চারদিনের ব্যবধানে আলুর দাম অর্ধেকে নেমেছে। এখন ২০ টাকায় আগাম জাতের নতুন আলু কেনা যাচ্ছে রাজধানীর খুচরা বাজারেই। চাষি পর্যায়ে দাম নেমেছে ১০ টাকায়। যদিও পুরোপুরি আলু ওঠার মৌসুম শুরু হবে আরও এক-দুই সপ্তাহ পর। বাজারে দ্রুত এ দামের পড়তিতে খুবই চিন্তিত কৃষকরা। বিগত বছরগুলোর মতো এ বছরও আলু নিয়ে চরম লোকসানের আশঙ্কায় তারা।
Advertisement
গত দেড়-দুই মাস ভোক্তা পর্যায়ে আলুর দাম বেশি থাকলেও প্রকৃত কৃষকরা যখন বাজারে পণ্যটি আনছেন তখনই এ দরপতন হলো। এর দুটি প্রধান কারণ রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, গত মৌসুমের শেষ দিক থেকে বেশি দাম থাকার কারণে লাভের আশায় চলতি মৌসুমে আলুর চাষ বাড়িয়েছেন চাষিরা। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, দেশে সার্বিক আলুর উৎপাদন চাহিদার বেশি। একই সময় রফতানিও কমেছে। ফলে বাড়তি আলু উদ্বৃত্ত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যও বলছে এমনটাই। চলতি মৌসুমে দেশে ১ কোটি ১৩ লাখ ৭১ হাজার টন আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, যা গত বছরের প্রকৃত উৎপাদনের থেকে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টন বেশি। গত অর্থবছর (২০১৯-২০) দেশে আলুর উৎপাদন হয়েছিল ১ কোটি ৯ লাখ ১৭ হাজার টন।
অধিদফতরের হিসাব মতে, দেশে বছরে আলুর চাহিদা মাত্র ৭৭ লাখ টন। অর্থাৎ বছরে ২৬ থেকে ৩৭ লাখ টন আলু উদ্বৃত্ত থেকে যাচ্ছে। এ আলু কাজে লাগানোর একমাত্র উপায় রফতানি। আলু রফতানির চিত্র মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়। বছরে রফতানি হচ্ছে বড়জোর ৩৫ থেকে ৫০ হাজার টন।
Advertisement
এমন পরিস্থিতিতে প্রতি বছর ভরা মৌসুম ও মৌসুমের শেষে আলু নিয়ে দারুণ পীড়াপীড়ি শুরু হয় কৃষকের। তাদের খেত, মাঠ, উঠান, হাট সর্বত্রই আলুময় হয়ে যায়। দাম না পাওয়ায় সেই আলু খেতেই রেখে চলে যান তারা। আবার অনেকে মৌসুমে কোল্ডস্টোরে আলু রাখলেও দাম পান না তেমন। সবমিলে আলুই তখন কৃষকদের গলার ফাঁস হয়েই দাঁড়ায়। এ বছরও এমন শঙ্কা দেখছেন আলু চাষিরা।
বগুড়া মোকামতলার কৃষক এনায়েত বলেন, কদিন আগে আলু বিক্রি করছি ২৬ টাকায়। এখন আলু ১০ টাকা। দুদিন পরে হবে ছয় টাকা, তারপর চার টাকায়ও আলু নেবে না ব্যাপারীরা। এখনও খেত থেকে ২০ শতাংশ আলু ওঠেনি এই অঞ্চলের। এর মধ্যেই পড়ে গেল দাম।
তিনি আরও বলেন, এত আলু খাবে কে? হুজুগে সবাই এবার আলু চাষ করেছে। কিন্তু এ সবজির তো চাহিদা থাকে না। শেষে কোল্ডস্টোরে রেখে জমি বেচে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়।
বেশ কয়েকজন কৃষক ও কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জানান, এ মৌসুমে এক কেজি আলু উৎপাদনের খরচ পড়েছে ৮-৯ টাকা। কৃষক পর্যায়ে এর নিচে দাম নামলে লোকসান হবে চাষিদের। এছাড়া এবার আলু উৎপাদিত হচ্ছে এক কোটি ১৩ লাখ টনেরও বেশি।
Advertisement
দেশের অন্যতম আলু উৎপাদনকারী জেলা হিসেবে পরিচিত জয়পুরহাট। এখানে ভরা মৌসুম আসতে আরও প্রায় এক মাস বাকি থাকলেও এরইমধ্যে জমি থেকে আগাম জাতের আলু উত্তোলন করছিলেন চাষিরা। আবহাওয়া অনুকূল আর রোগ-বালাই কম হওয়ায় ক্ষেতের ফলনও বেশ ভালো হয়েছে।
এ জেলায় এবার আলু চাষ হয়েছে ৪০ হাজার ৩১৫ হেক্টর জমিতে। যার মধ্যে প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমিতে আগাম জাতের আলু চাষ হয়েছে। বিঘা প্রতি ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা খরচ করে উৎপাদন হয়েছে ৪৫-৫০ মণ আলু। কিন্তু হঠাৎ দাম কমে এ এলাকায় পাইকারিতে প্রতি মণ ৪০০ টাকায় নেমেছে।
অন্যদিকে, মুন্সীগঞ্জ জেলার প্রধান অর্থকরী ফসল আলু। জেলার দু-তৃতীয়াংশ কৃষিজমিতে আলু আবাদ করে থাকেন স্থানীয় কৃষকরা। জেলা সদরের চরমশুরা এলাকার কৃষক আজিজুল জানান, তার ৭০ শতাংশ জমিতে আগাম আলু চাষ করেন। বাজারে আলুর দাম পড়ে যাওয়ায় চিন্তিত তিনি। গেল বছরও দাম না থাকায় আলুতে লোকসান হয়েছে তার।
এনএইচ/এসজে/এমএস