ধর্ম

বান্দার প্রতি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ কী?

দুনিয়ায় যে কোনো সুখবর পাওয়াকে মানুষ মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নেয়ামত মনে করে থাকেন। তা হতে পারে চাকরি, ব্যবসা কিংবা অন্য কোনো ভালো কাজ। কিন্তু মহান আল্লাহর কাছে ঈমানদারের জন্য রয়েছে বিশেষ একটি অনুগ্রহ। কী সেই অনুগ্রহ?

Advertisement

‘হ্যাঁ, বাস্তবেই যে কোনো সুসংবাদ বা ভালো খবরই মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য নেয়ামত বা অনুগ্রহ। তিনিই  বান্দাকে নেয়ামত দান করেন। আর এ নেয়ামতের শুকরিয়াও শুধু তিনিই প্রাপ্য।

আবার এ নেয়ামত দেয়ার না দেয়ার মাধ্যমে মহান আল্লাহ তাআলা বান্দাকে পরীক্ষা করে থাকেন। সবরের পরীক্ষা করে থাকেন। শুকরিয়া আদায়েও পরীক্ষা নিয়ে থাকেন। যে বা যারা এ পরীক্ষা উত্তীর্ণ হন, তারাই দুনিয়া ও পরকালের সফলকাম।

যার প্রতি আল্লাহর নেয়ামত বা অনুগ্রহ নাজিল হয়, তার প্রতি মহান আল্লাহ তাআলা সন্তুষ্ট- এমনটিই সবাই মনে করেন। আবার অনেকে তাঁর দেয়া বিপদাপদকে তাঁর বাগ বা পরীক্ষার বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করেন। কিন্তু আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা এসব অনুগ্রহ কিংবা বিপদাপদ কি তার সন্তুষ্টি বা রাগের মানদণ্ড? নাকি ভিন্ন কিছু?

Advertisement

দুনিয়াতে আল্লাহর কাছ থেকে মানুষ যা-ই পায়, সবই তাঁর দান। সাধারণ দান। এ দানের ক্ষেত্রে মহান আল্লাহ কোনো মানুষের ক্ষেত্রে তারতম্য করেন না। এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি যে, তিনি মুমিন বান্দাকে রোদ-বৃষ্টি, আলো-বাতাস দান করেছেন। আর অবিশ্বাসীকে তা দান করেননি। বরং দুনিয়া সবার প্রতি সাধারণ দান সমান। আল্লাহ তাআলা বলেন-

كُلاًّ نُّمِدُّ هَـؤُلاء وَهَـؤُلاء مِنْ عَطَاء رَبِّكَ وَمَا كَانَ عَطَاء رَبِّكَ مَحْظُورًا

‘এদেরকে (পরকাল প্রত্যাশী) এবং ওদেরকেও (দুনিয়া প্রত্যাশী) আমি জীবনোপকরণ দিয়ে যাচ্ছি, এ হচ্ছে তোমার রবের দান এবং তোমার রবের দান রুখে দেবার কেউ নেই।’ (সুরা বনি ইসরাঈল : আয়াত ২০)

বান্দার প্রতি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ

Advertisement

মানুষ ঈমানদার হোক আর বেঈমান, সবাই আল্লাহ তাআলার দেয়া জীবনোপকরণ, সুযোগ-সুবিধাই ভোগ করছেন। এ দান লাভের মাধ্যমে এ বিষয়টি বুঝা যায় না যে, মানুষ কি কল্যাণের দিকে যাচ্ছে? নাকি অকল্যাণের দিকে যাচ্ছে?

মহান আল্লাহ কোন বান্দার বিশেষ অনুগ্রহ দিয়ে সম্মানিত করবেন বা করছেন, তা প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি হাদিসে সুস্পষ্টভাবে ফুটে ওঠেছে। হাদিসে এসেছে-

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা যাকে ভালোবাসেন এবং যাকে ভালোবাসেন না— উভয় প্রকারের মানুষকেই কল্যাণ (অনুগ্রহ) দান করেন। আর ঈমান (এর নেয়ামত) দান করেন শুধু তাকেই, যাকে তিনি ভালোবাসেন।’ (মুসনাদে আহমাদ)

প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশেষ অনুগ্রহ পাওয়ার ক্ষেত্রে এ হাদিসে দুটি বিষয় সুস্পষ্ট। তাহলো-

- বান্দার ঈমান লাভ আল্লাহর কাছে বিশেষ অনুগ্রহ। ঈমানদার বান্দাকেই আল্লাহ তাআলা এ বিশেষ অনুগ্রহ বা কল্যাণ দান করেন।

- আর আল্লাহ তাআলা যাকে ভালোবাসেন,  তাকেই তিনি ঈমান-এর মতো বিশেষ নেয়ামত দান করেন।

সুতরাং ঈমান, আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা, তাঁর প্রতি ভালোবাসা ইত্যাদিই হচ্ছে বান্দার জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে সেই বিশেষ নেয়ামাত। এগুলোই সেই ব্যতিক্রম সম্পদ, যার মাধ্যমে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়া যায়।

এ কারণেই আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় বান্দা হওয়ার হওয়ার জন্য, তার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামে জীবনাচারের অনুকরণ ও অনুসরণ করার কথা বলেছেন। বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনাচার লালন করার মাধ্যমেই পাওয়া যাবে আল্লাহর ভালোবাসা। আল্লাহ তাআলা বলেন-

قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ

‘(হে রাসুল! আপনি) বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও, তবে আমাকে অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহও তোমাদের ভালোবাসেন এবং তোমাদের পাপ ক্ষমা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু।‘ (সুরা ইমরান : আয়াত ৩১)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, আল্লাহর দেয়া সব জীবনোপকরণকে নেয়ামাত মনে করা। সুখ-শান্তি, ভালো চাকরি, জমজমাট ব্যবসা ইত্যাদি পেয়ে আল্লাহর কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপন করা থেকে বিরত না থাকা।

আবার দুঃখ-কষ্ট, ব্যর্থতা, ব্যবসায়ে ক্ষতির সময়ও আল্লাহকে ভুলে না যাওয়া কিংবা আল্লাহর প্রতি বিরূপ মন্তব্য না করা। এ সময় সবর করার মাধ্যমেও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব। আর এখানেই রয়েছে বান্দার জন্য মহাপরীক্ষা। যারাই এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবেন, তারাই সফল।

মনে রাখতে হবে

দুনিয়া হলো পরীক্ষার স্থান। পরকালের সম্পদ লাভের জায়গায়। এখানে সবাই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। এ বিশাল পরীক্ষায় শুধু তারাই সফল হবে, যারা ঈমান এবং ধৈর্যকে একত্রে কাজে লাগাতে পারবে। প্রকৃত সফলতা তারাই পাবেন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ অনুগ্রহ ঈমানের মতো মহামূল্যবান সম্পদ লাভ করার তাওফিক দান করুন। ঈমান ও ধৈর্যধারণের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জেআইএম