রংপুরের গঙ্গাচাড়ায় রয়েছে বেনারসি পল্লী। এখানেই আছে বিপণন ব্যবস্থা ও কারখানা। চাকরির সুবাদে লালমনিরহাট থাকতাম। যখন অফিস কিংবা ব্যক্তিগত কাজে মহীপুর ব্রিজ হয়ে রংপুর যাই; তখন কিন্তু বেনারসি পল্লী মাড়িয়েই যেতে হয়।
Advertisement
অর্থাৎ রংপুর মেডিকেল আর মাঝামাঝি গজঘণ্টা ইউনিয়নের তালুক হাবু গ্রাম অবস্থিত। এ গ্রামেই রয়েছে এ পল্লী- বিপণন কেন্দ্র ও কারখানা। মেইন রোডের দু’ধারে বিপণন কেন্দ্র তাক লাগাবে। পিছু টানবে ভেতর দিয়েই যেতে। তবে এ রোডে বাস সার্ভিস চালু হয়নি। অটো বা মাইক্রোবাস চলে।
রংপুর শহর থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত গঙ্গাচড়া উপজেলায় গড়ে উঠেছে একটি বেনারসি পল্লী। প্রায় ১০০ তাঁতি মিলে ওই এলাকায় বেনারসি পল্লী গড়ে তোলেন। জানা গেছে, মঙ্গা কবলিত এই উপজেলার গজঘণ্টা ইউনিয়নের তালুক হাবু গ্রামসহ আশপাশের আরও ৪-৫টি গ্রামে গড়ে উঠেছে এই বেনারসি পল্লী।
হাবু বেনারসি পল্লীসহ গঙ্গাচড়ার বিভিন্ন এলাকায় ১৩২ জন মালিকের প্রায় ৬০০ তাঁত রয়েছে। এখানে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার পুরুষ ও ৪০০ নারী শ্রমিক কাজ করছেন। প্রতিবছর এ পল্লী থেকে প্রায় এক হাজার পিস শাড়ি উৎপাদন করা হয়। এসব শাড়ি দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি হয়। এলাকায় ৬৭টি পরিবারের মধ্যে সমন্বয় করে তাঁত স্থাপনের জন্য ৬৮০ বর্গফুট আয়তনের ৪০টি শেড নির্মাণ করা হয়েছে। এসব শেডে চলছে বেনারসি শাড়ি তৈরির কাজ।
Advertisement
তাঁতের মাকুরের খটখট শব্দে মুখরিত গঙ্গাচড়ার তালুক হাবুর বেনারসি পল্লী। পূজা ও ঈদের সময় দম ফেলার সময় পান না কারিগররা। এমনকি মালিকেরাও। শেষ মুহূর্তে শাড়ি, থ্রি-পিস ও পাঞ্জাবি তৈরিতে ব্যস্ত থাকেন তারা। এখানকার উৎপাদিত শাড়িগুলোর রয়েছে বৈচিত্র্যময় সব নাম। বেনারসি, বারবুটা, কুচিকাট, ফুলকলি প্রভৃতি।
বেনারসি শাড়ির রং, কারুকাজ ও নকশায় বেশ বৈচিত্র্য দেখা যায়। ধরন বা নকশার ভিত্তিতে বেনারসি শাড়ির রয়েছে বিভিন্ন নাম। যেমন- ব্রোকেট কাতান, পিরামিড কাতান, মিরপুরী রেশমি কাতান, বেনারসি কসমস, চুনরি কাতান, প্রিন্স কাতান ইত্যাদি।
রংপুরের তাজহাট বাড়িতেও যেতে পারেন। শহরের কাছে অবস্থিত। যেতে পারেন শহর থেকে ১০-১২ কিলোমিটার দূরের পায়রাবন্দে। বেগম রোকেয়ার বাস্তুভিটায়। এখানকার স্মৃতিকেন্দ্র সরকারি বা সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বন্ধ থাকে।
তাজহাট জমিদার বাড়ি
Advertisement
রংপুর শহরের তাজহাট জমিদার বাড়ি ইতিহাস-ঐতিহ্যের স্মারক। শহরের কাছে ইতিহাস বিজড়িত সংগ্রহশালার ঐতিহাসিক প্রাসাদটি পর্যটকদের মুগ্ধ করে। রংপুর রেলস্টেশন থেকে রিকশা কিংবা অটোবাইকে অল্প সময়ে পৌঁছানো যায় তাজহাট জমিদার বাড়িতে।
শহর থেকে দক্ষিণ-পূর্বদিকে ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এ জমিদার বাড়ি। ১৯৮৪ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের বেঞ্চ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ২৪ কামরাযুক্ত মার্বেল পাথর সংবলিত ফ্লোর দৃষ্টিনন্দন। আর আশপাশের গাছ-গাছালি, পুকুর এবং ফুলের বাগান এ স্থানকে নৈসর্গিক করে তুলেছে।
১৯৯৫ সালে প্রত্নতত্ত্বিক অধিদফতর ইমারতটিকে পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করে। ২০০২ সালে এটাকে রংপুর জাদুঘর হিসেবে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ২০ টাকা প্রবেশ ফি দিয়ে অনুপম এ প্রাসাদটি দেখতে পারেন দর্শনার্থীরা। সম্মুখভাগে প্রধান প্রাসাদটির দ্বিতীয় তলায় ওঠা-নামার জন্য একটি বিরাট গ্যালারির মতো চমৎকার সিঁড়ি রয়েছে।
নিচ তলায় অফিস। সেখানে সংরক্ষিত রয়েছে-বিভিন্ন হস্তলিপি, পুরাতন পত্রিকা (রংপুর দর্শনা ২৪ নভেম্বর ১৯২৪), শিবপত্নী পার্বতীর মূর্তি, মাটির পাত্র, বিভিন্ন পোড়ামাটির ফলক, পুর্বকার রাজা বাদশাদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র বা মৃৎপাত্র, প্রজা বিদ্রোহের নেত্রী সরলা দেবীর ব্যবহৃত সেগুনকাঠের বাক্স, মঙ্গলকোট ও সীতাকোট (বগুড়া), মহাস্থানগড় থেকে সংগৃহীত বিভিন্ন পোড়ামাটির ফলক, নারীমূর্তি, লোহার দ্রব্যাদি, সাঁওতালদের ব্যবহৃত তীর, লাল পাথরের টুকরো, পাহাড়পুর বিহার থেকে সংগৃহীত নারীমূর্তি, পাথরের নুড়ি, বদনা প্রভৃতি।
সাহিত্য পরিষদ রংপুর কর্তৃক সরবরাহকৃত হাতের লেখা মহাভারত, রামায়ণ, চেতন্যচারী অমৃত, শান্তি শতক, গাছের বাকলে লেখা সংস্কৃত হস্তলিপি। এ ছাড়াও রয়েছে বেগম রোকেয়ার হাতে লেখা চিঠি, তুলট কাগজে লেখা হস্তলিপি, সম্রাট আওরঙ্গজেব, কবি শেখ সাদী, বাদশা নাসির উদ্দিনের হাতের লেখা কোরআন শরীফ। এমনকি ছোট্ট কোরআন শরীফও এখানে সংরক্ষিত রয়েছে। সেখানে গিয়ে পর্যটকরা হারিয়ে যান অতীতে। উল্টাতে থাকেন ইতিহাসের পাতা।
যাতায়াত ও থাকা-খাওয়া:
ঢাকা বা যেকোনো প্রান্ত থেকে বাস বা ট্রেনে রংপুর। এরপর বাংলাদেশ মোড় থেকে অটোতে যেতে হবে বেনারসি পল্লী। থাকা খাওয়ার জন্য রংপুরে বিভিন্ন মান ও দামের আবাসিক ও খাওয়ার হোটেল আছে। রংপুর রেলস্টেশন বা বাসস্টেশন থেকে রিকশা কিংবা অটোবাইকে অল্পসময়ে পৌঁছানো যায় তাজহাট জমিদার বাড়িতে।
লেখক: কবি ও প্রাবন্ধিক
জেএমএস/এমকেএইচ