নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পাগলা বৌ বাজার এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযানের সময়ে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাব সদস্যদের উপর মাদক ব্যবসায়ী সন্ত্রাসীদের হামলা ও গুলি করে স্কুলছাত্র স্বাধীন আহমেদ শুভ শেখকে হত্যার মামলায় আটজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।২৬ জনকে সাক্ষী দেখিয়ে রোববার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত বরাবর চার্জশিটটি দাখিল করা হয়। এসময় নিহত শুভর রক্তমাখা ফুলপ্যান্ট ও হাফহাতা শার্ট আলামত হিসেবে আদালতে জমা দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। তবে এ চার্জশিটে তিনজনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন মামলার বাদী নিহত স্বাধীনের মা রহিমা বেগম।তিনি জানান, শুভকে হত্যায় জড়িত আমির হোসেন, নূর আলম ও সোহেল। তাদের মধ্যে সোহেল সম্প্রতি সৌদি আরব চলে গেছেন, বাকি দুইজন এলাকায় প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করছে। পুলিশ আমাকে কোনো সময়ই মামলার বিষয়ে কোনো কিছু জিজ্ঞেস করেনি। সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের গ্রেফতারসহ আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই।এব্যাপারে মামলার অষ্টম তদন্তকারী কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এসআই এনায়েত কবির চার্জশিট দাখিলের সত্যতা স্বীকার করে জাগো নিউজকে জানান, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তদন্ত করে আদালতে আটজনের বিরুদ্ধে চাজর্শিট দাখিল করেছি।এর মধ্যে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসী ভুলু ও ফাইটার সোহেল পলাতক থাকায় এবং তাদের নাম ঠিকানা না পাওয়ায় তাদের দুইজন আসামিকে মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন করেছি। তবে পরবর্তীতে তাদের পরিচয় পেলে আদালতে সংক্ষিপ্ত চার্জশিট দাখিল করা হবে। চার্জশিটে অভিযুক্তরা হলেন মনির হোসেন, আরিফুল ইসলাম ওরফে ফাইটার আরিফ ভুলু, সিরাজুল ইসলাম হৃদয়, লোকমান হোসেন, রুবেল ওরফে কাবজাব রুবেল, নাসির উদ্দিন নয়ন, রহিম আহমেদ শান্ত ও সুমন ওরফে বগা সুমন।বাদী রহিমা বেগম জাগো নিউজকে জানান, ২০১১ সালের ১৪ জুন রাতে তার ছোট ছেলে পাগলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র সোহাগ (৯) বাড়ির বাইরে যায়। বাড়ি ফিরতে তার দেরি হওয়ায় তার খোঁজে বের হয় মেজ ছেলে একই বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির বাণিজ্য বিভাগের ছাত্র স্বাধীন আহমেদ শুভ শেখ (১৫)। এক পর্যায়ে সে (রহিমা বেগম) বাড়ির বাইরে এসে দেখে, কয়েকজন যুবকের সঙ্গে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে ঝগড়া চলছে।তখন তার দুই ছেলে সোহাগ ও শুভর সহপাঠী বাদল একসঙ্গে দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ওই সময়ে শুভ বলেন, ‘মা ওদের হাতে পিস্তল আছে, তুমি চলে যাও’। এ কথা বলার কিছু সময় পর এলাকার মনির হোসেন ও তার সহযোগী সন্ত্রাসীরা শুভর ঠোটের মধ্যে ঠেকিয়ে গুলি করে হত্যা করেন। তাদের গুলিতে সোহাগ ও বাদলও গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়।একই ঘটনায় র্যাবের উপর হামলা ও অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন র্যাব-১০। এঘটনায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাব-১০ এর ল্যান্স কর্পোরাল জাকির হোসেন বাদী হয়ে দুটি মামলা করেন। একটি মামলায় অভিযোগ করা হয়, পাগলা বটতলা বউবাজার এলাকায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে সাদা পোশাকে র্যাবের একটি টিম ইয়াবা ক্রেতা সেজে অভিযান চালায়।ওই স্থানে আলী হোসেন ও তার সহযোগীরা মাদক ব্যবসা করে আসছিল। মাদক ব্যবসায়ীরা ক্রেতা সেজে যাওয়া ব্যক্তিদের র্যাবের লোক বলে আচঁ করতে পারে। পরে ১০-১২ জন মাদক ব্যবসায়ী র্যাবের সদস্য সার্জেন্ট শফিকুল ইসলাম শফিক ও ল্যান্স কর্পোরাল জাকির হোসেনের উপর হামলা চালিয়ে তাদের কাছ থেকে পিস্তল ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে এবং এলোপাতারি গুলিবর্ষণ করে।সন্ত্রাসীরা জাকির হোসেনের হাতে ছুরিকাঘাত করে। ওই সময়ে আত্মরক্ষার্থে ল্যান্স কর্পোরাল জাকির হোসেন এক রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে। এ দুটি মামলায় এখনো চার্জশিট দাখিল করা হয়নি।শাহাদাত হোসেন/বিএ
Advertisement