্বোচ্চ পাহাড়ের নাম ডেলো। অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের কাছে এখানকার প্রধান আকর্ষণ হলো- প্যারাগ্লাইডিং, ট্রেকিং এবং হর্স রাইডিং। এসব করে ক্লান্ত হয়ে গেলে ডেলো পার্কে বসে বিশ্রামও নিতে পারবেন। সেখানে থাকার ব্যবস্থাসহ বাহারি জিনিসপত্র কেনার সুবিধাও রয়েছে।

পাহাড়ি স্কুলের সন্ধান: ১২১ বছর পুরোনো এক স্কুলের দেখা পাবেন কালিম্পংয়ে। সেখানে রয়েছে ডক্টর গ্রাহাম হোমসের স্কুল। দরিদ্র শিশুদের পড়ালেখার সুবিধায় ১৯০০ সালে স্কুলটি স্থাপন করেন স্কটিশ মিশনারি ডক্টর অ্যান্ডারসন গ্রাহাম। ৫০০ একরের ওপর নির্মিত এ স্কুলের নকশায় অনেকটা স্কটল্যান্ডের ছাপ রয়েছে। বর্তমানে বিলাসবহুল স্কুলটি পর্যটকদের প্রিয় স্থান।

কালিম্পংয়ের আবহাওয়া: কালিম্পংয়ে ৫টি ঋতুর দেখা মেলে- বসন্ত, গ্রীষ্ম, শরৎ, শীত ও বর্ষা। সেখানকার বার্ষিক তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে সর্বনিম্ন ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠা-নামা করে। সেখানকার গ্রীষ্মকালে প্রকৃতি সাজে তার মনের মতো।

গ্রীষ্মের গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গ্রীষ্মের পরে আসে বর্ষা, যা স্থায়ী হয় জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। বর্ষাকালে প্রচুর বৃষ্টি হয়। ফলে মাঝেমাঝে ধস নেমে শহর অবশিষ্ট ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শীতকাল। তখন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বর্ষা ও শীতে কালিম্পং ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকে।

জেএমএস/এসইউ/এমকেএইচ