পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না হলেও সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে সম্ভব্য প্রার্থীরা তাদের প্রচারণা শুরু করেছেন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়ন পেতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে বিএনপির প্রার্থীরা নির্বাচনের পরিবেশ ও দলীয় নেতাকর্মীদের আটক করে হয়রানি করার অভিযোগ আনছেন। নির্বাচনকে ঘিরে বেলকুচির পাড়া, মহল্লা, রাস্তা-ঘাটসহ সর্বত্র ডিজিটাল ব্যানার, ফেস্টুনে ছেঁয়ে গেছে। দলীয় মনোনয়ন পেতে অনেকে কৌশলে নানা ধরনের প্রচারণা চালানোর পাশাপাশি শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন।২০০৪ সালে ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে বেলকুচি পৌরসভা গঠিত হয়। এ পৌরসভায় প্রায় ৬০ হাজার ভোটার রয়েছেন। ২০১০ সালে এ পৌরসভায় প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর আগের ছয় বছর প্রশাসক দিয়ে পৌরসভা পরিচালনা করা হয়েছে। ২০১০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আলহাজ্ব মফিজ উদ্দিন খান লাল বিএনপির আব্দুর রাজ্জাক মণ্ডলকে সামান্য ভোটে পরাজিত করে মেয়র পদে নির্বাচিত হন। নতুন এই পৌরসভায় নানাবিধ সমস্যা থাকলেও খুব বেশি উন্নয়ন হয়নি বলে এলাকার সাধারণ মানুষের অভিযোগ। উপজেলার রাস্তাঘাট উন্নয়ন হলেও পৌর এলাকার রাস্তাঘাট উন্নয়ন হয়নি। পৌরসভার প্রাণকেন্দ্র মুকুন্দগাঁতীতে যানজট নিত্য নৈমত্তিক ব্যাপার। একটি বাসট্যান্ড তৈরি করার কথা থাকলেও সেটি কোনো আলোর মুখ দেখেনি। সাবেক মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস এই আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হবার পর তিনি পৌরসভাসহ এলাকার অনেক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালিয়েছেন। বিশেষ করে পৌরসভার নতুন দৃষ্টি নন্দন ভবনটিও তিনি নির্মাণ করে দিয়েছেন। দৃষ্টি নন্দন ভবন হলেও পৌরসভার অধীনে কোনো উন্নয়নের ছোয়া দেখা যায় না বলে পৌরবাসী অভিযোগ করেছেন। বেলকুচির মুকুন্দগাঁতী মহল্লার রেজাউল হক জাগো নিউজকে জানান, বিগত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্বাচিত হলেও পৌরসভার তেমন উন্নয়ন হয়নি। মৎস্য মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের উন্নয়নগুলো বাদ দিলে পৌরসভার তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। একই সঙ্গে মেয়র হিসেবে তিনি তার ভবন নিয়েই বেশি ব্যস্ত ছিলেন। এবারের নির্বাচনে একজন সঠিক ব্যক্তিকে মেয়র হিসেবে দেখতে চাই। আওয়ামী লীগ বা বিএনপি নয় যে পৌরসভার উন্নয়ন করতে পারবে বলে পৌরবাসী মনে করবে তাকেই ভোট দিয়ে মেয়রের আসনে বসানো হবে। বেলকুচি পৌরসভার বর্তমান মেয়র আলহাজ্ব মফিজ উদ্দিন খান লাল বিগত নির্বাচনের আগে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জয় লাভ করেন। সাবেক মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের আস্থা ভাজন হয়ে তিনি পৌর ভবন নির্মণসহ নানা উন্নয়ন কাজ করলেও পৌরবাসী তাতে সম্পূর্ণভাবে খুশি নন। তিনি বলেন, এই পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত মেয়র হিসেবে দ্বায়িত্ব নিয়ে তিনি অনেক কাজ করেছেন। একটি অগোছালো পৌরসভাকে গোছাতে অনেক সময়ের প্রয়োজন। মাত্র পাঁচ বছরে তা সম্ভব নয়। এবার দল তার উপর আস্থা রাখলে তিনি বাকি কাজগুলো সম্পন্ন করবেন। বেলকুচি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও ৪নং দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান বেগম আশানুর বিশ্বাস এবারের পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র হিসেবে নির্বাচন করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে তিনি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবার জন্য কাজ করে চলেছেন। আশানুর বিশ্বাস বলেন, রায়দৌলতপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। একই সঙ্গে তিনি দলের নেতা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। পৌরসভার ভোটারদের সঙ্গে রয়েছে তার নিবিড় সম্পর্ক। যে কারণে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাকে মনোনয়ন প্রদান করা হলে নির্বাচনে জিতে তিনি পৌরসভার নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধিসহ সকল সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করে যাবেন।বেলকুচি পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ভিপি, উপজেলা যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মীর সেরাজুল ইসলামও এবারের পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের আশায় কাজ করছেন। দলীয় টিকিট হাতে পেতে তিনি সকল মহলে তদবিরসহ নির্বাচনী প্রচারণাও চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, বিগত চার বছর ধরে তিনি পৌরসভার নির্বাচন করার জন্য নিজেকে তৈরি করেছেন। পৌরবাসীর সঙ্গে রয়েছে তার আত্মীয়ের মতো সম্পর্ক। পৌরসভার সকল সমস্যা সম্পর্কেও তিনি জানেন। নির্বাচিত হতে পারলে তিনি সে সকল সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করবেন। বিশিষ্ট শিল্পপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান রতনও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে মরিয়া। যুবনেতা হিসেবে তিনি উপজেলার সকল স্তরের মানুষের কাছে পরিচিত ও আলোচিত। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় সমর্থন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে পরে তিনি ভোট বর্জন করেন। তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেলেও পৌরসভার নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন পাবেন বলে আশা করেন। দলীয় মনোনয়ন পেলে এবং নির্বাচিত হলে তিনি সকলকে সঙ্গে নিয়ে পৌরসভার সমস্যা দূরীকরণে কাজ করবেন।উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, বেলকুচি ডিগ্রি কলেজের প্রথম ভিপি ফজলুল হক সরকারও আওয়ামী লীগের নমিনেশনে নির্বাচন করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি জানান, দলীয় সমর্থন পেলে পৌরসভায় মেয়র পদে নির্বাচন করবেন। এদিকে বিএনপিরও একাধিক নেতা দলীয় মনোনয়ন পেতে কাজ করে যাচ্ছেন। তবে সবার থেকে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক মণ্ডল দলীয় মনোনয়নে অনেকটাই এগিয়ে। গত পৌর নির্বাচনে স্বল্প ভোটে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মফিজ উদ্দিন লাল খানের কাছে পরাজিত হন। এবার দলীয় মনোনয়ন পেলে নির্বাচিত হবেন বলেও অনেকে মনে করছেন। তিনি বলেন, পৌরসভা নির্বাচনের ঘোষণার পর থেকেই বিএনপির উপর নির্যাতনের মাত্রা বেড়েছে। অনেক নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। নেতাকর্মীদের জেলে রেখে নির্বাচন করা সম্ভব নয়। এদিকে দলও এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। দল যদি নির্বাচনে আসে ও তাকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয় ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে নির্বাচনে তিনি জয়লাভ করবেন বলে আশা রাখেন। উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মনোয়ার চৌধুরী বাবুও বিএনপি দলীয় মনোনয়ন পেতে আগ্রহী। দলীয় সমর্থন পেতে তিনি দিনরাত এক করে কাজ করে যাচ্ছেন। একই সঙ্গে উপজেলা বিএনপির সাবেক প্রচার সম্পাদক আলতাফ হোসেন প্রামাণিক, ও পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম মজনু খানও দলীয় সমর্থন পেতে কাজ করে যাচ্ছেন বলে শোনা গেলেও এখন পর্যন্ত তাদের কর্মকাণ্ড খুব একটা চোখের পড়ার মতো নয়। সবকিছু মিলিয়ে এবারের পৌরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। নির্বাচনে যেই দলীয় প্রার্থী হোক না কেন সকলে একযোগে কাজ করে তাদের প্রার্থীকে জয়যুক্ত করে প্রমাণ করতে চান জনমত তাদের দিকে। অপরদিকে বিএনপির নেতাকর্মীরাও তাদের মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীদের বিজয়ী করে জানিয়ে দিতে মরিয়া জনমত তাদের দিকে। যে কারণে আগামী পৌর নির্বাচনে বেলকুচিতে একটি হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে পৌরবাসী মনে করছেন। বাদল ভৌমিক/এমজেড/পিআর
Advertisement