অর্থনীতি

ব্যবসায়ীদের মাইন্ডসেট চেঞ্জ করতে হবে : মাতলুব আহমদ

নর্থ ইস্ট কানেকটিভিটি সামিটে যোগ দিতে ভারতের শিলংয়ে গেছে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধি দল। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব চেম্বার অ্যান্ড কমার্স ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই)-এর সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমাদের নেতৃত্বে রোববার বেলা আড়াইটায় ভারতের উদ্দেশ্যে সিলেট ত্যাগ করে ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল।আগামি ১৬ ও ১৭ নভেম্বর সেখানে অনুষ্ঠিতব্য দু’দিনব্যাপী সম্মেলনে যোগ দেবেন তারা। ১৮ সদস্যের মধ্যে ১৩ জন রোববার গেলেও আগামীকাল বাকি ৫ ব্যবসায়ী নেতা ভারত যাবেন বলে জানা গেছে।এ উপলক্ষে রোববার দুপুরে সিলেট চেম্বার কনফারেন্স হলে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ।সংবাদ সম্মেলনে ফেডারেশন অব চেম্বার অ্যান্ড কমার্স ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই)-এর সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমাদ বলেন, সম্মেলনের মূল লক্ষ্য বিবিআইএন-তথা বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের মধ্যে আঞ্চলিক ব্যবসায়িক সংযোগ বৃদ্ধি। এরই মধ্যে চারটি দেশের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। আগামী কয়েক মাস পর চার দেশের মধ্যে রোড নেটওয়ার্ক চালু হবে।তিনি বলেন, ভারতের সেভেন সিস্টারস খ্যাত নর্থ ইস্ট বাংলাদেশি পণ্য রফতানির বিপুল সুযোগ রয়েছে। আর সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেন সিলেট চেম্বারের ব্যবসায়ীরা। দুই দেশের মধ্যে ট্যারিফ-নন ট্যারিফ ব্যারিয়ার দূর করা, কয়লা, চুনাপাথর ও পাথর আমদানির ক্ষেত্রে জটিলতার বিষয়টি তারা সম্মেলনে তুলে ধরবেন।এফবিসিসিআই এর সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমাদ বলেছেন, সিলেটের ব্যবসায়ীদের মাইন্ডসেট চেঞ্জ করতে হবে। তারা এখনো ঠিকাদারী ব্যবসা ও আমদানি-রফতানি নিয়েই আছেন। আর আছে ইংল্যান্ডের পয়সা। কিন্তু পরিস্থিতি এখন অনেক বদলে গেছে। ইউরোপের অর্থনীতিতেও ধস নেমেছে। সিলেটের ব্যবসায়ীদের এই পরিবর্তনের সঙ্গে পাল্লঅ দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। শিল্প কারখানা গড়ে তুলতে হবে।ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় ৭টি রাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও বাণিজ্য বৃদ্ধি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং নৌ, রেলওয়ে ও সড়ক পরিবহনের উন্নয়নের লক্ষ্যে এ সামিটের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান আব্দুল মাতলুব।আব্দুল মাতলুব বলেন, ভারত এখন বুঝতে পেরেছে বাংলাদেশের সাহায্য ছাড়া তাদের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় ৭টি রাজ্যের উন্নয়ন করতে পারবে না। তাই তারা আঞ্চলিক সংযোগ স্থাপনে উদ্যোগী হয়েছে। এই সামিটে সিলেটের সীমান্ত দিয়ে ভারতের ৭টি রাজ্যে পণ্য রফতানির পথ সুগম করার ব্যাপারে আলোচনা হবে বলে জানান তিনি। এছাড়া সিলেটে ভারতীয় হাই কমিশনের শাখা স্থাপনের বিষয়টিও আলোচিত হবে।এফবিসিসিআই সভাপতি জানান, গৌহাটিতে খুব শিগগিরই বাংলাদেশ দূতাবাসের একটি শাখা চালু হবে। এতে এই অঞ্চলের সঙ্গে আরো সংযোগ স্থাপন হবে। এছাড়া বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় মেঘালয়ের পাহাড়গুলোর ঝর্ণা ব্যবহার করে হাইড্রো পাওয়ার প্রজেক্ট স্থাপনের চিন্তা করছে সরকার।বাংলাদেশে দুই বিদেশি হত্যা ও সর্বশেষ প্যারিসে হামলাসহ বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসবাদ বিস্তারের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে কোনো প্রভাব পড়বে কী না, এমন প্রশ্নের জবাবে ব্যবসায়ীদের এই নেতা বলেন, যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশের বাংলাদেশে রেড এলার্ট জারি করাটা অন্যায়। তিনি বলেন, এর আগে যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত আনোয়ার চৌধুরী সিলেটে বোমা হামলার শিকার হয়েছেন। তখনও তারা রেড এলার্ট জারি করেনি। আর এখন জাপানি নাগরিকের মৃত্যুতেই রেড এলার্ট জারি করে দিয়েছে। এটা ঠিক হয়নি।মাতলুব বলেন, এগুলো বাংলাদেশের ব্যবসা বাণিজ্যে তেমন প্রভাব ফেলবে না। আমরা যথেষ্ট নিরাপদ আছি। আমাদের চিন্তার কিছু নেই।সংবাদ সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, সিলেট চেম্বারের সভাপতি সালাউদ্দিন আলী আহমদ। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ভারত থেকে কয়লা ও পাথর আমদানি বন্ধ রয়েছে। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। এছাড়া কয়লা ও পাথর নির্ভর শিল্পগুলোতেও অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। শিলংয়ের কানেকটিভি সামিটে এই দুটি পণ্য আমদানি শুরুর ব্যাপারেও আলোচনা করবো।সিলেট চেম্বারের সভাপতি বলেন, ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি দ্বিতীয় নর্থ ইস্ট কানেকটিভিটি সামিট-২০১৫ এর আয়োজন করেছে। আগামী ১৬ ও ১৭ নভেম্বর এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সংবাদ সম্মেলনে সিলেট চেম্বারের পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনের পর প্রতিনিধি দল শিলংয়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন।ছামির মাহমুদ/এমএএস/আরআইপি

Advertisement