পৌরসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক হয়নি এখনও। তবে পৌরসভাসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হওয়ার খবরে সম্ভাব্য প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে যাওয়ার চেয়ে দলীয় সমর্থন পেতে জোড় লবিং শুরু করেছে। এই পৌরসভায় মেয়র পদে ৮ জন সম্ভাব্য প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। তারা পাড়া-গ্রাম, মহল্লায় বৈঠক করছেন। দোয়া ও সমর্থনের ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার, লিফলেটে ভরে গেছে পৌর এলাকার দর্শনীয় স্থানগুলো। কেউ কেউ আগে থেকেই রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। কাউন্সিলর ও নারী কাউন্সিলর পদে সম্ভাব্য প্রার্থীরাও তাদের নির্দিষ্ট এলাকায় প্রচার থেকে পিছিয়ে নেই। জাতীয় পার্টি এবং মহাজোট থেকে টানা ৬ বারের জাতীয় পার্টির একেএম মোস্তাফিজুর রহমান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়। গত নির্বাচনে উপজেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক আব্দুর রহমান মিয়া মেয়র হওয়ায় তার উপর এমপির নজর থাকায় কিছু উন্নয়ন করেছেন। মেয়রের মতে, তার আমলে ‘খ’ থেকে ‘ক’ শ্রেণিতে পৌরসভাকে উন্নীতকরণ সবচেয়ে বড় অর্জন। নাগেশ্বরী পৌরসভায় ২০০২ সালে প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয় আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ হোসেন ফাকু। কিন্তু নির্বাচনের পরে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। তার আমলে পৌরসভা ‘গ’ থেকে ‘খ’ তে উন্নীত হয়।জাতীয় পার্টি থেকে বর্তমান মেয়র উপজেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক আব্দুর রহমান মিয়া প্রচারণায় রয়েছেন। জাতীয় পার্টির পৌর কমিটির সদস্য সচিব আব্দুল ওহাব এবং উপজেলা কমিটির সদস্য ফজলু মিয়া রয়েছেন মাঠে। তবে বর্তমান মেয়র আব্দুর রহমান মিয়া বলেন, জাতীয় পার্টি থেকে তিনি একা প্রার্থী রয়েছেন। আমার আমলে এ পৌরসভা খ থেকে ক-তে রূপান্তর হয়েছে। অসংখ্য উন্নয়ন করা হয়েছে। বেশ কিছু কাজ বাকী রয়েছে। এবার বিজয়ী হলে সে সকল কাজ শেষ করে নাগেশ্বরীকে মডেল পৌরসভায় রূপান্তর করা হবে। উপজেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব আ ম প আনিছুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, জাতীয় পার্টি থেকে ৩ জন প্রার্থী গণসংযোগ করছে। কেন্দ্রীয় নির্দেশের অপেক্ষায় আছি আমরা। তবে যাতে এখানে জাতীয় পার্টি থেকে মেয়র নির্বাচিত হয় সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আওয়ামী লীগের পৌর শাখার সভাপতি আবুল হোসেন ভেন্ডার, উপজেলা যুবলীগ সভাপতি এসএম রওশন আলম প্রচারনা চালাচ্ছেন। এখানে আওয়ামী লীগের গণেশ উল্টে যাওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। ২০০২ সালে এ পৌরসভার প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর বিএনপিতে যোগ দেন মোহাম্মদ হোসেন ফাকু। এবারের পৌর নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রত্যাশী। তার যোগদানে ধারণা করা হচ্ছে আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কার প্রার্থী তিনি হচ্ছেন। তাকে মনোনয়ন দিতে দলে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে। মোহাম্মদ হোসেন ফাকু জাগো নিউজকে বলেন, আমি আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র হয়েছি। সে সময় পৌরসভার উন্নয়নে বিএনপির নেতাদের সঙ্গে চলাফেরায় অনেকে মনে করেছেন বিএনপিতে গেছি। কিন্তু আমি নিষ্ক্রিয় ছিলাম। এবারে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির বিষয়ে তিনি বলেন, ৯টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলরদের জন্য স্থায়ী কার্যালয় করা হবে। যাতে ওয়ার্ডের জনগণ সহজে সেবা পায়। শহরের মত পৌরসভার গ্রাম এলাকার উন্নয়নকে বেশি গুরুত্ব বেশি দেব। তবে পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল হোসেন ভেন্ডার জাগো নিউজকে বলেন, আশা করছি দলীয় মনোনয়ন পাব। নির্বাচনে জয়ী হলে নাগেশ্বরীকে ডিজিটাল পৌরসভা করার চিন্তা রয়েছে তার। জানা গেছে, দলীয় সমর্থন পেতে দলীয় নেতাদের কাছে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। নির্বাচনকে ঘিরে উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগ ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে বৈঠক করছেন। সেখান থেকে দলীয় প্রার্থীদের জনসমর্থন যাচাই প্রক্রিয়া শুরু করেছেন বলে দলটির একটি সূত্র থেকে জানা গেছে। শেষ পর্যন্ত এ দলে একক প্রার্থী থাকবে কিনা এ নিয়ে দলে সংশয় রয়ে গেছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক প্রধান জাগো নিউজকে বলেন, পৌর নির্বাচন নিয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ যে সিদ্ধান্ত নিবে সেভাবে নেতাকর্মীদের নিয়ে আমরা কাজ করব। এখনই এ বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। পৌর বিএনপির সভাপতি আদম আলী সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন। পৌর নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপিতে তোড়জোড় বেড়ে গেছে। আদম আলী জাগো নিউজকে বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতি রয়েছে আমাদের। তবে দলীয় প্রতীকের বিষয়টি কেন্দ্রের নির্দেশনার উপর নির্ভর করবে। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি সাইফুর রহমান রানা জাগো নিউজকে বলেন, যদি কেন্দ্রীয় বিএনপি দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেয় তাহলে আমরাও অংশ নিব। যদি তানা হয় তাহলে নাগরিক কমিটির ব্যানারে আমাদের প্রার্থীরা অংশ নেবে। আমাদের প্রার্থী প্রস্তুত। আমরাও প্রস্তুত। দলীয় সিদ্ধান্ত পাওয়ার পর উপজেলার বিএনপির নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হবে। এদিকে নির্বাচনকে ঘিরে প্রচার প্রকাশনায় সরব না থাকলেও দলীয় প্রার্থীর নির্বাচন নিয়ে তৎপর জামায়াত। তাদের মধ্যে প্রার্থী নির্বাচন হয়েছে বলেও দলীয় সূত্রে জানা গেছে। গত উপজেলা নির্বাচনে পার্শ্ববর্তী উপজেলা ভূরুঙ্গমারীতে জেলা জামায়াতের আমির আজিজুর রহমান স্বপন প্রার্থী থাকার পরও বিএনপি প্রার্থী দেয়। নির্বাচনে দু দল হেরে যায়। তারপর থেকে এ জেলায় বিএনপি জামায়াতের সম্পর্কে ফাঁটল ধরেছে। নাগেশ্বরী উপজেলা জামায়াতের রাজনৈতিক সচিব নাগেশ্বরী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মুজিবুল হক বেলাল জাগো নিউজকে বলেন, জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করা হয়েছে। যদি জামায়াতের তাদের প্রতীকে নির্বাচন করার সুযোগ থাকে তাহলে এখানেও দাড়িপালা মার্কায় পৌর প্রার্থী থাকবে। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত সম্পর্ক ভাল নয়। তারপরও নির্বাচন আসলে বাকিটা বোঝা যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এখন পর্যন্ত উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ রয়েছেন প্রচারণায় তুঙ্গে। তিনি পৌরসভার প্রথম নির্বাচনে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। প্রচারনায় তিনি রয়েছেন প্রথম। পৌরসভাকে নিয়ে তার চিন্তা সুদূরপ্রসারী বলে জানা তিনি।আব্দুল আজিজ জাগো নিউজকে বলেন, ২৩ বছর থেকে মানুষের সেবা করছি। যদি পৌরসভায় জিততে পারি তাহলে পৌরবাসীকে আত্মনির্ভরশীল করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। শহরে যানজট থাকবে না। শহর-গ্রাম যোগাযোগ বিদ্যুৎ কোনোটার অভাব রাখবো না। জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালে পৌরসভা নির্বাচনে নাগেশ্বরী পৌরসভায় ৯জন মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। এদের মধ্যে মেয়র পদে ৭ হাজার ৫শ ৪০ ভোট পেয়ে জাতীয় পার্টির আব্দুর রহমান মিয়া (মাইক) প্রতীক নিয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীরা ছিলেন- আবুল কাসেম সরকার (জাহাজ) প্রতীক পান ৭ হাজার ৭০ ভোট, আব্দুর রব (আনারস) প্রতীক পান ১ হাজার ৭শ ৮৮ ভোট, আব্দুস সবুর (তালা) প্রতীক ৫ হাজার ১শ ৩৭ ভোট, গোলাম রসূল রাজা (চশমা) প্রতীক ৫শ ৫৮ ভোট, ফজলুল হক (দেয়াল ঘড়ি) ৩ হাজার ৬শ ৫৭ ভোট, মোহাম্মদ হোসেন ফাকু ( টেলিভিশন) প্রতীক ২ হাজার ৭ শ৬৮ ভোট, হাসেম আলী সরদার (কাপ-পিরিচ) ৮ শ৬৭ ভোট এবং হোসেন আলী (দোয়াত কলম) ১ হাজার ৩শ৭ ৮ ভোট পেয়ে পরাজিত হয়।নাগেশ্বরী পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে ১৯টি কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ৩৬ হাজার ৪শ ৪৪ জন। ২০১১সালের পৌর নির্বাচনে ভোট পড়ে ৩১ হাজার ৪শ ৫৩টি। এর মধ্যে বাতিল হয় ৬শ ৯০টি ভোট।এসএস/এমএস
Advertisement