জাগো জবস

উদ্যোক্তা তানিয়া এখন লাখপতি

সাজেদুর আবেদীন শান্ত

Advertisement

তানিয়া আক্তারের জন্ম পুরান ঢাকায়। বসবাস নারিন্দায়। বাবা মো. মানিক ব্যাপারী ও মা আকলিমা বেগমের প্রথম সন্তান। তানিয়ারা চার বোন। দক্ষিণ মুহসেন্দী সরকারি স্কুল এবং দক্ষিণ মুহসেন্দী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে ১০ বছর কেটে যায় তানিয়ার। উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হন ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজে।

ছোটবেলা থেকেই তানিয়ার স্বপ্ন ছিল আইনজীবী হওয়ার। স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে এলএলবি (অনার্স) ও এলএলএম করেন প্রাইম ইউনিভার্সিটি থেকে। একই সঙ্গে দর্শন বিষয়ে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করেন কবি নজরুল সরকারি কলেজে থেকে। পড়াশোনা শেষ করে কোর্টে প্রাক্টিস শুরু করেন। দুই বছর প্রাক্টিস করার পর বিয়ে হয় তার। তারপর সব কিছু ছেড়ে সংসার-সন্তান নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। হয়ে যান গৃহিণী।

উদ্যোক্তা হওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আট বছরের সংসার জীবনে স্বামী-সন্তান নিয়ে আমি খুব সুখী। আমার চাওয়া-পাওয়ার যথেষ্ট খেয়াল রাখেন তিনি। তারপরও নিজেকে শূন্য মনে হতো। অকর্মা মনে হতো। সব কিছু থাকার পরও মনে হতো কী যেন নেই। গৃহিণী শব্দটি আমার কাছে সুখকর মনে হতো না। মানুষের ব্যঙ্গাত্মক কথা মনে খুব কষ্ট দিতো। কখনোই চাকরি পছন্দ ছিল না। তাই উদ্যোগের জীবনটাই বেছে নিয়েছি।’

Advertisement

তানিয়া বলেন, ‘উদ্যোগের শুরু হয় ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। আমার ছোট বোন মাহমুদা মুক্তা আমাকে উইতে যুক্ত করে। তখন প্রতিদিনই উইয়ের পোস্ট দেখতাম, কিন্তু কখনো গুরুত্ব দেইনি। ধীরে ধীরে ভালো লাগতে শুরু করে। কিছু একটা করার ইচ্ছা জাগে। ইচ্ছাই একসময় স্বপ্ন হয়ে যায়। জুলাই থেকে অ্যাক্টিভ হই।’

তিনি আরও বলেন, ‘জুলাইয়ের ১০ তারিখে বিজনেস পেজ খুলি। যার নাম দেই ‘নন্দিনী’। নন্দিনীকে আমি প্রথমে জামদানি ও মনিপুরী শাড়ি দিয়ে সাজাই। মাত্র ৩০ হাজার টাকা দিয়ে কাজ শুরু করি। তখন থেকেই আমার উদ্যোক্তা জীবন শুরু। পরে সবার চাহিদার ওপর ভিত্তি করে জামদানি থ্রি-পিস নিয়ে কাজ শুরু করি।’

উদ্যোক্তা হিসেবে এখন তিনি লাখপতি। তার শাড়ি পরতে ভালো লাগে, তাই শাড়ি নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন। তবে অনেকে থ্রি-পিস নিয়ে কাজ করার অনুরোধ করেন। তাই থ্রি-পিস নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। তাঁতির হাতের পরম মায়ায় বোনা জামাগুলো দেশের ঐতিহ্যের কথা মনে করিয়ে দেয়। এখন তার সিগনেচার পণ্য জামদানি থ্রি-পিস। কারণ তিনি তাঁতিদের দিয়ে কাস্টমাইজ করান।

তার কাজের প্রেরণা হচ্ছে একমাত্র ছেলে তানহিয়াত। ছয় বছরের ছেলেটি তার কাজে খুব খুশি। সে মাকে অনেক সাহায্য করে। বাসায় কেউ না থাকলে উদ্যোগের সব কাজে মায়ের সঙ্গে যায়। সেও খুব উপভোগ করে তানিয়ার কাজগুলো।

Advertisement

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সবাই যেমন চায় সন্তান বড় হোক; তেমন আমিও চাই। আমার স্বপ্ন নন্দিনী একদিন ব্র্যান্ড হবে। ভবিষ্যতে নন্দিনীর জন্য শো-রুম করতে চাই। যাতে সে ব্র্যান্ড হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে।’

লেখক: ফিচার লেখক ও শিক্ষার্থী, বঙ্গবন্ধু কলেজ, ঢাকা।

এসইউ/এমকেএইচ