আবহমান কাল থেকে কৃষকের হালচাষের অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো গরু। তবে দেখলে বোঝার উপায় নেই এই প্রাণীটিও হতে পারে মানুষের বিনোদনের একটি অংশ।
Advertisement
দৌড়ের প্রতিযোগিতা শুরুর আগেও দেখা যায় তার শান্ত স্বভাব। কিন্তু জোয়াল কাঁধে দেয়ার পর মুহূর্তে পাল্টে যায় তার চরিত্র। একে অপরকে পেছনে ফেলতে ছুটতে থাকে বিদ্যুৎ গতিতে।
গরুর গাড়ির রোমাঞ্চকর এ প্রতিযোগিতা দেখতে রোববার (১০ জানুয়ারি) ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বেতাই গ্রামের মাঠে জড়ো হয়েছিল বিভিন্ন উপজেলা ও আশপাশের জেলার কয়েক হাজার মানুষ।
গান্না ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল ওহাবের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় এ প্রতিযোগিতা।
Advertisement
অনুষ্ঠানের আয়োজক আব্দুল ওহাব বলেন, ৯ বছর যাবৎ গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে ও এলাকার মানুষকে আনন্দ দেয়ার জন্য এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। সরকারি পৃষ্টপোষকতা পেলে আগামীতে আরও বড় পরিসরে আয়োজন করা সম্ভব হবে।
সাতক্ষীরা শ্যামনগর থানা থেকে গরুর দৌড় প্রতিযোগিতা দেখতে আসা রুস্তম আলী বলেন, এখানে প্রত্যেক বছর গরুর দৌড় খেলা হয় এটা জানতে পেরে খেলা দেখতে এসেছি। খেলা আমাদের সাতক্ষীরাতেও হয় কিন্তু এখানকার খেলা অনেক ভালো হয়।
ঝিনাইদহ শহর থেকে আসা রুবেল হোসেন বলেন, মানব জীবনে গরুর উপকারিতার কথা বলে শেষ করা যাবে না। কিন্তু গরু যে মানুষকে আনন্দও দিতে পারে তা এখানে না এলে বোঝা যাবে না।
শাহেদ নামের আরও একজন বলেন, আধুনিক যুগে এসে গরুর গাড়ির এমন দৌড় প্রতিযোগিতা দেখে খুব ভালো লেগেছে। এরকম প্রতিযোগিতা প্রায়ই আয়োজন করা প্রয়োজন।
Advertisement
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু বলেন, হারিয়ে যেতে বসা গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ খেলাটি ধারাবাহিকভাবে আয়োজন করতে স্থানীয়ভাবে যেমন সহযোগিতা করা হচ্ছে তেমনি সরকারিভাবেও আগামীতে সহযোগিতা করা হবে।
তিনি আরো বলেন, এই গান্না একসময় সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য ছিল। সে পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। এখন মানুষ গান্নায় বিনোদনের জন্য আসে।
অনুষ্ঠানের আয়োজক সহযোগী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আতিকুল হাসান মাসুম জানান, দিনভর এ খেলায় যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা ও চুয়াডাঙ্গা থেকে বাছাই করা মোট ৩৮টি গরুর গাড়ি অংশ নেয়।
খেলায় প্রথম স্থান অধিকার করেন ঝিনাইদহের মহেশপুরের খালিশপুরের আবু সাঈদ। পুরস্কার হিসেবে তার হাতে তুলে দেয়া হয় একটি গরু। দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন যশোর বাঘারপাড়ার খালিদুর রহমান। তাকে দেওয়া হয়েছে একটি বাইসাইকেল ও তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন বেতাই গ্রামের আমিরুল খাঁ। তাকে একটি ছাগল উপহার দেওয়া হয়।
খেলায় প্রথম স্থান অধিকার করা আবু সাঈদ বলেন, প্রথম স্থান অধিকার করে আমি খুবই খুশি। পুরস্কার বড় কথা নয়, খেলায় অংশগ্রহণ করে মানুষকে যে আনন্দ দিতে পারছি এটাই বড় পাওয়া।
আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/এসএমএম/জিকেএস