সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে রেখে গৃহবধূকে গণধর্ষণ মামলায় চার্জশিটভুক্ত আট ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে দেয়া চার্জশিট গ্রহণ করেছেন আদালত।
Advertisement
দুই দফা চার্জশিট গ্রহণের তারিখ পেছানোর পর মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) বেলা ১১টায় সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মোহিতুল হক চৌধুরী অভিযোগপত্র আমলে নেন।
এর আগে সকালে কঠোর নিরাপত্তায় চার্জশিটভুক্ত আট আসামিকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আদালতে হাজির করে পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সংশ্লিষ্ট আদালতের বিশেষ পিপি রাশিদা সাইদা খানম জানান, চার্জশিটভুক্ত সব আসামির উপস্থিতিতে বিচারক চার্জশিট (অভিযোগপত্র) আমলে নিয়েছেন। শুনানির জন্য ১৭ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছেন বিচারক।
Advertisement
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের রাস্তায় স্বামীকে আটকে প্রাইভেটকারের ভেতর ওই গৃববধূকে (২৫) পালাক্রমে গণধর্ষণ করে ছাত্রলীগের ছয় নেতাকর্মী। ঘটনার রাতেই নির্যাতিতার স্বামী বাদী হয়ে এসএমপির শাহপরান থানায় ছয়জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন।
পরবর্তীতে ছয় আসামিসহ সন্দেহভাজন আরও দুইজনকে গ্রেফতার করে র্যাব ও পুলিশ। গ্রেফতার হওয়া আটজনই মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন
মামলাটি তদন্ত করে গত ৩ ডিসেম্বর গ্রেফতার ছাত্রলীগের আট নেতাকর্মীকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) আদালতে জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা শাহপরান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য। এ মামলায় মোট সাক্ষী করা ৫২ জন।
অভিযুক্তরা হলেন, ছাত্রলীগ কর্মী ও এমসি কলেজের ছাত্র সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, তারেকুল ইসলাম তারেক, অর্জুন লস্কর, আইনুদ্দিন ওরফে আইনুল, মিসবাউল ইসলাম রাজন মিয়া, রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান মাসুম।
Advertisement
অভিযোগপত্রে সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, তারেকুল ইসলাম তারেক, অর্জুন লস্কর, আইনুদ্দিন ওরফে আইনুল ও মিসবাউল ইসলাম রাজন মিয়াকে সরাসরি ধর্ষণে সম্পৃক্ত এবং রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান মাসুমকে ধর্ষণের সহযোগী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এই আটজনই বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
এদিকে ধর্ষণের অভিযোগে দাখিলকৃত মামলাটি গত ৩ ডিসেম্বর নারী ও শিশু নির্যতন দমন ট্রাইব্যুনালে এবং গত ২৭ ডিসেম্বর চাঁদাবাজি ও মারপিটের অভিযোগের মামলাটি সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারের জন্য বদলি করেন সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিম (২য়) আদালতের বিচারক সাইফুর রহমান।
তাছাড়া অস্ত্র আইনের মামলাটির অভিযোগপত্র (চার্জশিট) পর্যালোচনার জন্য মুখ্য মহানগর হাকিম (২য়) আদালতে রাখা হয়েছে বলে আদালত সূত্র জানিয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাত পৌনে ৮টার দিকে সিলেট এমসি কলেজের ছাত্রাবাসের ভেতরে একটি রাস্তায় প্রাইভেটকারের মধ্যেই গৃহবধূকে গণধর্ষণ করা হয়। এ ঘটনায় ধর্ষিতার স্বামী বাদী হয়ে এসএমপির শাহপরাণ (রহ.) থানায় (জিআর মামলা ১৩১/২০ ইং) দাখিল করেন। আর রাতে কলেজ ছাত্রাবাসে পুলিশ অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করেন বন্দুক ও ধারালো অস্ত্র। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে (জিআর মামলা নং ১৩২/২০ ইং) দাখিল করেন।
এর মধ্যে ৩ ডিসেম্বর সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) মো. আবুল কাশেমের আদালতে এই চার্জশিট প্রদান করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহপরান থানার ওসি (তদন্ত) ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য। ওই মামলাগুলোর মধ্যে ধর্ষণের অভিযোগে দাখিলকৃত মামলাটি দু’ভাগে চার্জশিট প্রদান করা হয়। যার একভাগ ( জিআর ১৩১/২০ ইং) ছিল গণধর্ষণের অভিযোগপত্র। আর অপরটি ছিল চাঁদাবাজি ও মারপিটের অভিযোগ (জিআর ১৩১/২০(এ))। মঙ্গলবার গণধর্ষণের ঘটনায় অভিযোগ গঠন করা হয়।
ছামির মাহমুদ/এফএ/জেআইএম