সাজেদুর আবেদীন শান্ত
Advertisement
কানিজ ফারহীন পান্থির জন্ম ঢাকায়। ঢাকার মেয়ে হলেও বড় হয়েছেন টাঙ্গাইলে। সেখানেই বিন্দুবাসিনী গার্লস স্কুল থেকে এসএসসি এবং সরকারি কুমুদিনী মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আইএসটি থেকে বিএসসি করেন। এমবিএ শেষ করেন বিইউবিটি থেকে।
উদ্যোক্তা হওয়ার চিন্তা কখনোই মাথায় ছিল না। পড়াশোনা শেষ করে প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর চাকরি করেছেন দুটি প্রতিষ্ঠানে। হঠাৎ ব্যাংকে চাকরি করার জন্য প্রিপারেশন নেন। কিন্তু পারিবারিকভাবে ২০১১ সালে বিয়ে হয়ে যায়। পান্থির স্বামী শিমুল হায়াত একটি প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপক পদে কর্মরত। এরপর পান্থি চলে আসেন পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ার শ্বশুরবাড়িতে।
পান্থি বলেন, ‘জয়েন্ট ফ্যামিলি, নতুন জায়গা, নতুন পরিবেশ। সব কিছু গুছিয়ে উঠতে উঠতেই বছর চলে যায়। তারপর জানতে পারলাম, আমি মা হতে যাচ্ছি। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে একটি দুর্ঘটনায় একরকম সব কিছু ওলটপালট হয়ে যায়। সে বছর সন্তানের মুখ আর দেখা হলো না। দুঃখ-হতাশায় আর দাঁড়াতে পারছিলাম না। কী করবো, কী করা উচিত- বুঝে উঠতে পারছিলাম না।’
Advertisement
২০১৪ সালে তার মেয়ে জোহা মাহনুর সিমরানের জন্ম হয়। তাকে রেখে আর কাজে যাওয়ার চিন্তা করতে পারেননি। কিন্তু দিনদিন হতাশায় ডুবে যাচ্ছিলেন। তখন মাঝে মাঝে শখের বশে নিজের হাতে মেয়ের জন্য মাথার ব্যান্ড, ব্রেসলেট, ক্লিপ বানাতেন। ছোটবেলা থেকেই তার ক্রাফটিংয়ের প্রতি দারুণ ঝোক ছিল। আর যেকোনো গহনা তাকে দারুণভাবে আকর্ষণ করতো।
তিনি বলেন, ‘আমি নষ্ট হওয়া কোনো গহনাই ফেলে দিতাম না। সেগুলো থেকে পাথর বা অন্যান্য অংশ পরবর্তীতে অন্য কিছুতে লাগাতাম। যেন একটু ইউনিক দেখা যায়। মেয়ের জন্য বানানো এসব জিনিস দেখে আশেপাশের ভাবিরা আমার কাছ থেকে বাচ্চাদের জন্য বানিয়ে নেওয়া শুরু করলেন। দারুণ লাগলো বিষয়টা।’
২০১৫ সালে মাথায় এলো ফেসবুকে একটি পেজ খোলার চিন্তা। যেই কথা; সেই কাজ। কয়েক দিনের মধ্যে পেজ খুললেন। ছবি তুলে পোস্ট করা শুরু করলেন। প্রতিদিন প্রায় নিয়ম করে ২০টি গ্রুপে পোস্ট দিতেন। এ ভাবেই আস্তে আস্তে কিছু কিছু অর্ডার পেলেন অনলাইনে। তারপর সঙ্গে কিছু হাতে বানানো গহনা রাখলেন। এভাবেই ফেসবুকে ঘুরতে ঘুরতে বিভিন্ন জনের লেখা পড়ে এগোতে থাকলেন। সাহস নিয়ে ম্যাটেরিয়ালস কালেক্ট করা শুরু করলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘রোদ কি, বৃষ্টি কি। আমি ঘুরে বেড়িয়েছি ম্যাটেরিয়ালসের খোঁজে। মাত্র ১৯০০ টাকার ম্যাটেরিয়ালস দিয়ে গহনা বানানো শুরু করেছিলাম। আজ ৬ বছর হতে চলল এ ব্যবসা নিয়ে আছি। ম্যাটেরিয়ালস সংগ্রহ থেকে শুরু করে ডিজাইন রেডি করা এবং বানানো সব কিছু নিজের হাতে করি। অনেকেই এ কাজ নিয়ে অনেক কথা শুনিয়েছেন। খারাপ লাগতো। তারপরও দাঁতে দাঁত চেপে শুনে যেতাম। কাজ থামাইনি।’
Advertisement
আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া ও ভারতেও আনঅফিসিয়ালি তার হাতে বানানো গহনা পৌঁছেছে। মোটামুটি ভালোই চলছিল সব কিছু। সংসার সামলে যতটা করা যায়। তারপর শুরু হলো করোনা। হঠাৎ এ পরিস্থিতিতে টেনশন শুরু হলো। যেখানে মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসই বুঝে-শুনে কিনছেন। সেখানে গহনার মত শখের জিনিস তারা কেন কিনবেন?
সে সময়টাতে তিনি ফেসবুকভিত্তিক ই-কমার্স গ্রুপে যুক্ত হন। সেখানে যুক্ত হওয়ার ৬ মাসের মাথায় শুধু গহনা বিক্রি করে লাখ টাকার মাইলফলক ছুঁতে পেরেছেন। এখন নিজের আয়ের টাকায় ব্যবসার জন্য ম্যাটেরিয়ালস কেনেন। আবার সংসারেও কিছু দেওয়ার চেষ্টা করেন। এখন এ গহনা বানানোই তার ধ্যান-জ্ঞান, নেশা-পেশা।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এ বছর একটি ছোট ফ্যাক্টরি দেওয়ার ইচ্ছা আছে আমার। কিছু লোক রেখে কাজগুলো আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। ইচ্ছা আছে, দেশের ৬৪ জেলার সাথে সাথে বাইরেও রফতানি হবে আমার হাতে তৈরি গহনা। যেখানে লেখা থাকবে, ‘মেড ইন বাংলাদেশ’।’
লেখক: ফিচার লেখক ও শিক্ষার্থী, বঙ্গবন্ধু কলেজ, ঢাকা।
এসইউ/এমকেএইচ