চারদিকে চলছে শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচি। বিভিন্ন সংগঠন থেকে প্রতিদিনই শীতবস্ত্র বিতরণের কোনো না কোনো কার্যক্রম কোথাও না কোথাও দেখা যায়। চাঁদপুরও এর ব্যতিক্রম নয়। প্রতিদিন পত্রিকায় শীতবস্ত্র বিতরণের বেশ কিছু খবরও দেখা যায়। চারপাশে এত শীতবস্ত্রের ছড়াছড়িতেও শীতে কাঁপছে চাঁদপুরের বেদে পল্লীর প্রায় দেড় হাজার মানুষ।
Advertisement
হতদরিদ্র, অসহায় ও শীতার্ত এ মানুষগুলো প্রতিদিন অপেক্ষায় থাকেন কেউ এসে এই বুঝি কম্বল দেবে। কিন্তু সে স্বপ্ন খুব কিঞ্চিতই বাস্তব রূপ নেয়।
চাঁদপুরের মূল বেদে পল্লীটি পাল বাজার চৌধুরী ঘাট সেতুর ঠিক দুই পাশ ঘিরে নদীর তীরে। এখানে প্রায় ৩শ বেদে পরিবারের বসবাস এবং ছোট-বড় সদস্য মিলে প্রায় ১ হাজার ৫শ মানুষ রয়েছে এখানে। এছাড়াও শহরের বিভিন্ন জায়গায় আছে আরও ৫শ। ৩শ পরিবারের মাঝে সর্বোচ্চ ৫০টি পরিবার কম্বল পেয়েছে বলে তারা জানান।
সরেজমিনে বৃহস্পতিবার বেদে পল্লীতে গিয়ে জানা যায়, শুধু বয়স্ক নয়, এই শীতে কষ্ট পাচ্ছে ছোট ছোট শিশুও। কিন্তু আয়-রুজি কম থাকায় নিজেরাও কিনতে পারছেন না প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র।
Advertisement
তারা জানান, তাদের প্রধান কাজ হচ্ছে ডাকাতিয়া নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা। কিন্তু বর্তমানে ডাকাতিয়া নদীতে মাছের যা অবস্থা, তাতে সংসার চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে তাদের জন্য, শীতের পোশাক কিনবেন কিভাবে। তাই তারা তাকিয়ে আছেন কেউ না কেউ এসে তাদেরকে কাপড় বা কম্বল দেবে। কিন্তু শীত প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে আসলেও সেই কাঙ্ক্ষিত কম্বলে দেখা মেলেনি এখনও।
এছাড়াও বেদে পল্লীর অনেকে গ্রামে গ্রামে গিয়ে সিলভার ও কাচের বাসনপাত্র বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তারা জানান, তাদের এই ব্যবসাও এখন খারাপ যাচ্ছে। কারণ মানুষ এখন আর তাদের কাছ থেকে কিছু কিনতে চায় না। সবাই এখন মার্কেট থেকেই কেনে। তাই এই ব্যবসা থেকেও তাদের দুই বেলা খাবার জোটাতে খুব কষ্ট হয়। টাকার অভাবে অনেক কিছুর প্রয়োজন থাকলেও তারা কিনতে পারে না। তাই তারা সবার সহযোগিতা চান।
বেদে পল্লীর বাসিন্দা জহুরা, খাতেজা, সেলিম, নুর ইসলাম, জমেলা নমীন খানসহ আরও অনেকেই বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নাকি উপহার হিসেবে এ বছর হাজার হাজার কম্বল দিছে। কই আমরাতো পাই না। আমরা এদেশের নাগরিক। কিন্তু আমাদের এখানে কোনো মূল্যায়ন নাই। আমাগো চাইতে রোহিঙ্গারা ভালো আছে। হেগো লিগা অনেক মানুষ আছে। আর আমরা না খাইয়া কিংবা শীতে কষ্ট পাইয়া মরলেও দেখার মানুষ নাই।’
এ সময় তারা আকুতি জানিয়ে বলেন, ‘বাবারে যদি পারেন আমাগো লাইগা কয়ডা কম্বল দেহেন দেওন যায়নি। খুব কষ্টে আছি বাজান। খুব উপকার হইবো। এই বাচ্চা পোলাপানগুলা আমাগো চাইতে বেশি কষ্ট পায়।’
Advertisement
বিষয়টি চাঁদপুর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামানকে জানালে তিনি বলেন, কিছুদিন আগে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের প্রায় ৫০টির মতো কম্বল দেওয়া হয়েছে। বাকি যারা আছে তাদেরও পাওয়ার কথা। যেহেতু পায়নি তাই বাকিদের আগামী দুই-তিন দিনের ভেতর কম্বল দেয়ার ব্যবস্থা করব।
নজরুল ইসলাম আতিক/এফএ/এমএস